লামা প্রতিনিধি:
বান্দরবানের লামা উপজেলায় বড় ভাইয়ের রোপিত ৪০ শতক জমির বোরো ধান জোর করে কেটে নিয়ে গেল ছোট ভাই ও ভাতিজারা। উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি মুরিংগ্যাঝিরিতে এ ঘটনা ঘটে। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ছোট ভাই মো. নেছার উদ্দিন (৩৯) ও মো. হারুণ (৪৪) নেতৃত্বে মো. জাহাঙ্গীর (৪১), মো. আলতাফ (৫৫), মো. আলমগীর (৩২), ভাতিজা হাসান (২৫) একই এলাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন ধান কেটে নিয়ে যায় বলে রবিবার সকালে সাংবাদিকদের জানান বড় ভাই আফজাল হোসেন (৭১)। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগে জানা যায়, কৃষক আফজাল হোসেনের নামে ৩০৭নং চাম্বী মৌজায় আর/৩৩১০নং হোল্ডিং মূলে ৪ একর ৭০ শতক দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর জমি সরকারী তৌজিভুক্ত আছে। ১৯৮২-৮৩ সালে সরকারীভাবে বন্দোবস্তি লাভের পর ওই জমিতে বহু কায়িক শ্রম ও অর্থ ব্যয়ে বসতবাড়ীসহ ফলদ বনজ বাগান সৃজন করে ভোগ করে আসছেন কৃষক আফজাল হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ওই জমি তার ভাই ও ভাতিজারা দাবী করে বিভিন্ন সময় জোর করে দখলে নিতে চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে তিনি ২০১৪ সালের ২২ মে ভাই ও ভাতিজাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি নং-৮৪৭) করেন। এরপরেও সম্প্রতি ভাই ভাতিজারা সংঘবদ্ধ হয়ে তার বসতঘরটি ভাংচুর ও লুটপাট করে নেয়। পরে এ ঘটনায় উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। মামলা করায় ভাই ভাতিজারা আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে আফজাল হোসেনের রোপিত ৪০ শতক জমির পাকা বোরো ধান গত ১৭ মে ১০-১৫ জন লোক নিয়ে কেটে নিয়ে যায়। এতে কৃষক আফজাল হোসেনের ২২ হাজার টাকা ক্ষতি হয়। খবর পেয়ে ধান কাটতে বাঁধা দিতে গেলে ভাই ও ভাতিজারা চরম ভাবে আফজাল হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগমের গায়ের কাপড় টেনে হেচড়ে চরম শ্লীলতাহানি করেন।

কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, আমার ভাই ও ভাতিজাদের জমির সুনির্দিষ্ট কোন কাগজপত্র না থাকা স্বত্বেও বিভিন্ন সময় স্থানীয় শালিসে বিভিন্ন জানের জমির কাগজপত্র উপস্থাপন করে আমার জমি দখলের চেষ্টা করছেন। এমনকি ২০০১ সাল থেকে বহুবার আমার স্ত্রী জাহানারা বেগমকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনসহ হত্যা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তারা। ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করবো।

সম্প্রতি ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানায়, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে আফজাল হোসেনের রোপিত বোরো ধান কেটে নিয়ে যায় তার ভাই ও ভাতিজারা। শুধু তাই নয়, একে কেন্দ্র করে যে কোন মুহুর্তে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটতে পারে। এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ভাই ও ভাতিজরা জানান, তারা তাদের জমির ধান কেটেছেন।

এদিকে লামা উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এডভোকেট মোহাম্মদ ইব্রাহীম জানান, আফজাল হোসেনের জমির ধান কেটে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। লকডাউনের কারণে মামলা করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন কোম্পানী বলেন, আফজাল হোসেনের সঙ্গে তার ভাইদের মধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে বলে জানি। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ও মামলা মোকদ্দমাও চলছে। তবে ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেউ জানায়নি।