সিবিএন ডেস্ক
বরাবরের মতো এবারও বাজেট (অর্থ বছর ২০২১-২২) নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন মোবাইল খাত সংশ্লিষ্টরা। দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদক, আমদানিকারক ও মোবাইল ফোন অপারেটররা এরইমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করেছেন। সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের বক্তব্য, তাদের দাবি দাওয়া মানা হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন আরও তরান্বিত হবে, টেলিযোগাযোগ খাতের সুফল ভোগ করবে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ। বাংলাদেশ আমদানিকারকের দেশ থেকে উৎপাদকের দেশে পরিণত হয়েছে। বাজেটে এ খাতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলে এ দেশ বিশ্বের কাছে রফতানিকারক দেশ হিসেবে আরও মর্যাদা লাভ করবে বলে তারা আশাবাদী।

বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশে কম্পিউটারের ওপর শুল্ক ও কর নেই। ১৯৯৬ সালে এ খাতে কর মওকুফ করা হয়েছে। ফলে সবাই দেখতে পাচ্ছে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার। দেশে তৈরি মোবাইলের ক্ষেত্রেও এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) যদি এমন কোনও সুযোগ দেয় তাহলে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে দেশের মোবাইল শিল্পও কম্পিউটারের জায়গা দখল করে নেবে।

মন্ত্রীর এ কথার পর থেকে দেশের টেলিযোগাযোগ খাত বিশেষ করে মোবাইল শিল্প কি তাহলে কোনও সুখবর পেতে যাচ্ছে? পুরো ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে কী হতে যাচ্ছে, কী হচ্ছে- একটাই প্রশ্ন। যদিও আগেভাগে উত্তর জানার কোনও সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ)যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, আমরা এনবিআরে কিছু দাবি-দাওয়া পেশ করেছি। বাজেটে তার প্রতিফলন দেখতে পারলে ইন্ডাস্ট্রির উপকার হবে। তিনি জানান, দেশে উৎপদিত মোবাইল শিল্পে ২০২২ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা রয়েছে। বিএমপিআইএ এ কর অবকাশ সুবিধা বাড়িয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে। জানা গেছে, দেশে উৎপাদিত মোবাইল শিল্পে ৩ ভাগে কর বিন্যাস করা আছে। এক. ফুল ম্যানুফ্যাকচারিং, দুই. চার্জার ও যন্ত্রাংশ, তিন. পিসিবি। বিএমপিআইএ দাবি জানিয়েছে, এই কর বিন্যাসটি দুটি বা একটি লেভেলে করলে এই শিল্প টেকসই হবে। বিএমপিআইএ এবারের বাজেটে এই দুটি বিষয় নিয়ে আশাবাদী।

এদিকে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটব এবারের বাজেটে মোবাইল সিম কর বিলুপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটি বলছে, প্রতিটি সিম সরবরাহের জন্য ২০০ টাকা ভ্যাট বা সিম ট্যাক্স দিতে হয়। এটা এই নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য সংযোগের গতি বৃদ্ধিতে বাধা হিসাবে কাজ করে। সিম সরবরাহের ওপর মূসক (ভ্যাট) অপসারণ করা হলে গ্রামাঞ্চল ও বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীকে মোবাইল সংযোগ প্রদান করা সহজ হবে। এটা আরেকদিকে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

মোবাইল ব্যালান্স ব্যবহার করে ডিজিটাল সেবা ক্রয়ের ওপর কর যৌক্তিক করারও আহ্বান জানিয়েছে অ্যামটব। সংগঠনটি উল্লেখ করেছে, প্রতি ১০০ টাকার মোবাইল এয়ারটাইমে ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ কর অন্তর্ভুক্ত এবং তা প্রিপেইড প্রকৃতির- তাই গ্রাহক এই এয়ারটাইম ব্যালান্স ব্যবহার করে কোনও ‘নন-টেলকো’ সেবা ক্রয় করে থাকলে তাদের অতিরিক্ত ১৬ ভাগ কর দিতে হয়। এই অতিরিক্ত শুল্ক পরিসেবাটিকে ব্যয়বহুল করে তুলছে।

ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর কর যৌক্তিক করার বিষয়ে সংগঠনটির দাবি বর্তমানে প্রতি ১০০ টাকার ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য গ্রাহককে ২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। যা এই সেবাকে ব্যয়বহুল করে তুলেছে। অন্যান্য ইন্টারনটে সেবা প্রদানকারীদের, যেমন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) সম্পুরক শুল্ক ও সারচার্জ দিতে হয় না। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ১৫ শতাংশ কর অর্থাৎ ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জ অব্যাহতি দিলে ইন্টারনেট আরও সাশ্রয়ী হবে।