সিবিএন ডেস্ক:

সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি করোনা। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় Govt. to person (G2P) পদ্ধতিতে ভাতা বিতরণ করার সময়োপযোগী ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ৬৪ জেলার ৫৭৩টি উপজেলা বা শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে জিটুপি পদ্ধতিতে এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৯০ লাখ ২৯ হাজার ৩০১ জন বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, চা–শ্রমিক, ক্যানসার রোগী ও ভিক্ষুকদের মধ্যে ৬ হাজার ১৩৬ কোটি ৮৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮০ টাকা পৌঁছে দিতে ১৯৮৪ সালের বিদ্যমান জনবল কাঠামো নিয়েই কোনো ধরনের প্রণোদনা, সরকারঘোষিত সীমিত ভ্রমণভাতা ছাড়া এবং কোনো সরকারি ছুটি ভোগ না করে বিরতিহীনভাবে কাজ করছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সামজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে সরাসরি ভাতাভোগীর কাছে প্রেরণ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

এত দিন সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচির আওতায় ভাতার টাকা প্রচলিত ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করা হতো। ফলে ভাতাগ্রহীতাদের ব্যাংকে নিজ খরচে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ভাতার টাকা গ্রহণ করতে হতো। এতে ভাতাভোগীরা চরম ভোগান্তি পোহাতেন এবং আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। সরকারঘোষিত লকডাউন ও চলাচলে বিধিনিষেধের ফলে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতার টাকা প্রদান কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়ে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। এ অবস্থায় গত ২৭ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেবা ও ভাতা বিতরণ কার্যক্রমকে জরুরি সেবার আওতাভুক্ত ঘোষণা করে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রধান কার্যালয়সহ মাঠপর্যায়ের কার্যালয় প্রতি শুক্র ও শনিবার খোলা রাখার আদেশ জারি করে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাতাভোগীর হাতে ভাতার অর্থ পৌঁছে দিতে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা বিতরণ কার্যক্রমের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর এত দিন প্রচলিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ভাতার টাকা দিয়ে আসছিল। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও লকডাউনের মধ্যেও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সদর কার্যালয়সহ মাঠপর্যায়ে ৫৭৩টি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুধু ঈদুল ফিতরের দিন ছাড়া সব ছুটির দিনেও নিরলস পরিশ্রম করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নির্দেশনায় বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতার অর্থ দেওয়া হচ্ছে। আজ সোমবার পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১২ লাখ এবং এমএফএস ৭০ লাখসহ মোট ৮২ লাখ ভাতাভোগীর অর্থ ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। ৩০ জুনের মধ্যেই সব ভাতাভোগীর টাকা হাতের মুঠোয় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কোনো প্রকার প্রণোদনা ছাড়াই সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা দুর্যোগের মধ্যেও নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা অধিশাখার সহকারী পরিচালক এস এম খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের নির্দেশনায় এবং মহাপরিচালকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিশ্রমের ফলে লকডাউন ও করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের বরাদ্দ ৯০ লাখ মানুষের হাতে ভাতার অর্থ জুনের মধ্যে পৌঁছে যাবে।
-বিজ্ঞপ্তি