সিবিএন ডেস্ক:
করোনা মহামারির মধ্যেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাজেট নিয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। করোনার আঘাতে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে দেশ পরিচালনা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় করতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যে কারণে এনবিআরের ওপর চাপ কমিয়ে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত করের বাইরে আয় বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। এজন্য আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কর ব্যতীত রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা সাত হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার কোটি টাকা ধরা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা ছিল তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে তা বাড়িয়ে তিন লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ গতবারের চেয়ে লক্ষ্য বাড়ছে ১১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। তবে মোট আয়ের লক্ষ্য বাড়লেও আগামী বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে না। আগামী বাজেটে এনবিআরকে তিন লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকার লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে। চলতি বাজেটে এনবিআরকে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া আছে। এই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে মাত্র ৭৮ কোটি টাকা। কারণ, করোনা মহামারির কারণে রাজস্ব আয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব আদায় হয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও কম।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা সংকটে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির। যে কারণে এনবিআরের টার্গেট পূরণ হচ্ছে না। কিন্তু দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের আয় বাড়াতে হবে। এ কারণে শুধু এনবিআরের আয়ে ভরসা না রেখে আগামী বাজেটে কর ব্যতীত প্রাপ্তির দিকে নজর দিতে চাইছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত করের বাইরে যেমন বিভিন্ন ধরনের ফি, জরিমানা ও দণ্ড থেকে আয় বাড়ালে এনবিআরের ওপর চাপ কমবে।

জানা গেছে, কর ব্যতীত প্রাপ্তি খাতে লভ্যাংশ ও মুনাফা, সুদ প্রশাসনিক ফি, জরিমানা, দণ্ড ও বাজেয়াপ্তকরণ, সেবা বাবদ প্রাপ্তির মতো আয়ের খাতের পাশাপাশি ভাড়া ও ইজারা, টোল, অবাণিজ্যিক বিক্রয়, কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব ও প্রাপ্তি এবং মূলধন রাজস্ব রয়েছে।

মূলত আগামী অর্থবছরে কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব ও প্রাপ্তি খাতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া লাভের অংশ যোগ করা হবে।

এদিকে এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী বাজেটে কর ব্যতীত প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই খাতে ধরা রয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই খাত থেকে আয় ধরা হয়েছিল ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ধরা হয়েছিল ২৫ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।

এদিকে বাজেটে ঘাটতি মেটাতে সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশি তহবিল থেকে রেকর্ড পরিমাণ ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা (প্রায় ১৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার) ব্যবহার করার ব্যাপারে আশাবাদী। যা গত বছরের তুলনায় ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। যদিও এই মুহূর্তে প্রায় ৫০ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক অনুদান পাইপলাইনে রয়েছে। এছাড়াও বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদাররা মহামারির মধ্যে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

অবশ্য দেশের ব্যাংকগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত তারল্য নিয়ে অপেক্ষা করলেও মহামারিতে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ঋণ দেওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে না। তবে আসন্ন বাজেট অর্থায়নের জন্য ব্যাংকগুলো থেকে ৭৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা ধার নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার । যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কম। ব্যাংক ছাড়াও অন্যান্য উৎস থেকে ৩৭ হাজার কোটি টাকা আহরণ করবে সরকার। যা চলতি বাজেটের তুলনায় ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

প্রসঙ্গত, নতুন বাজেট ঘাটতির হার (সরকারের আয় ও ব্যয়ের ব্যবধান) হবে জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ, যা সম্প্রতি বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।