সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
উপকূলীয় সুরক্ষার জন্য রাজস্ব থেকে জলবায়ু পরিববর্তন মোকাবেলায় সক্ষম বাঁধ নির্মাণের জন্য ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে ১২-১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ, জনপ্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজ।
শনিবার (১২ জুন) আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তাবৃন্দ বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ত্বরান্বিত করতে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করেন।
‘বাজেট ২০২১-২২: উপকূলীয় সুরক্ষা’ শীর্ষক এই সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড (সিএসআরএল), সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং কোস্টাল লাইভলিহুড এন্ড এনভায়রনমেন্ট একশান নেটওয়ার্ক (ক্লিন)।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের রেজাউল করিম চৌধুরী এবং সিএসআরএলের জিয়াউল হক মুক্তার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জনাব সাবের হোসেন চৌধুরী।
সেমিনারে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করেন, তাঁরা হলেন নারায়ণ চন্দ্র এমপি (খুলনা-৫), মীর মোশতাক আহমেদ রবি এমপি, (সাতক্ষীরা-২), নুরুন্নবী চৌধুরী এমপি (ভোলা-৩), নাহিম রাজ্জাক এমপি (শরীয়তপুর -৩), আশেক উল্লাহ রফিক এমপি (কক্সবাজার -২), শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি (গাইবান্ধা -২), জাফর আলম এমপি (কক্সবাজার -১)।
সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন- পানি বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. আইনুন নিশাত, সিপিআরডির মোঃ শামসুদ্দোহা এবং ক্লিন-খুলনার হাসান মেহেদী। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের সৈয়দ আমিনুল হক।
সৈয়দ আমিনুল হক উল্লেখ করেন, প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য দুর্যোগ উপকূলীয় এলাকার জীবিকার কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং দরিদ্র লোকেরা সবচেয়ে ঝুঁকির থাকা উপকূলবর্তী অঞ্চলে বসবাস করায় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এরপরেও বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার বাজেট বরাদ্দ গতানুতিক এবং সংকট মোকাবেলায় অপর্যাপ্ত।
তিনি তিনটি সুনির্দিষ্ট দাবি উত্থাপন করেন: (১) বাঁধ নির্মাণের ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা হিসেবে সরকারকে প্রতি বছর কমপক্ষে ১২-১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে, (২) তাৎক্ষণিক বাঁধ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় সরকারকে বাজেটসহ দায়িত্ব দিতে হবে এবং (৩) উপকূলীয় সুরক্ষা, বিশেষত প্রাকৃতিক সুরক্ষা, উপকূলীয় মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কারিগরি শিক্ষাকে একটি কার্যকরী বিকল্প হিসেবে গড়ে তুলতে এবং শহরের পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা আধুনীকায়নের কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন, যে একটি জাতীয় ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রয়োজন, যা সরকারকে উপযুক্ত বাজেট বরাদ্দের দিক-নির্দেশনা দিতে পারে। বেড়িবাঁধ উন্নয়ন নীতিমালা তৈরির পাশাপাশি আমরা এই বিষয়ে একটি রোডম্যাপের জন্য কাজ করছি। এটি সত্য ডে, উপকূলীয় সুরক্ষা ব্যতীত উন্নত বাংলাদেশের কল্পনা করা অসম্ভব, তাই উপকূলের সমস্যাকে কোনও অঞ্চলের আলাদা কোনও সমস্যা হিসেবে বিবেচনা না করে এটিকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
ডাঃ আইনুন নিশাত বলেন, বাজেট বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে, বাঁধ বিষয়ক পরিকল্পনায় এই পরিস্থিতি অনুপস্থিত। ‘ডেল্টা প্ল্যান’ এর আওতাধীন প্রকল্পগুলি পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের দুর্যোগ পূর্বাভাসকে বিবেচনা না করেই গ্রহণ করেছে।
মীর মোশতাক আহমেদ রবি এমপি বলেন, উপকূলীয় সুরক্ষায় বিনিয়োগ করলে সেটা জাতীয় অর্থনীতিতে দ্বিগুণ ফেরত দিতে পারে। আমরা স্থায়ী সমাধানের দাবি জানাচ্ছি। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বদলে বাঁধের তাৎক্ষণিক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের স্থানীয় সরকারকে বেড়িবাঁধ বাজেট প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করারও সুপারিশ করেন। আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেন, প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে আমরা জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দিতে পারছি না। এ কারণেই কক্সবাজার জেলার কিছু অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রকল্পের নকশা প্রণয়নে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষতি বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সময়োপযোগী এবং বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা নিতে হবে।
সাংসদ নাহিম রাজ্জাক বলেন, উপকূলীয় বিপর্যয়ের প্রভাব হ্রাস করতে পানি ব্যবস্থাপনার ও পরিকল্পনার জন্য ব্যাপক আয়োজন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটিই সম্ভব আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে। আমরা এই বিষয়ে নীতি প্রণয়ন জোরদার করতে উপকূলীয় সাংসদদের নিয়ে একটি ‘ককাস’ গঠন করতে পারি। সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন যে, বেড়িবাঁধ নির্মাণ কৌশল এবং পদ্ধতিকেসরকারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। এটা করা সম্ভভ হলে এটি অগ্রাধিকার পাবে। এর জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় প্রয়োজন।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, উপকূলীয় সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত এবং দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য পরিবেশ বান্ধব নীতিমালা তৈরি করতে হবে। এই নীতিমালায় উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প আয় তৈরিতে সক্ষম শিক্ষা বিস্তারকেও অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে।
জিয়াউল হক মুক্তা বলেন, দুর্যোগের প্রভাবের উপর ভিত্তি করে বাঁধগুলোর একটি মূল্যায়ন হতে হবে, এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রতিবেশগত বিষয়গুলো বিবেচনা করেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এনজিও, জনপ্রতিনিধি এবং সরকার- সকালের অংশ্রগহণের ভিত্তিতে একটি সুসংহত পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োজন।