দৃশ্যপট: ফাঁসিয়াখালীতে অস্ত্রের মহড়ায় জমি দখল, জনমনে আতংক 

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালীতে অস্ত্রের মহড়ায় জমি দখল, জনমনে আতঙ্ক শীর্ষক সংবাদের প্রতিবাদখানা আমাদের কাছে দৃষ্টিগোছর হয়েছে। গেল ৩০ মে দৈনিক ইনানী, কক্সবাজার নিউজ ও কক্সবাজার কন্ঠ মিডিয়াতে প্রকাশিত প্রতিবাদের প্রতিবাদে কিছু তথ্য অসম্পূর্ণ ছিলো। আজকে (৩১ মে) ফাঁসিয়াখালী আদর্শ মৎস্য চাষ উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষ থেকে সংশোধিত প্রতিবাদখানা প্রকাশ করা হয়েছে।

মূলত; ফাঁসিয়াখালীতে অস্ত্রের মহড়ায় জমি দখল, জনমনে আতঙ্ক শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদটি তথ্য নির্ভর একটি সংবাদ ছিলো। প্রতারক, দখলবাজ ও সন্ত্রাসীরা বাতিলকৃত সমিতির দোহায় দিয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ দিয়ে আসল ঘটনা আড়াল করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রশসান ও পাঠকদের সুবিধার্থে মূল ঘটনা তুলে ধরা হলো : চকরিয়া উপজেলার ১নং খতিয়ানের আওতাভূক্ত ৭৩ একর জমি লীজ নেয় ফাঁসিয়াখালী আদর্শ মৎস্য চাষ উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড। আরও উল্লেখ থাকে যে, ৪ নং বি.এস খতিয়ান থেকে দুই দাপে ১০০ একর জমি রেজিষ্ট্রি নেয়া হয়। সমিতির অন্যান্য সদস্যও এই ৪ নং বি.এস খতিয়ান থেকে জায়গা ক্রয় করে ঐ দলিলও রয়েছে। ১নং খতিয়ান যা ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্বারক নং ৮৩৯/৮৬/৮৯০ তারিখ : ১০/০৮/১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ মূলে ফাঁসিয়াখালী আদর্শ মৎস্য চাষ উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডকে এ ইজারার অনুমোদন দেন। পরে ধারাবাহিকভাবে পূণরায় নবায়ন করে ওই লীজ এখনও বলবৎ রয়েছে। ওই সমিতির কর্মচারী পাওয়ার টিলার চালক আনোয়ারুল ইসলামকে অস্থায়ীভাবে বসত ঘর থাকার জন্য অস্থায়ী বসত ঘর সমিতির থেকে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য যে, আনোয়ারুল নিজ বাড়ি ইলিশিয়া চকরিয়া উপজেলা কক্সবাজার। আনোয়ারুল ইসলাম পাওয়ার টিলার চালক তার ছোট ভাই প্রকাশ জামাল ডাকাত সমিতির অস্থায়ী বসত ঘরে এসে ডাকাতি শুরু করে। পরে সমিতির সাথে প্রতারণার করে সংঘবদ্ধভাবে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে আইনশৃঙ্খলা অবনতি করে ডাকাতি শুরু করে। ঐ সময় থেকে জামাল ডাকাত বাহিনী নামে আত্মাপ্রকাশ পায়। ছাইরাখালী ধন্যারচর, ভরার চর, সমিতির কিছু জায়গায় ডাকাত বাহিনীর আস্তানা করার জন্য জোর পূর্বক পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। ডাকাত বাহিনী থাকার জন্য ঘর নির্মানের প্রস্তুতি নিয়েছে। যে কোন সময় সমিতির জায়গা দখল করে জোর পূর্বক আস্তানা তৈরি করতে পারে।

সেখান থেকে রাতের অন্ধকারে সমিতির সদস্যদের মৎস্য চাষের ঘেরায় গুলিবর্ষণ করছে। যার কারনে জনমনে আতংক সৃষ্টি হয়েছে এবং জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। ওই সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের হানায় প্রতিনিয়িত লুটপাট হচ্ছে মাছসহ অন্য মালামাল। এব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আইন আদালতে মামলাও রয়েছে। জামাল ডাকাত বাহিনীর অন্যতম সদস্য চকরিয়া আইনজীবি সহকারী বহিস্কৃত হেলাল মুন্সির জোগসাযোগে জামাল ডাকাতকে মিথ্যা জালিয়াত করে জামিন নামা দিয়েছিলো।

