সিবিএন ডেস্কঃ
বাজারে নতুন ধানের চাল উঠেছে। প্রতিবছর এই সময়ে চালের দাম কমতির দিকে থাকে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। নতুন ও পুরনো দুই ধরনের চালের দামই বাড়তি। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের দাম বেশি থাকার কারণে সব ধরণের চালের দাম বাড়ছে। এ ছাড়া লকডাউনের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার চাল আসতে পারছে না। যে কারণে চালের দাম বাড়ছে।
খুচরা বাজারে দেখা যায়, শুক্রবার (১১ জুন) প্রতি কেজি চিকন চাল নাজির শাইল ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি। চার দিন আগে এই চালের দাম ছিল ৬৩ টাকা কেজি। অর্থাৎ চার দিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে দুই টাকা। শুধু চিকন চালই নয়, মোটা ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা করে। রাজধানীর বাজারগুলোতে ২৮ ও ২৯ ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা কেজিতে। এই চাল ৫০-৫২ টাকা কেজি বিক্রি হতো। এ ছাড়াও ৪৬-৪৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া মোটা পাইজম চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজিতে।

রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় গত ৭ জুন যে চালের দাম ছিল ৪৮ টাকা কেজি, এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। আর গরিবের মোটা চাল দাম বেড়ে হয়েছে ৪৮ টাকা কেজি। চার দিন আগে এই চালের দাম ছিল ৪৬ টাকা।
এদিকে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, সব ধরনের চালের দাম ২ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট উত্থাপন করেন। বাজেটে চাল, ডাল, তেলের ওপর নতুন করে কর আরোপ করেননি। বরং কৃষিপণ্য এবং খাদ্যপণ্যের বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাজারে চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঠিকই বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুদিন আগে যে মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি। এখন সেই মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। আর দুইদিন আগে যে মসুর ডাল ৯০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত, এখন সেই মসুর ডাল কিনতে ১০০ টাকা লাগছে।
দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ভোজ্যতেলও। চার দিন আগে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৬৬০ টাকা, এখন সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকা। অর্থাৎ দুই দিনের ব্যবধানে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দু’দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি আলুর দাম বেড়েছে তিন টাকা করে। ২২ টাকা কেজি আলু তারা এখন ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন।
দাম বেড়েছে দেশি ও আমদানি করা আদার। প্রতি কেজি আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা। দুইদিন আগে যে আদা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত এখন সেই আদা কিনতে ১২০ টাকা লাগছে। দু’দিন আগে যে আদার দাম ছিল ১২০ টাকা এখন সে আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি। দাম বেড়েছে ডিমের। গত সপ্তাহে যে ডিম বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা হালি এখন সেই ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা হালি। অবশ্য গত ৩ জুন বাজেট উপস্থাপনের পর আরও দুই দফায় বেড়েছে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম।
ক্রেতারা বলছেন, করোনার কারণে আয় কমেছে সাধারণ মানুষের। রাজধানীর মানিক নগর এলাকার বাসিন্দা তানিয়া সুলতানা বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও বেতন বাড়ে না, ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার ফলে মধ্যবিত্তদের যে কষ্টও হয় তা কেউ বোঝে না বলেও জানান তিনি।
তবে গতকাল থেকে দাম কমেছে পেঁয়াজের। আর সবজি দাম আগের মতোই। সেই সঙ্গে অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করেই বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গিয়েছিল, যে কারণে দাম বেড়ে যায়। ৪০ টাকা থেকে লাফিয়ে দাম বেড়ে কেজি ৬০ টাকা হয়ে যায়। তবে এখন সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে এখন খুচরায় ৪৮ টাকায় নেমে এসেছে।
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, এখন পেঁয়াজের সরবরাহ অনেকটাই ঠিক হয়ে গেছে। যে কারণে দাম কমেছে।
এদিকে ব্রয়লার, সোনালী ও লাল লেয়ার মুরগি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। আর সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ২১০ থেকে ২৩০ টাকা।
সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আগের মতো ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ঢেঁড়সের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গাঁজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পাকা টমেটো ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এক কেজি কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।