শাহেদুল ইসলাম মনির:
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই, ফেসবুকটা যেই খুলেছি, শুধুই মাকে নিয়ে লেখা পোস্টে এ ভরা। ফেসবুকে কিছু লেখা তুলে ধরা হল, আমার কাছে মায়ের জন্য আলাদা কোন দিবস নেই..!! প্রতি সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিন, মাস, বছর জুড়ে, সারাজীবন ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল -“মা”, মা আমি তোমায় খুব ভালোবাসি, আরও অনেক লেখাই পড়লাম, যেনো মায়ের গর্ব করা সন্তান, খুব ভালোবাসে মাকে। কেউ কেউ তো আবার মাকে নিয়ে সেলফি ,খুব সুন্দর লাগে এইসব দেখতে, কত ভালোবাসা মায়ের প্রতি, খুব সুন্দর সম্পর্ক মা আর সন্তানের তাই না। দেখতে কি ভালো লাগে, লাইকের পর লাইক, কত কমেন্ট।

চোখটা এখন আমাদের শুধু ফেসবুকে কি খুশি আমরা, হ্যা আমাদের কথাই বলছি যাদের ভালোবাসাটা শুধু এখন লাইক আর কমেন্টের জন্য, এখন যদি মা এসে বলেন “বাবা” একটু সাহায্য কর না, তখনই বেশি জ্বালিয়ো না তো, অথচ মাকে নিয়ে লেখা পোস্টের, উত্তর দিচ্ছে, হ্যা আমার মা আমার সব, আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসি, আমাদের সবার উচিত মাকে নিশার্থ ভাবে ভালোবাসা, মায়ের যত্ন করা আরও কত কি লিখিছি আমরা, কত ভালোবাসা মায়ের প্রতি, মায়ের ডাকে কিন্তু সাড়া নেই।

হ্যা এখন আমাদের ভালোবাসাটা এইভাবেই ফেসবুকেরর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে, আমরা আজ এতোটাই ফেসবুকে তে মগ্ন হয়ে গেছি যে যার জন্য এই লেখা, যার জন্য এতোকিছু তাকেই মনে নেই। কেনো পারি না, আজকের দিনটাই ফেসবুকে না থেকে, দিনটা মায়ের সঙ্গে কাটাতে, আমরা বলতে পারি না, মা তুমি তো রোজ রান্না করো, আজ না হয় আমি রান্না করি, চলো মা আজ তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাই। তাই আমাদের সবার ভাবা উচিত মায়ের প্রতি আমাদের ভালোবাসাটা শুধু যেনো ফেসবুকের মধ্যে আটকে না থাকে, এই পৃথিবীতে সবচেয়ে শ্রুতিমধুর ও পবিত্র শব্দের নাম ‘মা’। এক অক্ষরের একটি ছোট্ট শব্দ ‘মা’। সন্তানের সাথে যার নাড়ির সম্পর্ক। হৃদয়স্পর্শী এ শব্দের সঙ্গে অন্য কোন শব্দের তুলনা হয় না। মা শব্দটি দিয়েই প্রত্যেক শিশুর জীবন আরম্ভ হয়। মানব শিশু মায়ের কারণেই সুশীতল ধরাতলের সুন্দর মুখখানি দেখতে পায়।

স্নেহময়ী মায়ের হাসি, মন উজাড় করা ভালোবাসা, আদর-স্নেহে সন্তানের মনে বয়ে যায় অনাবিল আনন্দের ঝরনাধারা। সব দু:খ-কষ্ট আর বেদনা ‘মা’ শব্দের মাঝে বিলীন হয়ে যায়। যুগে যুগে মাকে নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গল্প, গান, ছড়া, কবিতা। মমতাময়ী মাকে নিয়ে কবি কাদের নেওয়াজ তাঁর ‘মা কবিতায় লিখেছেন- ‘মা’ কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু যেন ভাই/ ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।’ মাকে নিয়ে কবির একথা চিরসত্য হয়ে আমাদের কাছে প্রতি মূহুর্তে উপস্থিত হয়।

