অনলাইন ডেস্ক: বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী আজ। ১৯৮১ সালের এইদিনে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে শাহাদতবরণ করেন তিনি। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভাসহ ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিএনপি’র নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা করেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
তিনি বলেন, ৩০শে মে ভোর ৬টায় দলের নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতাকর্মীরা কালোব্যাজ ধারণ করবে। ওইদিন বেলা ১১টায় দলের মহাসচিবসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও জিয়ারত করবেন। দুপুর ১২টার পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পর্যায়ক্রমে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও জিয়ারত করবে।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ৩১শে মে ঢাকা মহানগরীর ৪০টি স্থানে দুস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্যদ্রব্য/বস্ত্র বিতরণ করা হবে। বিএনপি’র মহাসচিব, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ সহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।
জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক দল (জাসাস)-এর উদ্যোগে শহীদ জিয়ার জীবনভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনও থাকছে।
১লা জুন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে জিয়ার কর্মময় জীবনের উপর আলোচনা সভা হবে বেলা ১১টায়। ২রা জুন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে বেলা আড়াইটায়। ৩রা জুন জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভা হবে বেলা ১১টায়। ৪ঠা জুন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল হবে আসর নামাজের পর গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে। ৫ই জুন জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ৬ই জুন সকাল ১০টায় জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভা। ৭ই জুন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)-এর উদ্যোগে সকাল ১০টায় আলোচনা সভা এবং ৮ই জুন জাতীয়তাবাদী তাঁতীদল ও ৯ই জুন জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে শহীদ জিয়ার উপর প্রকাশিত বই প্রদর্শনী।
এমরান সালেহ প্রিন্স আরো বলেন, আগামী ১লা জুন থেকে ১২ই জুন পর্যন্ত দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরীতে সংশ্লিষ্ট ইউনিট বিএনপি’র উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের উপর আলোচনা সভা হবে। বিএনপি’র সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সরাসরি অথবা ভার্চ্যুয়ালী জেলা ও মহানগরের এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর কিছু বিপদগামী সদস্যের হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন। জিয়াউর রহমানের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯শে জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামে। তার শৈশবের কিছুদিন কাটে বগুড়া ও কলকাতায়। ভারত বিভাগের পর রসায়নবিদ পিতার বদলির সুবাদে তিনি করাচি যান। করাচির একাডেমি স্কুল থেকে ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৫৩ সালে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে। ১৯৫৫ সালে তিনি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদ লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে লাহোর সীমান্তের খেমকারান সেক্টরে ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ভারতের আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে দেয়া হয় পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক উপাধি। বিএনপি’র দাবি ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর তার নেতৃত্বে অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। যুদ্ধকালে প্রথমে তিনি সেক্টর কমান্ডার ও পরে তার নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে গঠিত জেড ফোর্সের নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বীরউত্তম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২৫শে আগস্ট নিযুক্ত হন চিফ অব আর্মি স্টাফ পদে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সায়েম পদত্যাগ করলে ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল তিনি প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি-বিএনপি।