ইউসুফ আরমান

পৃথিবীর যে দেশে ইহুদিরা বাস করছে সে দেশ তাদের ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য তাগিদ দেয়। ইহুদিরা ফিলিস্তিনে এসে বাসা বাঁধতে থাকে। ইহুদিদের জন্য একটি পৃথক সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন ছিল মূল লক্ষ্য। এইভাবে ইহুদিরা আবাস ভূমি সৃষ্টি করে এবং ইহুদিদের সংখ্যা ক্রমে বাড়ে।

ফিলিস্তিনে ইহুদী উপনিবেশের ইতিহাসের শুরুটা উনবিংশ শতকের শেষার্ধ থেকে। এ সময়ই ইউরোপে এন্টি-সেমিটিজম তথা ইহুদী-বিদ্বেষ দানা বাঁধতে শুরু করে। আর ইহুদীরা নিজেদের একটি রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করে। তাদের মতে, তাওরাতের প্রতিজ্ঞা মতে ফিলিস্তিনেই সেই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে তাওরাতে কোথাও বলা নেই যে, ফিলিস্তিনে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা ইহুদীদের জন্য আবশ্যক।

প্রায় সহস্র বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে ইহুদীরা বিতাড়িত ও ক্ষেত্রবিশেষে নির্যাতিত হলেও মানুষ নিশ্চয়ই স্বীকার করবে যে, এন্টি-সেমিটিজমের উত্থানের যুগে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের কোন অধিকারই ছিল না। আমেরিকার সব মানুষই তো ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন ও পর্তুগাল থেকে এসেছে। তাই বলে এখন তো তারা এসব দেশে ফিরে যাওয়ার দাবী করতে পারে না। ১৮৭৮ সালের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ফিলিস্তিন মোটামুটি সমৃদ্ধ একটি দেশ হিসেবে বিরাজ করছিল এবং সেখানে মুসলিম ও খ্রিস্টানরা বেশ শান্তিতে বাস করছিল। সামান্য ইহুদীও ছিল।

ফিলিস্তিনিরা হতভাগ্যই বটে। তারা প্রায় এক শতক ধরে নিজেদের ভূখণ্ডে দখলদার ইহুদিদের হাতে মার খাচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ঝরছে রক্ত। ফিলিস্তিনিরা আজও মরছে, লাশের পাহাড় আকাশ ছুঁয়েছে।

সম্প্রতি জুমাতুল বিদায় আল-আকসা মসজিদে বর্বরোচিত হামলার পর থেকে ফিলিস্তিনি পাড়া-মহল্লায় শুরু হয়, অবৈধ দখলদারদের উৎপাত। হামলা বন্ধ করেনি ইসরায়েলি পুলিশও।

এমন দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বারবার হুঁশিয়ারির পরও, উপহাসের হাসি ছিল ইসরায়েলিদের মুখে। গাজায় ১৩ তলা ভবন গুড়িয়ে দেয়াসহ ১৬টি স্থাপনায় রকেট হামলা চালায় তারা।

জবাবে, তেল আবিবে মুহুর্মুহু রকেট হামলা চালায় গাজার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ হামাস। সাইরেন বাজিয়ে স্থানীয়দের সতর্ক করে, তেল আবিব প্রশাসন। কার্যকর করা হয়, রকেট প্রতিরোধক ব্যবস্থা।

তবে, এর মাঝেই ইসরায়েলের জ্বালানি কেন্দ্র, বিদ্যুৎ স্থাপনাসহ কয়েকটি স্থাপনায় আঘাত হানে রকেট। কয়েকটি বাড়িও বিধ্বস্ত হয়। লড শহরে জরুরি অবস্থা জারি করে, ইসরায়েল। বন্ধ করে দেয়, বিমান চলাচল।

শিশুসহ একাধিক সামরিক সদস্যের মৃত্যুর খবর সামনে আসছে। তা হৃদয় বিদারক। দুপক্ষকে সংযম বজায় রেখে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

দুই পক্ষের রকেট আর বিমান হামলায় ক্রমাগত প্রাণহানি বেড়েই চলছে। ইসরায়েলি বাহিনীকে সর্বাধিক সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। কাউকে তোয়াক্কা না করে ইসরায়েল সৈন্য হামলায় রক্তে রঞ্জিত ফিলিস্তিন।

শেইখ জাররা এলাকায় বেশ কয়েকটি পরিবারের বাড়ি দখলের পায়তারাঁ এবং ১৯৬৭ সালে আরবদের পরাজিত করার দিন জেরুজালেম দিবস উদযাপনে উগ্র ইহুদিদের তৎপরতায় সপ্তাহ দুয়েক ধরেই উত্তপ্ত গোটা ফিলিস্তিন যা বর্তমান ও বিদ্যমান।

ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে ফিলিস্তিনিদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চলছে। আর কত রক্ত ঝরলে, লাশের মিছিল কতটা দীর্ঘ হলে, তাদের ভূখণ্ড স্বপ্নের স্বাধীন রাষ্ট্র হয়ে ধরা দেবে—তা এখনো অজানা।