কাফি আনোয়ার:
মঞ্জুর প্রবাসের কষ্টার্জিত রোজগার তুলে দিয়েছে স্ত্রী রুনা আক্তারের হাতে। তিলে তিলে সেই রক্তঘামে গড়ে তুলেছে জমিসমেত বসতবাড়ি।
স্বামী প্রবাসে, এই দীর্ঘবিচ্ছেদের সুযোগে স্ত্রী রুনা আকতার ধীরে ধীরে হয়ে উঠে অসংযত ও উচ্ছৃঙ্খল। তার বেপরোয়া জীবনাচারে শক্তি ও সাহস যোগায় তার বাবামা।
সেই সাথে ভাইবোনেরাও বোন রুনার পক্ষ নিয়ে মনজুরের সাথে রূঢ় ও সহিংস আচরণ শুরু করে।
অসহায় হয়ে পড়ে মনজুর। প্রবাসে রক্তঘামে অর্জিত টাকাই তার জন্য কাল হয়ে উঠে।
করোনার কারণে ভিসা জঠিলতা থাকায় মঞ্জুরকে দেশেই বেকার পড়ে থাকতে হয় মৃত্য পর্যন্ত।
মনজুরের প্রবাসী রেমিট্যান্সনির্ভর হয়ে পড়া রুনা আক্তারের পরিবারও মঞ্জুরের বেকারত্বের সময়ের আর্থিক সংকটে পড়ে যায়। এর আগে মঞ্জুরের টাকায় বিয়ে হয় রুনা দুই বোনের।
পরিকল্পিতভাবে রুনা ও রুনার পরিবার মঞ্জুরকে দুরে সরিয়ে দিতে থাকে। মঞ্জুর কাছে আসতে চাইলেই তার উপর চলে অমানবিক নির্যাতন। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে রুনা নিজ নামে তার স্বামি মঞ্জুরের টাকায় কেনা জমি ও দোতলা বাড়ীটি তার মায়ের নামে হস্তান্তর করে।
এ নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার সালিশ বৈঠকও ওই পরিবারের লোভ লালসাকে নিরস্ত করতে পারেনি।
যারাই মঞ্জুরের পক্ষে মত দিয়েছে, সমর্থন দিয়েছে কিংবা বিচারের রায় দিয়েছে তাদের বিপক্ষে ওই রুনা ও তার পরিবার নগ্নভাবে বিরুদ্ধাচারণ করে।
এক পর্যায়ে তারা মঞ্জুরকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার পরিকল্পনা করে । এবং সফলভাবেই প্রকাশ্য দিবালোকে রূনা ও তার বাবামা, ভাইবোন সংঘবদ্ধভাবে দা,লাঠি, লোহার রড দিয়ে পালাক্রমে মধ্যযুগীয় কায়দায় মঞ্জুরকে বেধড়ক পিটিয়ে রাস্তা ফেলে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
এত জিঘাংসা, এত ক্রোধ, এত হিংস্রতা, এত বণ্যতা কোন জন্তু জানোয়ারেরও থাকার কথা নয়।
আর বস্ত্রবসনে মানুষ নামীয় এই পশুগুলি মানুষের সমাজে এতদিন বসত করল কিভাবে?
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মঞ্জুরের নিস্তেজ দেহ রাস্তায় ফেলে দেওয়ার পর এক পর্যায়ে হাতে আঙ্গুল নড়াচড়া করছিল, তখন মঞ্জুরের শ্বশুর লাঠি দিয়ে সাপ মারার মত করে ওই আঙ্গুলে অনবরত পিটাতে পিটাতে নিস্তেজ করে দেয়।
এই বর্বরতা কিসের আলামত? কোন সমাজে আমরা ভদ্রতার মুখোশ পরে মানুষ সেজে বসে আছি?
মানুষের মাঝে এই ঘৃণ্য খুনেমেজাজ কিসের লক্ষণ?
প্রবাসীরা নিজ দেশে কতটা নিরাপদ? কতটা নিরাপদ তাদের দারাপুত্রপরিবারপরিজনের কাছে? ওই ডাইনী রুনার মত হাজারে হাজার প্রোষিতভর্তৃকা ( যে নারীর স্বামী বিদেশে থাকে)এই জনপদের ঘরে ঘরে।
এরা কেউ আমাদের বোন, কেউ আমাদের কন্যা, কেউ আমাদের স্বজন।
প্রবাসী স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগে হাজারে হাজার প্রোষিতভর্তৃকাদের বেপরোয়া বিচরণ সমাজে অশনি মিথষ্ক্রিয়ার জন্ম দিচ্ছে প্রতিদিন। কেউ আমরা এর বাইরে নই। প্রবাসীদের দিকে অঙুলি নির্দেশ করে তাদের উপর দায় চাপাতে পারলেই যেন আমাদের শান্তির শীতনিদ্রা মিলে।
এ সমাজের কী কোন দায় নেই?
প্রবাসী মঞ্জুর জীবন দিয়ে প্রমাণ করে দিল প্রবাসীরা তাদের প্রিয় মাতৃভূমিতেও শান্তিতে নেই। অথচ কত বিনিদ্র রাত কাটে ওদের প্রিয় স্বদেশের বিরহে চোখের জলে বালিশ ভিজিয়ে। কত বছর যুগ পার হচ্ছে একটু ভাল করে বাঁচার আশায়,ভাল থাকার আশায়।
সেই পথ চেয়েই বদলে যাচ্ছে ওদের কালো চুল,গায়ের রঙ,পরিবারের চেহারা।
আর এই বেচারা মঞ্জুরেরা চিরকালই অসহায়,অবহেলিত । ওদের স্ত্রীর কাছে, সন্তানের কাছে, এই সমাজের কাছে।