মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ ও কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমের মধ্যে চলমান বিরোধের সমঝোতা হয়েছে। রোববার ১৩ জুন সাড়ে ৩ টায় শুরু হওয়া দলীয় সভানেত্রীর ঢাকার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দীর্ঘ ৩ ঘন্টার সভায় এ সমঝোতা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় সভা শেষ হয়।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

সভায় সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম তাঁর ব্যবহারের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের প্রতি তিনি অনুরোধ জানান।

অপরদিকে, চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম এবং চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য জাহেদুল ইসলাম লিটুকে স্বপদে বহাল করার সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১৭ জুন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ একটি সভা আহ্বান করবেন। সেখানে সভাপতিত্ব করবেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম এমপি। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। বিশেষ অতিথি থাকবেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন সিআইপি।

রোববার অনুষ্ঠিত এই সভায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মৃনাল কান্তি দাস এমপি, কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কেন্দ্রীয় কার্যনিবাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, সৈয়দ আবদুল আওয়াল এমপি, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ সিআইপি, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সকল ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত, ঐকবদ্ধ ও শক্তিশালী সাংগঠনিক শাখায় পরিনত করা জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। একই সাথে চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচন ও সকল পর্যায়ের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

সভায় দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন বক্তব্য ও আচরণ পরিহার সহ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখিত ৪ দফা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

উল্লেখ্য, গত ১০ জুন দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরী সভায় এমপি জাফর আলমকে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি এবং তার কয়েকদিন আগে চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটুকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের পর পর একইদিন রাতেই প্রায় ৩ ঘন্টা চকরিয়ার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। গত ৮ জুন চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী ও চকরিয়া পৌরসভার নৌকার মনোনীত মেয়র প্রার্থী, বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী উপর হামলা ও দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গের অভিযোগ এনে জেলা আওয়ামী লীগ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

এনিয়ে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ ও কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমের মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা দেয়। চরম উত্তপ্ত হয় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। রোববার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মধ্যস্থততায় প্রকাশ্যে চলে আসা এ বিরোধের সমোঝাতা হয়।