প্রতিবাদকারীরা মহামান্য কোর্ট থেকে চিহ্নিত প্রতারক হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। তাদের প্রতিবাদে উল্লেখ করেছে ছাইরাখালী ভরাচর (ধন্যাচর) মৎস্য চাষ সমবায় সমিতি লিমিটেড (যার রেজি-৯২৮)। সরকারি কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই নামের কোনো সমিতি নেই। তবে ছাইরাখালী ভরাচর ও ধন্যারচর ভূমিহীন সমবায় সমিতি নামে একটি সমিতি ছিলো। ওই সমিতির প্রতিষ্ঠিত সম্পাদক ছিলো ফিরোজ আহমদ তিনি জানান, অকার্যকর ও অকেজো হওয়ার কারনে ছাইরাখালী ভরাচর ও ধন্যারচর ভূমিহীন সমবায় সমিতি (যার রেজি: নম্বর ১৯২৮, তারিখ : ০৫/০৩/২০১৩) ২০১৬ সালে বাতিল করেছে কক্সবাজার সমবায় কার্যালয়। তাহলে প্রতিবাদে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তা কি মিথ্যা নয়? এটা কি ডিজিটাল প্রতারণা?

সরকারি কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আরও জানাযায়, বাতিলকৃত সমিতির জায়গা ছিলো ২নং খতিয়ান। উক্ত জায়গার প্রকৃত মালিক বনবিভাগ এবং খতিয়ানে সেগুন বাগান হিসেবে উল্লেখ আছে। এতো বিভ্রান্তমূলক তথ্য দিয়ে প্রশাসন ও পাঠক সমাজকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা নয় কি?

প্রতিবাদে প্রতারক চক্র আরও উল্লেখ করেছে দুর্যোগসহ নানা প্রতিকুলতা অতিক্রম করে তারা ১৯৮৫ সাল থেকে বিগত ৩৫ বছর যাবত বনবিভাগের পরিত্যক্ত রিংভং মৌজার (খতিয়ান-২, বনবিভাগ) উল্লেখিত খাসজমিতে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বৈধভাবে বসবাস করে আসছে! এটা কি বৈধ বসবাস বলে? তারা আরও উল্লেখ করেছে তারা নাকি কোনদিন অবৈধ অস্ত্রের মহড়া দেয় নি।

তাহলে বৈধ অস্ত্রগুলো কার ? এমনকি মহড়া দেয়ার মতো সামর্থ্যও নাকি তাদের নেই। তাহলে প্রতিরাতে গুলিবাজি কারা করে? আসলে প্রতিবাদকারী চক্র ফাঁসিয়াখালীর চিহ্নিত ডাকাত বাহিনী, অস্ত্রবাজ, দখলবাজ। তাদের বিরুদ্ধে ওই এলাকায় অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। যা তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। ইতোপূর্বে একাধিক তদন্ত সংস্থা ঘটনাগুলো তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনও দাখিল করেছে যার স্মারক নং ২২৪৯/সার্কেল। কিন্তু রহস্যজনক কারনে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে মজার বিষয় হলো, প্রকাশিত সংবাদে প্রতিবাদকারী হাবিব উল্লাহ লেদু ও তার ছেলে আশেক উল্লাহ’র নাম ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ তারা এ বিষয়ে অবগত নয়। তারা বাপ-ছেলেও দখলবাজদের নির্যাতনের শিকার। প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে লেদুর পরিবার। তার দৃষ্টি শক্তিও কেড়ে নেয়া হয়েছে। সেখানেও প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। হাবিব উল্লাহ লেদু (৫০) একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি লোক। ছোটবেলায় রাতের অন্ধকারে মাছের প্রজেক্টে ঘুমান্ত অবস্থায় সন্ত্রাসীরা তার চোখ কেড়ে নেয়। বর্তমানে ওই সন্ত্রাসী দখলবাজদের চোখের কাটা হয়ে পড়েছে এই দৃষ্টি প্রতিবন্ধি লেদু। প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে লেদু। তার ছেলে সন্তানদের ধরে বাস্তা-ঘাটে মারধর করছে সন্ত্রাসীরা। এ নিয়ে তিনি চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেছে, যার নম্বার ১২৫, তারিখ ২৪/০৪/২০২১।

এদিকে পত্রিকায় প্রতিবাদ দেয়ার অপরাধে ৩০ মে রাতে ১৫/২০ জনের অস্ত্রধারি একটি সন্ত্রাসী দল দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হাবিব উল্লাহ লেদুকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। আমরা মনে করছি দখলবাজদের সাথে একটি অঘটন ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে তার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই প্রয়োজন। এতে আমরা প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

