আবদুর রহমান খান

ভারতে করোনায় মৃত বেওয়ারিশ লাশ পুড়িয়ে ফেলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। তাদের ছাই-ভষ্ম জলে বিসর্জন করতে মিলছেনা কোনো স্বজন। কারো বা স্বজনের সন্ধান মিললেও মৃতদেহ সৎকারের মত আর্থিক সামর্থ তাদের নেই । কেউবা এরকম মৃতদের ছাই-ভষ্ম গ্রহন করতে চাচ্ছে না ভয় বা কুসংস্কারের কারণে।

হিন্দু ধর্মের সংস্কার অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির আত্মার সদ্গতির জন্য দেহ পোড়ানোর পর ছাইভষ্ম একটি মা্টির পাত্রে করে জলের স্রোতে ভাসিয়ে দিতে হয়। এবং এটা করার দায়িত্ব মৃত ব্যাক্তির পুত্র বা নিকটতম স্বজনদের।

কিন্তু পরস্থিতি এমন দাড়িয়েছে, অজ্ঞাত পরিচয় বা স্বজনের অভাবে বিপুল সংখ্যক লাশের সৎকারের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষকে । মাটির ঘটে কেবল একটা সংখা লিখে তাতে মৃত ব্যক্তির ছাই-ভষ্ম রেখে জলে বিসর্জন দিচ্ছে পৌর কর্মচারিরা।

ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমনের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত আট সপ্তাহে অন্তত ১৬০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক রয়েছেন যাদের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বা স্বজনদের খোঁজ মেলেনি।

ভারতের দক্ষিনের রাজ্য কর্নাটকে কাভেরী নদীর তীরে এবং বাঙ্গালোরের সুমনাহল্লির শ্মশাণ ঘাটে এরকম ১২ শ’ বেওয়ারিশ লাশ পুড়িয়ে ফেলা এবং তাদের ছাই-ভষ্ম জলে ভাসানোর খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এ এফ পি ।

গত ২ জুন এসব বেওয়ারিশ লাশের ছাই-ভষ্ম ভর্তি মাটির ঘটি সারি সারি সাজিয়ে পুরোহিত ডেকে মন্ত্র পাঠ করে জলে ভাসানোর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ব্যাংগালোরে। রাজ্যের রাজস্ব মন্ত্রী অশোকা উপস্থিত হয়ে আনুষ্টানিকভাবে একটি পাত্র জলে ভাসিয়ে কর্মসুচী উদবোধন করেন । তার আগে এসব পাত্রগুলিতে সাদা কাপড় জড়িয়ে হলুদ গাঁদা ফুল দিয়ে মালা পরিয়ে মঞ্চের উপর সাজিয়ে রাখা হয় নদীতীরে। সেখানে ছিটানো হয় রক্ত জবার জল।

এরপর একটি হাল্কা নৌকায় পাত্রগুলি সাজিয়ে হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ি ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীর স্রোতে।

ব্যাঙ্গালোরের টি আর মিল্স শ্মশাণ ঘাটের ঠিকাদার কিরন কুমার এএফপি-কে বলেছেন, অনেক পরিবারে তিন-চারজন সদস্য কোভিডে মারা গেছে। সে সব পরিবারের বাকি সদস্যরা সংক্রমনের ভয়ে মৃতদেহের কাছে ঘেঁষছে না। এমনকি ছাই-ভষ্ম বিসর্জন দিতেও নদীর ঘাটে আসছে না ।

মহামারি করোনায় হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা , অক্সিজেন এবং অষুধ সরবরাহ করা , সবাইকে টিকাপ্রদান করা এমকী মৃতদেহ সৎকারে বিজেপি সরকারের চরম ব্যর্থতার মাঝেও সেখানকার হিন্দুরা অন্তত এটা ভেবে শান্তি পেতে পারেন যে করোনায় মৃত বেওয়ারিশ লাশের আত্মার সদ্গতির জন্য কোনো কোনো রাজ্য সরকার অন্তত ছাই-ভষ্ম জলে বিসর্জনের দায়িত্বটা পালন করেছে।