ওসমান আবির:

ঘরের ভেতর পানি, ঝড়ো হাওয়ায় ঘর বিধ্বস্ত, গাছ উপড়ে পড়াসহ প্রাণহানির ভয়ে মানুষ দুর্যোগের সময় ছুটে যায় আশ্রয় কেন্দ্রে। আবহাওয়ার বিপদ সংকেত শুনে দিশেহারা উপকূলের মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল সাইক্লোন শেল্টার। সেই আশ্রয় কেন্দ্র যদি হয় ঝুঁকিপূর্ণ, তাহলে নদী তীরের মানুষের জীবন রক্ষাই দায়। এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে টেকনাফের নাফ নদী তীরে।উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের জালিয়া পাড়া গ্রামে নাফ নদী ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে জালিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারের একাংশ।বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বৃদ্ধি পাওয়া পানির তোড়ে গত মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়ের বেজমেন্টের নিচের মাটি সরে গিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে নদীতে চলে যেতে পারে ভবনটি। আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।

জানা যায়, ১৯৯১ সালে সৃষ্ট প্রবল শক্তিসম্পন্ন ঘূর্নিঝড়ের আঘাতে সারাদেশে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যাওয়ার পর এই অঞ্চলের মানুষের আশ্রয়ের জন্য ১৯৯৩ সালে সৌদি আর্থিক অনুদানে তিন তলা বিশিষ্ট সাইক্লোন শেল্টারটি নির্মান করে বাংলাদেশ সরকার।বর্তমানে এই ভবনে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে।

এই বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ইয়াছিন নামের চতুর্থ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এলাকার একটি মাত্র বিদ্যালয় এটি।তিন কিলোমিটার এলাকজুড়ে আর কোন বিদ্যালয় নেই।এই বিদ্যালয়টি নদীর বুকে বিলীন হয়ে গেলে আমাদের পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটবে।পড়ালেখা করতে হলে তিন কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পায়ে হেঁটে অন্য এলাকার বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়তে হবে।

অত্র এলাকার আওয়ামী নেতা আব্দুল গণি বলেন,” আমরা নদীর পাড়ে অনিরাপদে থাকি। ঘূর্ণিঝড় ও জোয়ারের পানির হাত থেকে রক্ষার জন্য আমাদের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয় হলো সাইক্লোন শেল্টার। ঘূর্ণিঝড়ের সময় মাইকিং করলে আমরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নেই। আবার বিপদ কেটে গেলে বাড়ি চলে আসি।গত এক বছর ধরে এই আশ্রয় কেন্দ্রটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উঠতে ভয় হয়। কারন কখন যে সেটি ভেঙ্গে মানুষের মাথায় পড়ে। তখন জান বাঁচাতে গিয়ে জানটা না শেষ হয়।

একই এলাকার সাবেক মেম্বার আব্দুস সালাম বলেন,” এলাকার একটি মাত্র বিদ্যালয় ও সাইক্লোন শেল্টার এটি।এমতাবস্থায় সরকার এই ভবন রক্ষার উদ্যোগ গ্রহন না করলে অনতিবিলম্বে ভবটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।এতে একদিকে এলাকার ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটবে, অন্যদিকে বর্ষায় উপকূলীয় মানুষ আশ্রয়ণ ঝুঁকিতে থাকবে।

এ বিষযে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী বলেন,”এই সাইক্লোন শেল্টারটি রক্ষার জন্য একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে।যা খুব শীগ্রই বাস্তবায়ন করা হবে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন,”জালিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারটি নদীর করাল গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য সরেজমিনে গিয়ে একটি নকশা ডিজাইন করা হয়েছে।বিদ্যালয়ের চারপাশের ৩’শ মিটার জায়গা জুড়ে পানি রক্ষা বাঁধ নির্মান করা হবে।খুব শিগ্রই বাঁধের নির্মান কাজ শুরু হবে।