মোহাম্মদ ইরফান উদ্দিন

“ফ্রি ফায়ার” পাবজি”র মতো কিছু অনলাইন গেম দেশের বর্তমান বেশিরভাগ শিশু-কিশোর ও যুব সমাজের ভিন্ন একটি মারাত্মক নেশার নাম। এই নেশা তাদের এন্ড্রয়েড ডিভাইস (মোবাইল) বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকতে বাধ্য করে। এক পর্যায়ে তারা ভুলে যায় নিজের সুন্দর ভবিষ্যৎ ও পরিবারের কথা। এগুলো খুবই যুদ্ধ-সংঘাত ও মানসিক পরিশ্রমের গেম হওয়ায় তারা ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে উগ্রমেজাজি বা বদমেজাজি স্বভাবের মানুষ।

চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল ৩১-শে ডিসেম্বর ২০১৯ ইং সালে। চীন থেকে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে করোনার হিংস্র থাবায় অন্ধকার নেমে আসে সারাবিশ্বে। অদৃশ্য করোনা নিরবে কেড়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ।

এই ভাইরাস খুবই সংক্রামী রোগ হওয়ায় জনসমাগম ঠেকাতে বন্ধ করা হয় সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্টানসহ সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান।

গত বছর ০৮ই মার্চ ২০২০ ইং তারিখে এদেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শণাক্ত হওয়ার পর ১৭ই মার্চ ২০২০ ইং তারিখ থেকে সরকারি ভাবে স্কুল-কলেজ সহ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ থাকাকালীন পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার ক্ষতি কিছুটা হ্রাস করতে বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্টান তাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুরু করে অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম।

অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হওয়ার জন্য অভিভাবকগণ তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন ইন্টারনেট সংযোগ হওয়ার বিভিন্ন এন্ড্রয়েড ডিভাইস (মোবাইল) বা কম্পিউটার।

শিক্ষার্থীরা এই সব ডিভাইস,কিছু সময়ের জন্য ভাল কাজে বা অনলাইন ক্লাস করার জন্য ব্যবহার করলেও- বেশি ব্যবহার করে থাকে ফ্রি ফায়ার,পাবজি,টিকটক,লাইকি’র মত বিভিন্ন সময় নষ্ট করার এপ্স ও গেইম সমূহে। টিকটক,লাইকি নামের এই এপ্স নিয়েও দেশের বিশাল একটা শিশু,কিশোর ও যুবদের সংখ্যা আছে যারা ইউনিক ভিডিও বানিয়ে বড় টিকটক স্টার এবং লাইকি সেলিব্রেটি হওয়ার নেশায় নেশাগ্রস্থ। রাতদিন এটাই হয়ে ওঠে তাদের কাজ এবং তাদের স্বপ্ন। তখন পড়ালেখায় মন দেওয়ার মত সময় ও ইচ্ছা কোনটাই থাকেনা।

পাবজি,ফ্রি ফায়ারের মতো কিছু অনলাইন গেম খেলোয়াড় গাণিতীক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এদেশে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই হল শিশু-কিশোর বা স্কুল শিক্ষার্থী।

আর্থিক সংকটের কারণে কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্টানে ভর্তি হতে না পারা কিশোরটিও তার সবটুকু পুঁজি দিয়ে এড্রয়েড ডিভাইস(মোবাইল) ক্রয় করে এসব গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে।
অনেক অভিভাবকগণও প্রতিনিয়ত সন্তানদের কড়াভাবে নিষেধ করলেও তারা মানেনা। কারণ তখন তাদের চিন্তা-ভাবনা সবকিছুর উর্ধেব থাকে গেম ফ্রি ফায়ার,পাবজির মতো নানান আসক্তির বিষয় গুলো।

অভিভাবকের বকুনি থেকে বাঁচতে ঘরের কোনো এক কোনায় অথবা রাস্তার অলিতেগলিতেও মোবাইল নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাদের। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া গুরুজনদের দিকেও বিন্দুপরিমাণ নজর নেই তাদের।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সানজানা জামান যমুনা টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে জানান:
এসব অনলাইন গেম আসক্ত শিশু-কিশোরদের ঘুম নষ্ট করে,তাদের আচরণে খারাপ প্রভাব পড়ে,তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য স্বাভাবিক সুস্থ থাকতে দেয়না।
ফলে তাদের অনেক ক্ষতি হয়।

গত ২১ মে ২০২১ ইং (শুক্রবার) চাঁদপুরের মামুন(১৪) নামে এক কিশোর মোবাইলে “ফ্রি ফায়ার”গেইম খেলার জন্য এমবি কেনার টাকা না পেয়ে মায়ের সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে।

ইদানিং সর্ব মহলের অভিভাবকবৃন্দ এইসব গেম বন্ধের দাবী জানাচ্ছেন বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতেও।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী “মোস্তাফা জব্বার”এই বিষয়ে জাতীয় এক টেলিভিশন প্রতিবেদনে জানান’
“গেম বন্ধ করা সমাধান না, সন্তানকে বুঝিয়ে সঠিক পথে আনতে হবে। গেমগুলো এদেশে বন্ধ করা হলেও, তারা “ভিপিএন”এর মতো মাধ্যম দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ঠিকই চালাবে। আমরা গেম ও সেই সব মাধ্যম বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব”।

এদেশের প্রযুক্তিবিদরাও এই ব্যাপারে বিকল্প উপায়ে ভাবার পরামর্শ দিচ্ছেন। যেন কৌশলি কোনো উপায় অবলম্বন করে তাদের এসব আসক্তি থেকে নিরাপদ রাখা যায়।

এছাড়াও “বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন” পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেইমগুলোর ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে জানিয়েছেন।

আজকের শিশুরাই আগামীদিনের কর্ণধার।
তাদের সঠিক পথে,সঠিক পরিবেশে রাখাটা বর্তমান অভিভাবক মহলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সন্তানদের একটি উন্নয়নমূলক সেবা দিতে গিয়ে সেই উন্নয়নে যেন অবনতির পরিমানটা বেশি না থাকে,তা নজর রাখা জরুরি।

প্রতিটা মূহুর্তে জানা-অজানা যেকোনো নতুন পরিস্থিতি ভাল-খারাপ কর্মকান্ড ঘটতে পারে। সব প্রকার পরিস্থিতির সাথে তালমিলিয়ে যতটা সম্ভব সঠিক,সুন্দর উপায়ে বেচেঁ থাকা ও বাচিঁয়ে রাখার চেষ্টা করা প্রয়োজন আমাদের সবার। সারা বিশ্বের বর্তমান ভয়াবহ আতংকের নাম করোনা ভাইরাস। এই মহামারি করোনা ভাইরাসের সাথে তাল মিলিয়ে সন্তানদের যথাযথ নিরাপদ পরিবেশে রাখার সঠিক চেষ্টা অব্যাহত রাখা দরকার।

লেখক:
শিক্ষার্থী, বি.এস.এস (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)
কক্সবাজার সিটি কলেজ,কক্সবাজার।