নাছির উদ্দিন আল নোমানঃ
কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে জীবিত ৪ ভাই বোনকে মৃত দেখিয়ে ভূঁয়া খতিয়ান সৃজন করেছে সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র। ঈদগাঁও মৌজার আওতাধীন ফরিদ আহমদ কলেজ গেইটের পশ্চিমে বড় কবরস্থান সংলগ্ন মূল্যবান জমি দখল করতে এ জালিয়াতি করেছে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি।
অনুসন্ধানে প্রকাশ, ঈদগাঁও মৌজার ১৩০৭ নং খতিয়ানের বিএস দাগ নং ১৮৫৮৬ এর ওয়ারিশানের মধ্য থেকে জীবিত ৪ ওয়ারিশ ভাই বোনকে মৃত দেখিয়ে তাদের অংশসহ এক বোনের নামে প্রতারণামূলক এ খতিয়ান সৃজন করা হয়, যার নং ১০৭৪৩।
অতঃপর উক্ত জায়গা পুনরায় ভাই-বোনদের মৃত বানিয়ে সম্প্রতি বিক্রির চেষ্টা করলে বেরিয়ে আসতে শুরু করে থলের বিড়াল।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ঈদগাঁও ইউনিয়নের মেহেরঘোনার বাসিন্দা মরহুম ঈমান শরীফের চার ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। তার মৃত্যু পরবর্তী তার জায়গা জমির ওয়ারিশ সুত্রে মালিক হয় সন্তানরা।ইত্যবসরে তিন ছেলে যথাক্রমে আমানুল হক, সিরাজুল হক,হামিদুল হক ও দুই কন্যা জানু ও অপর এক মেয়ে স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান চলে যায়।
তারা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বসবাস করে আসছে। জায়গা জমির মূল্য বৃদ্ধি পেলে এ সুযোগে
দেশে থাকা একমাত্র মেয়ে খানু বেগম, তার স্বামী কালা বদা ও সন্তানরা ৪/৫ বছর পূর্বে লোভের বশবর্তী হয়ে পাকিস্তানে বসবাসরত পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে একমাত্র হামিদুল হককে জীবিত এবং অপর তিন ভাই দুই বোনকে পিতার পূর্বে অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে মর্মে মিথ্যা তথ্য দিয়ে স্হানীয় ইউ পি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ওয়ারিশ সনদ গ্রহণ করে। এরপর ঐ ওয়ারিশ সনদ অনুবলে তাদের অংশের জায়গাসহ খানু বেগমের নামে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে খতিয়ান সৃজন করে ফেলে।

অতি সম্প্রতি ঐ জায়গা স্থানীয় কতিপয় দালালের যোগসাজশে বিক্রির চেষ্টা করলে বেরিয়ে আসতে শুরু করে দুনিয়াতে জীবিত থাকা পাঁচ ভাই বোনকে মৃত দেখিয়ে তাদের অংশসহ জায়গা খতিয়ান করার গুরুতর প্রতারণার ঘটনা।

উক্ত দালালচক্র খানু বেগমকে বশে এনে মোটা অংকের দালালির টাকা হাতিয়ে নিতে দৌড়ঝাপ শুরু করে। যেনতেন ভাবে ক্রেতাদের কাছ থেকে জালিয়াতি করে সৃজন করা ঐ জায়গা বিক্রি বাবদ টাকা হাতিয়ে নিতে গেলে ক্রেতাদের সন্দেহ জাগে। তখন ক্রেতারা আদৌ এতগুলো ওয়ারিশ পিতার মৃত্যুর পূর্বে অবিবাহিত অবস্থায় মারা গেছে কিনা তার সত্যতা জানতে চেষ্টা শুরু করে। একই খতিয়ান ও দাগভুক্ত তাদের বাবার পক্ষের অপরাপর ওয়ারিশদের নিকট প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করে। এতেই বেরিয়ে আসতে শুরু করে একই মা-বাবার ঔরসে জন্ম নেয়া বোন খানুম বেগমের পাহাড়সম জালিয়াতির ঘটনা।

