মোহাম্মদ ইলিয়াছ, লামা (বান্দরবান)
দীর্ঘ এক বছর ধরে ভূমি রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বান্দরবানের লামা উপজেলাবাসী। ভূমি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকায় বিভিন্নভাবে সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে অত উপজেলার ৭ ইউনিয়নের জনগণ। না পারছে জমি বিক্রি করতে না পারছে কিনতে। হুট করে রেজিস্ট্রি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে যারা জমি কিনেছে তারা পড়েছে মহাবিপাকে।

ফাইতং ইউনিয়নের এক দোকানদার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দোকানটি চালিয়ে কোন মতে জায়গাটা কিনেছি ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধের কাছ থেকে। কিন্তু রেজিস্ট্রি করা নিয়ে পড়েছি বিপদে। আল্লাহ না করুক, বৃদ্ধটি যদি মারা যায় তার ওয়ারিশ থেকে রেজিস্ট্রি নিতে হয়তো অনেক সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে।
লামা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, লামায় দীর্ঘ দিন ভূমি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকায় অনেক মামলা জটিলতায় পড়ে আছে।
সূত্রে জানা যায়, ভূমি রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে মূলতঃ বর্তমান ইউএনও মোঃ রেজা রশিদ যোগদান করার পর থেকে।
পার্বত্য এলাকার ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইন সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায় যোগদানের পর থেকে ভূমি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কোন কাজই তিনি হাত দেন নি। তবে বান্দরবান জেলা ভূমি অফিস থেকে কর্মকর্তারা লামায় এসে ভূমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম কিছুদিন চালিয়েছিলো। কিন্তু তাতেও বেশিদূর এগুতে পারেনি এই কার্যক্রম। কি এক অজানা কারণে ভূমি রেজিস্ট্রেশ কার্যক্রম লামায় বন্ধ করে দিয়ে বান্দরবান জেলা ভূমি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। লামা উপজেলা সদর থেকে বান্দরবানের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার হওয়ায় তাতে মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়ে গেলো। ফলে শুরু হলো লামাবাসীর পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদ করাই কাল হয়ে দাঁড়ালো লামাবাসীর। গত বছরের ১৬ নভেম্বর ভূমি রেজিস্ট্রেশন পুরোদমে বন্ধ করে দিয়েছিলেন তৎকালিন বান্দরবানের ডিসি দাউদুল ইসলাম।

লামার রাইটার মিরন কান্তি চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এই বিষয়টা নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারকে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছি এবং আমাদের পক্ষে রায়ও পেয়েছি। তারপরও লামায় ভূমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু হয়নি।’

পরে লামা উপজেলা চেয়ারম্যনের আবেদনের প্রেক্ষিতে লামায় ভূমি রেজিস্ট্রেশন অব্যাহত রাখার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সামছুল হকের স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি হয়।

দুঃখের বিষয় তবুও লামায় ভূমি রেজিস্ট্রেশন চালু হয়নি এখনো বা কখন হবে তাও সবার অজানা।

ডিসি অফিস সূত্রে জানা যায়, ৩ মে থেকে লামা ভূমি অফিসের কার্যক্রম বান্দরবান জেলা ভূমি অফিসে চলমান রয়েছে। তাতে কী দুঃখ বাড়লো নাকি কমলো? প্রশ্ন লামাবাসীর। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন বান্দরবান জেলার সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, ‘জনবহুল লামা উপজেলায় ভূমি রেজিস্ট্রেশন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় জনগণ বিভিন্ন ধরণর হয়রানি শিকার হচ্ছে। সরকারের এধরণের সিদ্ধান্ত জনস্বার্থবিরোধী। ফলে জনমনে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। অবিলম্বে ভূমি রেজিষ্ট্রেশন চালুর দাবী জানাচ্ছি।’

লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বলেন, ‘লামা ভূমি রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম চালু হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে। কিন্তু এখনো কী কারনে চালু হলো না তা আমারও অজানা অথচ আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে চালু করার জন্য প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছে।’

বান্দরবান জেলার ডিসি ইয়াছমিন পারভীন তাবরীজির বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। কেনো লামা উপজেলা ভূমি অফিস থেকে জেলা ভূমি অফিসে এই কার্যক্রম নিয়ে আসা হলো সে বিষয়ে আমার জানা নাই। তবে আমি যোগদানের পর থেকে দেখছি লামার ভূমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বান্দরবানেই চলছে। বিষয়টি আমি দেখছি কী করা যায়।’