এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীস্থ মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে সোমবার (২৪ মে) আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস-২০২১ পালিত হয়েছে। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় আর্ন্তজাতিক দাতা সংস্থা ইউএসএইড ইকোলাইফ (নেকম) প্রকল্পের আয়োজনে দিবসের শুরুতে বর্ণাঢ্য র‌্যালী অনুষ্ঠিত হয়। মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান পার্ক কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে র‌্যালীটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।

মেধাকচ্ছপিয়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাস্টার আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো.তহিদুল ইসলাম। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বনবিভাগের ফাসিয়াখালী ও ফুলছড়ি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.মাজহারুল ইসলাম।

আলোচনাপর্বের শুরুতে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইকোলাইফ (নেকম) প্রকল্পের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা কক্সবাজার অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মো.আবদুল কাইয়ুম।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় জীববৈচিত্য রক্ষায় দিকনির্দেশনামুলক বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইউএসএইড ইকোলাইফ (নেকম) প্রকল্পের কক্সবাজারের উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) ড.শফিকুর রহমান।

এছাড়াও সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী সহ-ব্যবস্থাপনা (সিএমসি) কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আবদুর রহমান, মেধাকচ্ছপিয়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সহসভাপতি বাহাদুর হক। এতে উপস্থিত ছিলেন ইকোলাইফ (নেকম) প্রকল্পের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফ, ফরহাদ আল মাহমুদ, আবু জাফর মো.সেলিম, সাইদুর রহমান, জগদীশ, ফাসিয়াখালী ডুলাহাজারা ও মেধাকচ্ছপিয়া সহব্যবস্থাপনা (সিএমসি) এবং বনরক্ষায় নিয়োজিত যৌথ টহলদলের (সিপিজি) সদস্যবৃন্দ।

সভায় আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসের মূল প্রবন্ধ তুলে ধরে ইকোলাইফ (নেকম) প্রকল্পের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা কক্সবাজার অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মো.আবদুল কাইয়ুম বলেন, ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ” আমরা প্রকৃতির সমস্যা সমাধানের অংশ। ১৯৯৩ সালে গঠিত হওয়া জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য সম্মেলন বিশ^ময় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের যে ধারা বজায় রেখেছে তা উন্নয়নশীল বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ বিবেচনায় গাছপালা, পশুপাখি, বনাঞ্চল, সমুদ্রসহ সকল জলজ এলাকায় জীববৈচিত্র্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। গাছকাটা, পাহাড়কাটা, সমুদ্র এলাকায় দূষণসহ বিভিন্ন পরিবেশ বিরোধী কর্মকা-ের কারণে বাংলাদেশ এখন পরিবেশগতভাবে খুবই সংবেদনশীল অবস্থায় পতিত হয়েছে। প্রতিবছর বন্যা, খরা, পাহাড় ধ্বংসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে মানুষ এবং সম্পদের ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে, পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার বিশাল অংশ পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে আমাদের দেশের উৎপাদন ও উন্নয়ন ব্যবস্থা বারবার ক্ষতির সম্মুখীন। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন সংকটকালীন সময় অতিবাহিত করছে, যা ভবিষ্যতে আরো চরম পরিনতি ডেকে আনতে পারে।

বিশেষ অতিথি ইউএসএইড ইকোলাইফ (নেকম) প্রকল্পের কক্সবাজারের উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) ড.শফিকুর রহমান বলেন, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, জনস্বাস্থ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা চাষাবাদের উন্নয়ন, বিকল্প জীবিকায়নসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ডের সাথে জীববৈচিত্র্যের সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ মানুষ এবং সকল জীবনের উন্নয়নে এবং জীবিকায়নে জীববৈচিত্র্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলায় জীববৈচিত্র্য যে মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষনে বনবিভাগের পাশাপাশি সিপিজি সিএমসি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় বন পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষন করতে হবে। পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকাণ্ডের বিরোদ্ধে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে আগামীতে সিপিজি সিএমসি কমিটির দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন এবং বিকল্প জীবিকায়নের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সভায় প্রধান অতিথি কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ডিএফও মো.তহিদুল ইসলাম বলেন, জীববৈচিত্র্য হচ্ছে মূলত জীবিকায়নের কেন্দ্রভূমি। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের টেকসই উন্নয়ন জীবন সংগ্রামের সাথে প্রকৃতির উপাদান তথা জীববৈচিত্র্য সবসময় ভূমিকা রেখেছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে অতিরিক্ত জনসংখ্যা, পরিবেশ ধ্বংস, অপরিকল্পিত নগরায়ন, দখল দুষণে নিঃশেষ হচ্ছে আমাদের জীববৈচিত্র্য। জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাবার কারণে বন, প্রকৃতি ও সাগর নির্ভর মানুষের জীবিকায়নের ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, মানুষের বেঁেচ থাকার প্রয়োজনে সবাইকে বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। এইজন্য সহ-ব্যবস্থাপনা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে আমরা জীববৈচিত্র্য রক্ষা করবো, টেকসই জীবিকায়নসহ সকল উন্নয়নকে বিকশিত করবো। পাশাপাশি বন এবং সাগর নির্ভর মানুষের বিকল্প জীবিকায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে সকল নগরীকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

আলোচনার শেষাংশে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো.তহিদুল ইসলাম বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন বেগবান করতে এইধরণের উদ্যোগ নেয়ায় ইউএসএইড ইকোলাইফ (নেকম) প্রকল্পের সবাইকে ধন্যবাদ জানান। পরে প্রধান অতিথি বনরক্ষায় নিয়োজিত যৌথ টহলদলের (সিপিজি) সদস্যদের মাঝে ৯ মাসের সম্মানী বিতরণ করেন।