সিবিএন ডেস্ক:
বৈশ্বিক মহামারির এই সংকটকালে যেন মড়ার ওপর খাড়া ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ যার বৈজ্ঞানিক নাম মিউকোরমাইকোসিস। ভারতে তো হচ্ছেই দেশেও এর সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ নিয়ে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কিন্তু তাতেও সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং ভাইরোলজিস্টরা বলছেন – মাইক্রোস্কোপের স্লাইডে পরীক্ষা করে কিংবা কালচার করে এই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তাছাড়া প্রাথমিকভাবে সিটি স্ক্যান করেও নির্ণয় করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। মাইক্রোস্কোপে কিংবা সিটি স্ক্যানে সময় অল্প লাগলেও কালচার সময় সাপেক্ষ বলে মনে করেন তারা।

ভারতে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ ছড়িয়েছে ব্যাপকভাবে। সেখানে এখন পর্যন্ত আট হাজার ৮০০ জন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হয়েছেন। সংক্রমিত প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ মারা যাচ্ছে। আর যারা বেঁচে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে একটি অংশের চোখ অপসারণ করতে হচ্ছে। এসব ছত্রাক পরিবেশে বিশেষ করে মাটি, পচে যাওয়া জৈব পদার্থে (যেমন: পচা ফলমূল, পাতা বা পশুর বিষ্ঠা) ছড়িয়ে থাকে। এসব ছত্রাককে ল্যাবরেটরির কৃত্রিম মিডিয়াতে যখন বৃদ্ধি করা হয়, এদের রং হয় গাঢ় বাদামি বা কালো। তাই এদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক বলা হয়।

এই ছত্রাকের সংক্রমণ ছোঁয়াচে নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষ্মণ সম্পর্কে তারা জানান, নাক বন্ধ হয়ে যায়, নাকে ঘা হয়ে রক্তক্ষরণ, অস্পষ্টতা বা ঝাপসা দেখা। সেখান থেকে চোখের ভেতর থেকে রক্তক্ষরণ, ফুসফুসের সংক্রমণ ভালো হলেও অক্সিজেন ধরে রাখার সক্ষমতা কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, মুখের একদিকে ফুলে যাওয়া, নাক অথবা দাঁতের মাড়ি কালো হয়ে যাওয়া, কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, রক্ত বমি, নতুন করে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ, মাথা ব্যথা, দাঁতে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, স্কিনে কালো দাগ দেখা দেয়।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এটা দেখা যাচ্ছে নাকে হচ্ছে, চোখে হচ্ছে। এটা এমনকি পেটেও হতে পারে। এটি প্রবেশ করে নাক দিয়ে। এগুলো সাধারণত মানুষকে আক্রান্ত করে না। কিন্তু করোনা কিংবা অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তখন এটি শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। এটি শনাক্ত করতে হলে নাক কিংবা চোখে যেখানে উপসর্গ দেখা যায় সেখান থেকে নমুনা নিতে হয়। নমুনা নেওয়ার পর মাইক্রোস্কোপের নিচে স্লাইড বানিয়ে সেখানেই দেখা হয়। আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে কালচার করে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে কালচার মিডিয়া আছে।

তিনি আরও বলেন, কালচার করতে কিছুটা সময় বেশি লাগে। অন্তত ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। যখন উপসর্গ দেখা দেয় তখন সঙ্গে সঙ্গে নমুনা সংগ্রহ করে স্লাইডে বানিয়ে তাতে দেখতে বেশি সময় লাগে না। এক স্লাইডে না হলে আরেক স্লাইড বানাতে হয়। অনেক সময় বোঝাও যায় না , যারা অভিজ্ঞ তারা বুঝতে পারবেন। সিটি স্ক্যানে ভাইরাল নিউমোনিয়া নাকি করোনার কারণে নিউমোনিয়া হয়েছে সেটা বুঝার উপায় নেই। ইনফেকশন হলে ফাঙ্গাস সিটি স্ক্যানে বুঝা যাবে কিন্তু কোন ফাঙ্গাস , ব্ল্যাক, হোয়াইট নাকি ইয়েলো সেটি বুঝতে মাইক্রোস্কোপে দেখা লাগবেই। কালচার করা যায় তবে কালচার করার পর স্যাম্পল নিয়ে আবার মাইক্রোস্কোপে দেখতে হবে।

ফাঙ্গাস কালচার করা খুব কঠিন বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে কলুষিত (কন্টিমমিনিটেড) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। একবার কলুষিত হলে কিন্তু পরে আর আলাদা করা যায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান বলেন, এ ধরনের ফাঙ্গাসকে আমরা মাইক্রোবায়োলজির ভাষায় মিউকোরমাইকোসিস বলি। এখন এটা নিয়ে সবাই আলোচনা করছে কারণ করোনার চিকিৎসায় ওষুধের অতিরিক্ত প্রয়োগ কিংবা অপপ্রয়োগের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতার সুযোগে ফাঙ্গাস বংশবিস্তার করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে চাপে ফেলে দেয়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের জীবাণু প্রাকৃতিক ভাবে অরগানিক কিংবা ময়লার মধ্যে থাকেই। এটা উপসর্গ দেখে যদি সন্দেহজনক হয় তাহলে সিটি স্ক্যান করেই নির্ণয় করা সম্ভব। মুখমণ্ডলের সিটি স্ক্যান করলে নাক থেকে শুরু করে ফুসফুসের পথ পর্যন্ত ট্র্যাকটি দেখা যায়। এতে বুঝা যায় যে ফাঙ্গাসের বংশবিস্তার কতটুকু হয়েছে। যদি বিস্তার ঘটে থাকে তাহলে সিটি স্ক্যানে ধোঁয়া ধোঁয়া ছায়ার মতো দেখা যাবে। কালচার একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। কালচার করতে করতে হয়তো দেখা যাবে সেটি আরও বেশি করে বংশবিস্তার করে ফেলেছে।