মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার ১৫ মে পর্যন্ত গত ১৪ মাসে কক্সবাজার জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ১১ জন। একইসময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার জেলায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১০৩ জন। মৃতদের মধ্যে ১২ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী। অবশিষ্ট ৯১ জন স্থানীয় নাগরিক। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ১’১৪%। এরমধ্যে, গত ৩ এপ্রিল হতে ১৫ মে এপ্রিল পর্যন্ত গত ৪৩ দিনে জেলায় মারা গেছে ২০ জন। গত ২ এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির সংখ্যা ছিলো মোট ৮৩ জন।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

শনিবার ১৫ মে পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলা ৪ হাজার ২৫৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। যা জেলার মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর প্রায় অর্ধেক। ৬০৮ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী সহ মোট ১ হাজার ৬২৫ জন করোনা রোগী নিয়ে উখিয়া উপজেলা দ্বিতীয় শীর্ষে অবস্থানে রয়েছে। ১৫৮ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী সহ মোট ৯২৩ জন করোনা রোগী নিয়ে টেকনাফ উপজেলা তৃতীয় শীর্ষে অবস্থানে রয়েছে। ৭১৬ জন করোনা রোগী নিয়ে চকরিয়া উপজেলা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। ৫৭৬ জন করোনা রোগী নিয়ে রামু উপজেলা পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। ৫৪৬ জন করোনা রোগী নিয়ে মহেশখালী উপজেলা ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ২৬৬ জন করোনা রোগী নিয়ে পেকুয়া উপজেলা সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। ১০৩ জন করোনা রোগী নিয়ে কুতুবদিয়া উপজেলা অষ্টম অবস্থানে রয়েছে।

কক্সবাজার আরআরআরসি অফিসের স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ১৫ মে পর্যন্ত ৩৪ টি ক্যাম্পে থাকা ৪০ হাজার ৭৩১ জন রোহিঙ্গা শরনার্থীর নমুনা টেস্ট করে ৭৬৬ জন রোহিঙ্গা শরনার্থীর শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। তারমধ্যে, উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ৬০৮ জন এবং টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ১৫৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী মারা গেছে। তবে গত এক বছরের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে ক্যাম্প গুলোতে রোহিঙ্গা শরনার্থী আক্রান্তের হার অনেক গুন বেড়েছে। শুধুমাত্র সোমবার ১৫ মে একদিনে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ১০ জন রোহিঙ্গা শরনার্থীর দেহে করোনা শনাক্ত করা হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান এর দেওয়া তথ্য মতে, গত ১৫ মে পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৭ হাজার ৮২৮ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তের তুলনায় সুস্থতার হার ৮৬’৮৭%। একই সময়ে কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত অসুস্থ রোগী রয়েছে ১ হাজার ৫৬ জন। এরমধ্যে, হোম আইসোলেসনে রয়েছেন ৮৮০ জন, প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেসনে রয়েছেন ১৭৬ জন। তারমধ্যে, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেসনে রয়েছেন ৪৫ জন, রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেসন হাসপাতালে রয়েছেন ৬ জন, চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেসন হাসপাতালে রয়েছেন ৩ জন, কক্সবাজার শহরের পশ্চিম বাহারছরা ফ্রেন্ডশিপ SARI হাসপাতালে রয়েছেন ১০ জন, রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের অভ্যন্তরে আইসোলেসন সেন্টার সমুহে রয়েছেন স্থানীয় জনগণ ২৯ জন এবং রোহিঙ্গা শরনার্থী রয়েছেন ৮৩ জন।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া জানিয়েছেন, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ১৫ মে পর্যন্ত সন্দেহজনক করোনা রোগীর নমুনা টেস্ট করা হয়েছে মোট ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ১০ জনের। তারমধ্যে, কক্সবাজার জেলার নাগরিকদের নমুনা ৮৪ হাজার ৮২৬ জনের। রোহিঙ্গা শরনার্থীদের নমুনা ৪০ হাজার ৭৩১ জনের। চট্টগ্রাম জেলার নাগরিকদের নমুনা ১১ হাজার ৫২৯ জনের এবং বান্দরবান জেলার নাগরিকদের নমুনা ৫ হাজার ৯২৪ জনের। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নমুনা টেস্ট টেস্ট শুরু হয় ২০২০ সালে ২ এপ্রিল হতে। এর আগে ঢাকার মহাখালী আইইডিসিআর এর ল্যাবে কক্সবাজারের নাগরিকদের নমুনা টেস্ট করা হতো। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের কোনার পাড়ার তুমব্রু ‘জিরু পয়েন্ট’ এর আবু সিদ্দিক নামক তাবলীগ ফেরত একজন নাগরিকের নমুনা টেস্ট রিপোর্ট সর্বপ্রথম ‘পজেটিভ’ করা শনাক্ত হয়। তবে ঢাকার মহাখালী আইইডিসিআর এর ল্যাব থেকে করোনার নমুনা টেস্ট করে চকরিয়ার খুটাখালীর মুসলিমা খাতুন নামক একজন বয়স্ক মহিলার শরীরে কক্সবাজার জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়।

এদিকে, শনিবার ১৫ মে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে ১৮৬ জনের নমুনা টেস্ট করে ২৫ জনের টেস্ট রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ পাওয়া গেছে। বাকী ১৬১ জনের নমুনা টেস্ট রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসে।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া সিবিএন-কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শনিবার শনাক্ত হওয়া ২৫ জন করোনা রোগীর মধ্যে ১ জন আগে আক্রান্ত হওয়া পুরাতন রোগীর ফলোআপ টেস্ট রিপোর্ট। বাকী নতুন শনাক্ত হওয়া ২৪ জন রোগীর সকলেই কক্সবাজারের রোগী। তারমধ্যে, ১০ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী। এছাড়া কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৩ জন, রামু উপজেলায় ৪ জন, উখিয়া উপজেলায় ৩ জন, টেকনাফ উপজেলার ২ জন, চকরিয়া উপজেলায় ১ জন এবং মহেশখালী উপজেলার ১ জন রোগী রয়েছে।