প্রতিবাদকারীর মধ্যে আরেকজন দেখা গেছে, তিনি হলো বখতিয়ার মো. হেলাল উদ্দিন। পেশায় একজন আইনজীবী সহকারি ছিলো। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ভয়ংকর প্রতারণাসহ নানান অভিযোগ। তাই কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ১৭/০১/২০২১ ইংরেজী তারিখ তার আইনজীবী সহকারি ৬১০ নম্বর কার্ডটি বাতিল করে। ওই সময় হেলাল কক্সবাজার বা চকরিয়া আদালতে যে কোনো কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট থাকবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পায়। শুধু তাই নয় দখলবাজ চক্রের সদস্য জামাল ও কামাল মহামান্য হাইকোর্টে তথ্য গোপন করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জামিনের চেষ্টা করেছিলো। পরে বিষয়টি বিজ্ঞ আদালতের নজরে আসলে তাদেরকে হাইকোর্ট থেকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় এসআই তমেজ উদ্দিন বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং ১২২/২০২০।

ঘটনাটি ১২ মার্চ ২০২০ ইংরেজী তারিখের দেশের শীর্ষ পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন, আমাদের সময়, সমকাল ও যুগান্তরসহ আরও একাধিক পত্রিকায় গুরুত্বসহকারে প্রকাশ পায়। এ ধরণের জালিয়াতি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আর কেউ করেনি বলে আমরা মনে করি।

ভিত্তিহীন এই প্রতিবাদে জামাল ও হেলাল একজন সাদা মনের মানুষ হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করতে চেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে অগণিত মামলা ও অভিযোগ। জামালের বিরুদ্ধে বসতবাড়ী ভাংচুরের অভিযোগে দায়ের হয় মামলা। যার নং জিআর ৬৬/২১ ও জিআর ৫৬/২০২১, হত্যার অভিযোগে চকরিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়। যার নং ৩১২/২০০৪। চকরিয়া থানার মামলা নং ২২ তারিখ ১৮/০২/২০২০, চকরিয়া থানার মামলা নং ৪ তারিখ ০৪/০২/২০২০, চকরিয়া থানার মামলা নং ২৪ তারিখ ২১/০২/২০১৪, চকরিয়া থানার মামলা নং ২০ তারিখ ২৪/০২/২০০০, চকরিয়া থানার মামলা নং ৩২ তারিখ ২৫/০৯/২০০০।

আর হেলালের বিরুদ্ধেও রয়েছে অগণিত মামলা ও অভিযোগ। মামলার মধ্যে রয়েছে : ১. জি.আর ৫০৮/২০ চকরিয়া ২. সি.আর ৫৯৬/২০, ৩. বিবিধ ০১/১৭, ৪. জি.আর ২৮/০৭ লামা ৫.জি.আর ২২/০৭ লামা ৬. জি.আর ৩৩/০৭ লামা ৭. জি.আর ৫০/০৮ চকরিয়া ৮. জি.আর ৬৬/০৮ চকরিয়া, ৯. সি.আর ১০৩১/১১, ১০.সি আর ১৪৭৯/১৩, ১১. সি.আর ১০৫১/১৬ কক্সবাজার সদর।

পরিশেষে সবার অবগতির জন্য আমরা ফাঁসিয়াখালী আদর্শ মৎস্য চাষ উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের পুরো পরিবার প্রতিজ্ঞাবদ্ধভাবে জানাচ্ছি যে, চকরিয়া থেকে প্রকাশিত আমার কক্সবাজার নামে একটি সংবাদ পোর্টালে কথিত অস্ত্রবাজ ও দখলবাজ জামাল হেলাল গংয়ের পক্ষে একটি মনগড়া প্রতিবাদলিপি পোষ্ট করেছে। আমরা উক্ত মনগড়া প্রতিবাদের তীব্র নিন্দা ও জোরালো প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলকে আমরা আহবান জানাচ্ছি। এছাড়া আমরা সমিতির সদস্যরা পুলিশ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের প্রতি এই জামাল ডাকাত বাহিনীকে আইনের আওতায় এনে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধ্বার পূর্বক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

প্রতিবাদকারী :

ফাঁসিয়াখালী আদর্শ মৎস্য চাষ উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষে-

হাবিব উল্লাহ লেদু, বেলাল উদ্দিন, ছৈয়দুল ইসলাম, আবু কাউসার, আব্বাস আহমদ, ফিরোজ আহমদ, খালেদা বেগম পাখি, রোজিনা আক্তার ও আশেক উল্লাহ।