সত্যিই মায়ের মতো আপনজন এ পৃথিবীতে আর কেউ নেই। মা করুণাময়ী ও স্নেহের খনি। মায়ের ভালোবাসার ন্যায় অকৃত্রিম ভালোবাসা ও স্নেহ পৃথিবীতে দুর্লভ। মায়ের স্নেহ-মমতা যে কী অসীম তা কল্পনাতীত। মায়ের ভালোবাসা স্বর্গীয় ও স্বত:স্ফূর্ত। জগতের আর কারো কাছ থেকে এই নি:স্বার্থ ও পবিত্র ভালোবাসা আশা করা যায় না। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা চলতে থাকে। মানব জীবনে মায়ের স্থান তাই অনেক উর্ধে, সর্বাধিক সম্মানের ও শ্রদ্ধার।

সন্তানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয় হচ্ছে মা। সন্তানের ভালোর জন্য মায়ের চিন্তা সারাক্ষণ। সন্তানের কোন অসুখ হলে মা দুর্ভাবনায় অস্থির হয়ে পড়েন। অসুস্থ সন্তানের শিয়রে বসে মা বিনিদ্র রাত যাপন করেন। ক্ষুধা-ক্লান্তি ভুলে গিয়ে সন্তানের সুস্থতার জন্য সেবা-শুশ্রুষা করে থাকেন। অনেক সময় নিজে না খেয়ে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেন। সন্তানের সুখের জন্য মা নিজের দু:খ কষ্টকে আড়াল করে রাখেন। পৃথিবীর সব মায়ের কাছেই তার সন্তান সাত রাজার ধন। নিজের জীবন দিয়ে হলেও মা সন্তানের সুখ-শান্তি ও মঙ্গল কামনা করেন। সন্তানের সফলতায় মা আনন্দিত হয়। মায়ের এই আনন্দ স্বর্গীয়। মায়ের স্নেহের তুলনা নেই। মায়ের স্নেহ-মমতা ও আশীর্বাদ ছাড়া জগতে কেউ উন্নতি লাভ করতে পারেনা। ইউরোপ বিজয়ী বীর সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট তার মা লেটিসিয়াকে দেখেছেন বুদ্ধি, আত্মমর্যাদা বোধ, ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে ১৩ সন্তানকে লালন-পালন করতে। তাই তো তিনি বলে ছিলেন, ‘আমাকে একটি ভালো মা দাও, আমি তোমাদের একটি ভালো জাতি উপহার দেব।’

মায়ের প্রতি সন্তানের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। মায়ের প্রতি সন্তানের কর্তব্য যে কত বড় তা ভেবে শেষ করা যায় না। সারাজীবন তাঁর সেবা করলেও সে ঋণ শোধ হবার নয়। মা শ্রদ্ধার আধার। স্নেহের কান্ডারি। সব ধর্মেই মা আশীর্বাদ স্বরূপ। তাই সন্তানের সর্ব প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মাকে শ্রদ্ধা করা এবং অন্তরের শ্রেষ্ঠতম আসনে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করা। সন্তানের হৃদয়োৎসারিত ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মাকে অভিষিক্ত করা।

সন্তানের কাছে মা-ই হলেন জগতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তাই মায়ের সাথে সর্বদা সম্মানজনক ও সহযোগিতামূলক ব্যবহার করতে হবে। তাঁর সঙ্গে কখনও কর্কশ ভাষায় কথা বলা উচিত নয়। মায়ের অবাধ্যতা অমার্জনীয় অপরাধ। মায়ের আদেশ পালন করা এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলা সন্তানের পবিত্র কর্তব্য। মায়ের সন্তুষ্টির দিকে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, মায়ের সন্তুষ্টি লাভের মধ্যে সন্তানের জীবনের সাফল্য নির্ভর করে। সাধ্যমত তাকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে সেবা করা উচিত।

আমাদের ভালোবাসাটা যেনো শুধু লাইক কমেন্টের জন্যে না হয়, মাকে ভালোবাসার জন্য জেনো আমরা শুধু এই একটা দিন পালন না করি। আমাদের কাছে প্রতিটি দিনই যেনো মা দিবস হয়।

শাহেদুল ইসলাম মনির
কুতুবদিয়া