এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া:
চকরিয়া উপজেলার মানিকপুরের বড়ুয়াপাড়া টেক স্টেশনে গুলিবর্ষণ করে দোকান ও বসতঘরে হামলা-লুটপাটের ঘটনায় সোমবার চকরিয়া থানায় একটি এজাহার দাখিল করা হয়েছে। হামলায় আহত দেলোয়ার হোসেন নামের একব্যক্তি বাদি হয়ে ৯জনকে আসামি করে এজাহারটি জমা দিয়েছেন।

এজাহারে মানিকপুরের ইউপি মেম্বার বন, দুস্যতা হত্যাসহ অন্তত দশ মামলার আসামি জাহেদ সিকদার ছাড়াও আসামি করা হয়েছে শাহাব উদ্দিন, মুবিনুল হক, জসিম উদ্দিন বাবু, নবাব মিয়া, বাহাদুর, কফিল উদ্দিন, মামুন ও হেলাল উদ্দিনকে। তদমধ্যে আসামি বাহাদুরের বাড়ি চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের বুড়িপুকুর এলাকায়, অন্যদের বাড়ি মানিকপুরে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মুহাম্মদ যোবায়ের এজাহারটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য থানার অপারেশন অফিসার (সেকেন্ড অফিসার) এসআই মোজাম্মেল হককে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বাদি দেলোয়ার হোসেন।

এজাহারে বাদি সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের বড়ুয়াপাড়া টেক এলাকার কবির আহমদের ছেলে জখমী দেলোয়ার হোসেন জানান, গত ১৫ মে স্থানীয় শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে আসামি শাহাব উদ্দিনের পরিবারের মধ্যে একটি তুচ্ছ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি মেম্বারসহ এলাকার গন্যমান্য লোকজন সমাধান করে দেন। কিন্তু ওই ঘটনার জেরধরে টাকার বিনিময়ে মানিকপুরের ইউপি মেম্বার বন, দুস্যতা হত্যাসহ দশ মামলার আসামি জাহেদ সিকদার এবং চিরিঙ্গার বুড়িপুকুর এলাকার দাগী সন্ত্রাসী বাহাদুরের নেতৃত্বে ৮-১০জনের অস্ত্রধারী একটিদল ১৬ মে রাত আনুমানিক ৯টার দিকে গাড়ি যোগে এসে মানিকপুর বড়ুয়াপাড়া টেক স্টেশনে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে।

এসময় তাঁরা প্রথমে দোকানে ঢুকে স্থানীয় মৃত বাবু মিয়ার ছেলে শাহাব উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে খোঁজ করতে থাকে। ওইসময় তাঁরা বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে এলাকায় ভীতিকর অবস্থা তৈরী করে। ঘটনার সময় উপস্থিত লোকজন বাঁধা দিয়ে অস্ত্রধারীদের ঘেরাও করতে চাইলে মেম্বার জাহেদ ও তাঁর সহযোগিরা ঘটনাস্থলে একশত গজ উত্তরে এসে মোবাইলে কথা বলার সময় বাদিকে (দেলোয়ার হোসেন) বন্দুক তাক করে হত্যার করার হুমকি দেয়।

বাদি দেলোয়ার হোসেন এজাহারে আরও জানান, ঘটনার সময় প্রাণের ভয়ে সে পালিয়ে যাবার চেষ্ঠা করলেও অস্ত্রধারীরা তাঁকে পিছু ধাওয়া করে আটক করে। এরপর বন্দুকের বাট ও হকিস্টিক দিয়ে তাকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে মাটিতে ফেলে দিয়ে কোমড়ে থাকা জমি লাগিয়তের নগদ ৮৫ হাজার টাকা এবং একটি মোবাইল সেট লুটে নেয়।

আহত দেলোয়ার হোসেন এজাহারে আরও জানান, ঘটনার সময় তাঁর শোর চিৎকারে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসলে প্রতিবেশি রেজাউল করিম লালুকে বন্দুকের বাট দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। এসময় তাঁরা দোকানে বসে থাকা নুর মোহাম্মদ সহ আরও কয়েকজনকে মারধর করে। আহতদের মধ্যে রেজাউল করিম লালুকে চকরিয়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে উপস্থিত লোকজন ৯৯৯ ফোনকলে ঘটনাটি জানালে তাৎক্ষনিক চকরিয়া থানা পুলিশের একটিদল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। ততক্ষনে হামলাকারী অস্ত্রধারীরা নিরাপদে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এরপর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, পরিষদের মেম্বারসহ এলাকাবাসি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশকে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

এলাকাবাসি জানিয়েছেন, মানিকপুরের ইউপি মেম্বার জাহেদ সিকদার দীর্ঘদিন ধরে নানাধরণের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে শুধু বন মামলা রয়েছে ৯টি। এছাড়াও তিনি আলোচিত যুবলীগ নেতা বক্কর হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারধীন রয়েছে। সর্বশেষ ১৬ মে রাতে বহিরাগত অস্ত্রধারীদের নিয়ে এলাকায় হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়ে জাহেদ মেম্বার মানিকপুরের জনগনের কাছে এখন মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আর্বিভুত হয়েছে।