মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে জাতি সংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশন (UNHCR) এর সহায়তায় গড়ে উঠছে ১০ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বহুমুখী অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত বর্হিবিভাগ ভবন। প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০তলা ফাউন্ডেশনের প্রথম পর্যায়ে ৩ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করে দিচ্ছে UNHCR। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের উত্তর পার্শ্বে, মেইন গেটের পশ্চিম পার্শ্বে খালি ভূমিতে নতুন বর্হিবিভাগ ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

নির্মাণাধীন ভবনটির আপতত তিনতলা মিলে মোট ২৬ হাজার ৯ শত বর্গফুট স্পেস থাকবে। তারমধ্যে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৮ হাজার ৬৮৪ বর্গফুট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ৯ হাজার ১০৩ বর্গফুট করে মোট ১৮ হাজার ২০৬ বর্গফুট স্পেস থাকবে। তিনতলা মিলে ওয়াশজোন এবং ওয়াইটিং এরিয়া সহ মোট ৭৮ টি কক্ষ থাকবে। একটি প্রধান সিঁড়ি ও অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য সহ জরুরী কাজে ব্যবহারযোগ্য সিঁড়ি থাকবে আরো অতিরিক্ত ২ টি। ৪ টি লিফট ও প্রতিবন্ধী রোগীদের ব্যবহারযোগ্য ১ টি ন্যাচারাল লিফট (র‍্যাম) থাকবে। ওয়াটার রিজার্ভার ও আগুন নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ সুপরিসর আলাদা কক্ষ রয়েছে এই ভবনে। নির্মাণাধীন বহুমুখী সুবিধা সম্বলিত এই ভবনে প্যাথলজি ইউনিট, মেডিসিন ডিসপেনসারি, পেইন ক্লিনিক ইউনিট, শিশু ইউনিট, অর্থোপেডিক ইউনিট, সার্জারী ইউনিট, গাইনী এন্ড অবস ইউনিট, মেডিসিন ইউনিট, কার্ডিওলজি ইউনিট, চক্ষু ইউনিট, নাক, কান, গলা ইউনিট, ডেন্টাল ইউনিট, সার্জারী ইউনিট, নিউরো ইউনিট, গেস্ট্রো এন্ট্রালজি ইউনিট, হেপাটোমা ইউনিট, মানসিক রোগ ইউনিট, কিডনি ইউনিট, অর্থেপেডিক এন্ড গাইনোকোলজি প্রক্রিয়াকরণ কক্ষ সহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রায় সব ইউনিট থাকবে।

এছাড়া, ওভারহেড ১০ হাজার লিটার পানির ট্যান্ক, ওয়াটার রিজার্ভার সহ সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ব্যবস্থা থাকবে। টেলিফোন প্যানেল, সপ্তাহের প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, ২৫৫ টি মাইক্রোপসেসর বেইজ ফায়ার এলার্ম কন্ট্রোল ডিভাইস প্যানেল থাকবে এই অত্যাধুনিক ভবনে। নির্মাণাধীন এই বর্হিবিভাগ ভবনটি’তে জাতীয়মানের সকল চিকিৎসা সুবিধাদির অপশন রাখা হয়েছে। এনেক্স ভবনটি নির্মাণের পর UNHCR তাদের নিজস্ব অর্থায়নে সেখানে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম সহ সবকিছু সরবরাহ দেবে বলে সুত্র গুলো নিশ্চিত করেছেন।

২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাইমুম সরওয়ার কমল এবং জাতি সংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশন (UNHCR) কক্সবাজার অফিসের হেড অব অপারেশন মি. মারিন দিন কাজদোমেকজ (Marin Din Kajdomcaj) উপস্থিত থেকে যৌথভাবে এই বর্হিবিভাগ ভবনের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। মেসার্স হায়দার কনস্ট্রাকশন নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন করছে। করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে কাজটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। নির্মাণকাজ তত্বাবধানকারী একজন কর্মকর্তা জানান, কোভিড-১৯ এর মধ্যেও কাজটি চলমান রাখা হয়েছে এবং প্রথম পর্যায়ের প্রায় ৩০% ভাগ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে রোগির ক্রমবর্ধ্বমান আধিক্য এবং কক্সবাজারের চিকিৎসা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে প্রায় তিন বছর আগে থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগ, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল ও কক্সবাজার আরআরআরসি অফিস কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে একটি নতুন বর্হিভবন নির্মাণের চিন্তাভাবনা করে। এ উদ্যোগের অংশ হিসাবে কক্সবাজারের সরকারি সংস্থা গুলোর অনুরোধে কক্সবাজার UNHCR কর্তৃপক্ষ নতুন বর্হিবিভাগ ভবনটি নির্মাণ করছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা যায়, হাসপাতালে রোগী সংকুলান হচ্ছেনা, ডাক্তার বসার জায়গা নেই। হাসপাতালে ৬১ জন চিকিৎসকের পোস্টের মধ্যে এখন মাত্র ৩৬ জন চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের সকলকেও হাসপাতালে বসার ঠিকমতো জায়গা করে দেওয়া যাচ্ছেনা। রোহিঙ্গা শরনার্থী সহ স্থানীয় রোগীর আধিক্যের কারণে হাসপাতালটির এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে এখন সবসময় ৪ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। এ অবস্থায় বর্হিবিভাগ ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে পুরো কক্সবাজার জেলা সদরের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আসবে বলে জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

প্রসঙ্গত, প্রায় ৩৩ কোটি টাকা ব্যয় করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে UNHCR কর্তৃপক্ষ এক বছর আগে ১০বেডের ICU এবং ৮বেডের HDU নির্মাণ করে দিয়েছে। যেখানে এগুলোর চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী, ওয়ার্ডবয় সহ প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা জনবল ও ব্যবস্থাপনার ব্যয় প্রতিমাসে UNHCR নিয়মিত বহন করছে। কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসায় এই মেডিকেল স্থাপনা ব্যাপকভাবে কাজে আসছে।