সুনীল বড়ুয়া, বাংলানিউজ, কক্সবাজার:
ড্রোন উড়িয়ে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীতে চলমান ড্রেজিং প্রকল্পের নানা অনিয়ম স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করলেন রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা।

এ সময় নদীর বুকে মজুদ করা ড্রেজিং এর বালু দ্রুত সরিয়ে নিতে এবং নদীতে তলিয়ে যাওয়া বালু উত্তোলন করে ওইস্থানটি পুনরায় ড্রেজিং করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়ের্স্টান ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন তিনি।

সোমবার (৭ জুন) বেলা দুইটার দিকে রামুর হাইটুপী ভুতপাড়া অংশে কাজ পরিদর্শনে গিয়ে ইউএনও প্রণয় চাকমা বিপুল পরিমান বালু পানিতে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সরাসরি অবলোকন করেন।

উল্লেখ্য এর আগে সর্বশেষ গত রোববার ( ৬ জুন) “বাকঁখালীতে ড্রেজিংঃ শেষ পর্যন্ত নদীর বালু নদীতেই গেল” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর ওই প্রকল্পের কাজ দেখতে যান ইউএনও। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল এ “নদীর বালু নদীতে রেখেই চলছে ড্রেজিং” এবং ২৭ এপ্রিল “বাঁকখালী ড্রেজিং- কার্যাদেশের আগেই ৬ কোটি টাকার বালু বিক্রি” শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ২৫ এপ্রিল প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশের পর ওইদিনই কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এবং নদীর বুকে মজুদ করা বালু পরবর্তী একসপ্তাহের মধ্যে তুলে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রায় দেড়মাস হলেও সেই নির্দেশনা মানা হয়নি । আজ সোমবার আবারও একইভাবে সরেজমিন গিয়ে বাকি বালু সরিয়ে
উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা বলেন, বাঁকখালী ড্রেজিং খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। কিন্তু নদীর দুইপাড়ে বালু রাখার জায়গা না পেয়ে বালুগুলো নদীর বুকে একপাশে মজুদ করেছিল। হঠাৎ করে পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেক বালু পানিতে তলিয়ে গেছে।

“এখন যা বালু আছে দ্রুত সরিয়ে ফেলার জন্য বলা হয়েছে। জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলে নদী তীরের উত্তর পাশে যে জমিগুলো আছে সেখানে রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” যোগ করেন ইউএনও।

তিনি আরও বলেন, ড্রেজিং এর বালু পুনরায় নদীতে চলে গিয়ে নদীর যে অংশটি ভরাট হয়ে গেছে সেটি পুনরায় ড্রেজিং করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন- এর উদ্বেগ-
এদিকে সোমবার (৭ জুন) সকালে আবারও বাঁকখালী নদীতে চলমান ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন- এর নেতৃবৃন্দ।

সুজন নেতৃবৃন্দ হাইটুপি ভুতপাড়া,রাজারকুল আতিক্কাবিবির ঘাটসহ কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করেন। এসময় সুজনের সহ সভাপতি মাস্টার কিশোর বড়ুয়া, অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাসেম, অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিন, চিত্রশিল্পীরেফায়তুল মান্নান,সাংবাদিক আল মাহমুদ ভুট্টোসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় সুজন নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, শুরু থেকেই নদীর বুকে বালু মজুদ করার দৃশ্য দেখে সুজন নেতৃবৃন্দ উদ্বিগ্ন ছিল, তারা আশংকা প্রকাশ করেছে ভারী বর্ষন শুরু হলেই এসব বালি পুনরায় নদীতে চলে যাবে। এবং শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে।

সুজন নেতৃবৃন্দের দাবি, শুরু থেকে এ বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি থাকলে এমন সমস্যা হতো না।

“ড্রেজিং এর বালু নিরাপদ দুরত্বে মজুদ না করে, কেন নদীর বুকে রাখা হল, সেই বালির বড় একটি অংশ নদীতে তলিয়ে গেল, আবার স্বয়ং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন নিজেরাই স্কেভেটর দিয়ে বালু পানিতে বিলিয়ে দিল,সব মিলিয়ে রামু কক্সবাজারের মানুষের বহুল আকাংখিত এ প্রকল্পের সুফল কতটুকু পাওয়া যাবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সুজন নেতৃবৃন্দ।

তবে এ প্রকল্পবাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মো.সরওয়ার বাংলানিউজকে বলেন, যতদ্রুত সম্ভব বালুগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে পাশাপাশি বালু চলে যাওয়ার কারণে যে স্থানটি ভরাট হয়ে গেছে সেগুলো পুনরায় ড্রেজিং করে দেওয়া হবে।

প্রকল্পে যা আছে-
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানাগেছে, বাঁকখালী নদী ড্রেজিং ও খনন করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নৌ-চলাচলের পথ সুগম করা, দুর্য্যেগপূর্ণ মুহুর্তে সাগরের নৌকা/ট্রলার এর নিরাপদ অবস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পোতাশ্রয় হিসাবে বাঁকখালী নদী ব্যবহার করা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ,পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে ঘরবাড়ি,সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য ২০১৬ সালে প্রায় ১৯৫ কোটি ৫৪৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প গ্রহন করে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ওয়েষ্টান ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পে নদী ২৮ কিলো মিটার ড্রেজিং ড্রেজিং ছাড়াও রয়েছে, ৪.৬৫০ কিলোমিটারনদীর তীর সংরক্ষণ, তিন কিলোমিটার বাঁধ নির্মান/পুনরাকৃতিকরণ, ২টি রেগুলেটর নির্মাণ ও ১২ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের কাজ। ২০১৬ সালের জুনে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি মাস জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প এটি। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দুই উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের ১৯ হাজার ৪’শ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। বন্যা থেকে রক্ষা পাবে রামু সদরের ৩ লাখ মানুষ। পাশাপাশি নদী ভাঙনের হাত থেকে রেহাই পাবে অন্তত ২ হাজার পরিবার।