সিবিএন ডেস্ক:
করোনায় বন্ধ ক্যাম্পাস। তাছাড়া গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে কলেজের ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করে চট্টগ্রাম কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কলেজ ছাত্রাবাস কাদের দখলে তার উপর নির্ভর করছে কলেজের নিয়ন্ত্রণ। তার জন্য বন্ধ ছাত্রাবাসে নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া ছিল চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রলীগের বিবাদমান দু’পক্ষই। এ নিয়েই গত বুধবার দুপুর ১২টার দিকে শেরে বাংলা হোস্টেলে কথা কাটাকাটি হয় বিবাদমান দুটো গ্রুপের মধ্যে। পরে দুপুর ১টার দিকে চকবাজারের প্যারেড কর্ণার এলাকায় শুরু হয় সংঘর্ষ। এতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে— এমনটাই ভাষ্য সেদিন ক্যাম্পাসে উপস্থিত কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর।

বুধবার সংঘর্ষে জড়ানো দুটি গ্রুপের মধ্যে এক গ্রুপ চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমের সমর্থক। আরঅন্য গ্রুপ সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিকের সমর্থক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বুধবার (১৭ জুন) দুপুর ১২ টার দিকে চট্টগ্রাম কলেজের শেরে বাংলা হোস্টেলে বাহিরাগতদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল সভাপতি মাহমুদুল গ্রুপের মোস্তাফা, সায়মন ওরফে ভাগিনা সায়মনসহ বেশ কয়েকজন। সেখানে আড্ডা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সেক্রেটারি সুভাষ গ্রুপের কয়েকজনের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়।

কথা কাটাকাটির জেরে সৌরভ শাহ নামে এক বাহিরাগত সেখানে কিরিচ নিয়ে ‘বাহাদুরি’ দেখাতে শুরু করে। কিন্তু শোরগোল শুনে তাৎক্ষণিক কলেজ ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তখন কিরিচসহ সৌরভকে আটক করে পুলিশ।

সৌরভকে আটকের খবরে কাম্প্যাসে জড়ো হতে শুরু করে সভাপতি মাহমুদুলের অনুসারিরা। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে একে একে জড়ো হয় সুভাষ অনুসারীরাও। একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষ।

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময় কলেজ সংগঠিত হওয়া সংঘর্ষে রাম দা, কিরিচের পাশাপাশি অস্ত্র-গুলির মহড়া দিত মাহমুদুল ও তার অনুসারীরা। যার কয়েকটি ছবি সিভয়েসের হাতে এসেছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—চট্টগ্রাম কলেজ, প্যারেড কর্ণার, চকবাজার ও তার আশপাশের এলাকায় নিজেদের প্রভাব টিকিয়ে রাখতে দেশি অস্ত্র ও গুলি নিয়ে মহড়া দিতো মাহমুদুল গ্রুপের ভাগিনা রাজু ওরফে কালা রাজু, মোস্তাফা, সায়মন ওরফে ভাগিনা সায়মনসহ বহিরাগত বেশ কয়েকজন। করোনাকালে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার পরও ক্যাম্পাসের হোস্টেল ও ভবনগুলোতে রমরমা মাদকের আড্ডা বসাতো তারা।

সিভয়েসের হাতে আসা বেশ কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে অস্ত্র (ওয়ান শুটার গান) হাতে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে মহড়া দিচ্ছে সায়মন। সায়মন চট্টগ্রাম কলেজে অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বলে জানা গেছে। কলেজ রাজনীতিতে সায়মন মাহমুদুলের অনুসারি হিসেবে পরিচিত। মাহমুদুল নিজেই সায়মনের হাতে থাকা অস্ত্রের যোগানদাতা বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে মাহমুদুল বলেন, ‘আপনাদের কাছে কি ছবি আছে তা আমাকে দেখালে ভালো হতো। কিন্তু যাই হোক সেগুলো বানোয়াট। এখন ছবি এডিট করা যায়।’

সেদিনের বুধবারের সংঘর্ষের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার এক ছোটভাই হাফ প্যান্ট করে প্যারেড মাঠে ফুটবল খেলতে এসেছিল। কিন্তু কয়েকজন ধরে তাকে জিজ্ঞাসা করে কেন হাফ প্যান্ট ক্যাম্পাসে এসেছে। পরে তাকে মারতে থাকে। …’
তাছাড়া বুধবার কিরিচিসহ পুলিশের হাতে আটক হওয়া সৌরভ শাহ টিনুর অনুসারি বলে দাবি করে মাহমুদুল বলেন, ‘আপনাকে আামি ওর (সৌরভের) আইডিসহ দিতে পারবো। সে টিনুর অনুসারি। আমার কাছে প্রমাণ আছে।’

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক সুভাষ বলেন, ‘এখানে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে। শুনেছি টিনু ভাইয়ের বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে অস্ত্রের মহড়া কারা দেয় তা আপনারা (সাংবাদিক) কখনও বলেন নি। আমি অস্ত্রবাজদের বিরুদ্ধে বারবার কথা বলেছি। আপনারা উল্টো আমার বিরুদ্ধে লিখেছেন। জানি আজকেও লিখবেন। তা-ও বলবো, ক্যাম্পাসে অস্ত্রের উৎস কি? তদন্ত হোক।’

এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে চকবাজার থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘এ ঘটনায় তারা পাল্টাপাল্টি দু’টি মামলা দায়ের করেছে। আমরা দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।’ ঘটনার দিন কিরিচ নিয়ে আটক হওয়া সৌরভের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে জেনেছি সৌরভ সভাপতি মাহমুদুলের অনুসারি। কিন্তু পরে মাহমুদুল তা অস্বীকার করেছে।’ বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে অস্ত্রের মহড়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার ব্যাপারটি আমি শুনিনি।’ – সিভয়েস