অতি সম্প্রতি ঐ জায়গা বিক্রি করতে স্থানীয় এক দালাল আবারো চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পিতার মৃত্যু সনদ এবং ওয়ারিশ সনদ নিয়ে এক ব্যাবসায়ীকে আরেক প্রতারণার জালে ফেলে তার কাছ থেকে ঐ জায়গা বিক্রি বাবদ বায়না নামা হিসাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। পিতার পক্ষের অপরাপর ওয়ারিশান এবং অন্য ক্রেতারা উক্ত প্রতারণা যে সত্য, এবং তাদের অংশের জায়গাও এ প্রতারকচক্র চিহ্নিত এক দালালের মাধ্যমে দিবালোকে জবর দখল চেষ্টা প্রমাণ করতে কাগজে জীবিত দেখানো একমাত্র ভাই হামিদুল হকের সাথে ইমু ও হোয়াটসঅ্যাপ যোগাযোগ করে অপরভাই বোনেরা জীবিত থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে।

পরে কথিত মৃত ভাই সিরাজুল হকের সাথে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কলে কথা হলে বেরিয়ে আসে আরো পুর্নাঙ্গ তথ্য। পাকিস্তানে অবস্থানরত পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে একমাত্র ভাই আমানুর মৃত্যু হয়েছে এবং অপর দুই ভাই চার বোন জীবিত আছে এবং মৃত আমানুর ওয়ারিশরাও রয়েছে।

এ জালিয়াতির ঘটনা ঈদগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলমকে জানানো হলে বলেন, খানু বেগমের সন্তান ও চিহ্নিত এক দালাল মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ ওয়ারিশ সনদ ও পিতার মৃত্যু সনদ নিয়েছে। তিনি ততক্ষণাৎ এ জালিয়াতিতে জড়িতদের মুল সনদ গুলো হাজির করতে নির্দেশ দেন। নয়ত আইনের আশ্রয় নেবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।

এদিকে লোভী বোন খানু বেগম ও তার সন্তানদের সাথে যোগাযোগ করলে, তারা সাংবাদিকদের উপরোক্ত চারজন ওয়ারিশ মারা গেছে মর্মে মিথ্যা তথ্য দেয়। পরে প্রকৃত ঘটনা জানাজানি হলে প্রতারক বোন, তার সন্তানও দালালদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়। এদিকে দালাল ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া বোন হানু বেগম ও তার সন্তানদের প্রতারণার শিকার ঐ জায়গার সম্ভাব্য ক্রেতার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি স্বীকার করেন, এ প্রতারকচক্র তার কাছ থেকে বায়না বাবদ মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এদিকে গোপন এ জালিয়াতির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর পিতার পক্ষের অপরাপর ওয়ারিশ গংয়ের পক্ষে আজিজুল হক জানান,তারাও একই খতিয়ান এবং দাগের ওয়ারিশ। এক দালাল স্থানীয় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ও প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে এখনো অংশ নামা ভাগ না করা তাদের জায়গা রাতারাতি জবর দখলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করছে। তিনি ইতিমধ্যে এসব জালিয়াতি ও দখলের বিষয়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করছেন বলে জানান। এদিকে এসব ওয়ারিশরা সৃজিত প্রতারণা মুলক খতিয়ানের জায়গা বিক্রিতে বাঁধা দিবে আশংকায় উক্ত দালাল মোটা অংকের চুক্তিতে শনিবার(১২ জুন) দিনদুপুরে জায়গা জবর দখল করে বাউন্ডারি দেয়াল তৈরীর জন্য স্থানীয় কতিপয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে ভাড়াটিয়া হিসেবে ব্যাবহার করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করে। এতে ওয়ারিশ গংয়ের পক্ষে আজিজুল হক বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাকে ঐ দালাল ও ভাড়াটিয়ারা মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এতে নিরুপায় আজিজ ঈদগাঁও থানা পুলিশের শরনাপন্ন হলে এসআই রেজাউল ঘটনাস্থলে পৌছে কাজ বন্ধ করে দেয়। এদিকে যে কোন মুহুর্তে ঐ জায়গা দখল-বেদখল নিয়ে ওয়ারিশদের মাঝে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে স্থানীয়রা। এদিকে পাকিস্তানে অবস্থানরত ভাই হামিদুল হকের সাথে এ জালিয়াতির বিষয়ে যোগাযোগ করলে, তাদের বোন কতৃক অপর সকল ভাই বোনদের মৃত্যু হয়েছে মর্মে তাদের জায়গা সম্পত্তি দখল ও তা বিক্রি করতে খতিয়ান সৃজনের ঘটনা জেনে হতভম্ব হয়ে যান। তার সাথে প্রতারণাকারী বোনের যোগাযোগ থাকলেও কোন সময় এসব বলেননি বলে প্রতিবেদককে জানান।