মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

উখিয়া উপজেলার ৫ টি রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প ২০ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১২ দিনের জন্য লকডাউন (Lockdown) ঘোষনা করা হয়েছে। ক্যাম্প গুলো হচ্ছে-কুতুপালং ওয়েস্ট ২, ৩, ৪, ১৫ ও ২৪ নম্বর।

কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয় বিষয়টি সিবিএন-কে নিশ্চিত করেছে।

গত ১৯ মে কক্সবাজার জেলায় করোনা সংক্রামণ প্রতিরোধে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এর সাথে জেলা করোনা সংক্রামণ প্রতিরোধ কমিটির অনলাইন সভা হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলোতে করোনা সংক্রামণ আশংকাজনক বেড়ে যাওয়ায় কিছু কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্প লকডাউন করার সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্তের আলোকে একইদিন আরআরআরসি অফিসে অনুষ্ঠিত পৃথক আরেকটি জরুরী সভায় প্রাথমিকভাবে উল্লেখিত ৫ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ১২ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষনা করা হয়।

সুত্র জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম শরনার্থী শিবির বলে খ্যাত উখিয়া টেকনাফের ৩৪ টি রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের প্রত্যেকটিতে করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে উল্লেখিত ৫ টিতে অপেক্ষাকৃত বেশী করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়।

বৃহস্পতিবার ২১ মে পর্যন্ত ৩৪ টি রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের ৪১ হাজার ৪৭৭ জনের নমুনা টেস্ট করে ৯১৩ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। তন্মধ্যে উখিয়া উপজেলার ক্যাম্প গুলোতে ৭৪০ জন এবং টেকনাফ উপজেলার ক্যাম্প গুলোতে ১৭৩ জন। এরমধ্যে ১৩ জন করোনা আক্রান্ত রোহিঙ্গা রোগী মারা গেছে। শুধুমাত্র গত ১৪ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে ক্যাম্প গুলোতে করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে ১৬৫ জন। শুধুমাত্র ১৯ মে এবং ২০ মে পরপর ২ দিন ৪৫ জন করে রোহিঙ্গা করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়।

ক্যাম্প গুলোতে লকডাউন চলাকালে ক্যাম্প সমুহে জরুরী বিষয় ছাড়া সবকিছুর যাতায়াত বন্ধ থাকবে। এসময় ক্যাম্প থেকে কোন শরনার্থী বা স্থানীয় মানুষ বাহির থেকে এসে ক্যাম্পে প্রবেশ করতে পারবেনা। আবার ক্যাম্প থেকে কোন স্থানীয় মানুষ বা শরনার্থী লকডাউন চলাকালে বাইরে যেতে পারবেনা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ক্যাম্প গুলোর সর্বত্র আইনশৃংখলা বাহিনী রাতদিন লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করবে বলে সুত্রটি জানিয়েছে। লকডাউন চলাকালে জরুরী ও অত্যাবশ্যকীয় কর্ম, খাদ্য, চিকিৎসা ব্যতীত এনজিও, আইএনজিও, জাতিসংঘের সংস্থা সহ ক্যাম্প সমুহে কর্মরত সংশ্লিষ্ট সকলের গাড়ি চলাচল ও আসা যাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

এদিকে, রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলোতে করোনা সংক্রামণ আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলো অপেক্ষাকৃত বেশী করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে এক বিবৃতিতে ইউএনএইচসিআর আশংকা পোষন করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সহসায় কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প গুলোতে করোনা সংক্রামণ আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।