নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সোনারপাড়ায় জনস্বার্থে মাঠ রক্ষা করতে গিয়ে মামলা ও হামলার শিকার হয়েছে নিরীহ মানুষ। পবিত্র রমজানে আসামী ধরার নামে পুলিশী হয়রানী অব্যাহত আছে। গ্রামের নিরাপরাধ মানুষের ঘরে চলছে লুটপাট। পরিবার পরিজন নিয়ে একপ্রকার চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে সোনারপাড়ার মানুষ। সোনারপাড়ার মানুষ স্কুলের বিপক্ষে নয়। খেলার মাঠে এলাকাবাসী কোন বাড়িঘর করবে না। মাঠটি জনস্বার্থে ব্যবহার করা হয়। রোহিঙ্গারা খেলার মাঠ পেলে আমরা পাবো না কেন? বিষয়টি নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করে এলাকাবাসী।

শনিবার (০৮ মে) বিকালে শহরের অভিজাত এক হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সোনারপাড়ার এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্থানীয় শামসুল আলম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জেলার ঐতিহাসিক খেলার মাঠের মধ্যে উখিয়া উপজেলার সোনারপাড়া মাঠ অন্যতম। আশির দশক থেকে শুরু করে আজ অবদি এই মাঠ ক্রীড়া চর্চা, জানাজাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। এই মাঠের জমি মূলতঃ বনবিভাগের। এই মাঠ দিয়ে প্রতিদিন মসজিদ, মাদ্রাসা, হেফজখানা ও স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাসহ স্থানীয়রা যাতায়াত করেন। কিন্তু স্কুলের জন্য নতুন একটি ভবন বরাদ্দ হয়েছে। সেই ভবনের জন্য জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে মাঠের দক্ষিণ পাশে বিশাল অংশে। সেই জমির মালিকানা নিয়ে প্রায় ৫টি পক্ষের দেখা মিলেছে। ২০০১ সালের পর থেকে চারপাশে বহুতল ভবন হওয়ায় ঐতিহ্যের খেলার মাঠ অনেকটা সংকুচিত হয়ে যায়। ওই সময় স্কুল কতৃর্পক্ষের সাথে এলাকাবাসীর মাঝে মাঠে আর কোন ভবন নির্মাণ হবে না বলে চুক্তিও সম্পাদিত হয়।

সেই জমিতে বেশকিছু মানুষের বসতি ছিলো। পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে তারা ওইসব জমি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্রে চলে যায়। স্কুলের উত্তর এবং পশ্চিমে দ্বিতল ভবন দৃশ্যমান এমনকি পশ্চিমে ২০১৪ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে চারতলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট একতলা একটি ভবন করা আছে। যেখানে প্রয়োজন হলে আরো ৩ তলা পর্যন্ত অনায়াসে ভবনের পরিধি বাড়ানো যাবে।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও জানান, এই ঐতিহ্যবাহী মাঠ রক্ষায় গত ৭—০৩—২০২১ইং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, প্রধান বন সংরক্ষক, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ, উখিয়া নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করেন দেশের পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ। কিন্তু তবুও স্কুলের টাকা আত্মসাত করার জন্য একটি সিন্ডিকেট এবং প্রশাসনের কয়েকন কর্তা ব্যক্তি কি উদ্দেশ্যে মাঠে ভবন করার জন্য প্রয়াস চালাচ্ছে যা উদ্বেগজনক।

গত ০২ মে শনিবার সকাল দশটায় খেলার মাঠের দক্ষিণ পাশে মসজিদ ও মাদরাসা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তায় হঠাৎ একদল ইঞ্জিনিয়ার, ঠিকাদার, স্কুলের পক্ষে নাসির উদ্দিন, মিলন কুমার বড়ুয়া, শামশুল আলম ভূলু, আজিজুল হক প্রকাশ কালা আজিজ মাস্টার, খাইরুল আমিন প্রকাশ নুর আলীর খাইরু, তহসিল অফিসের ওমেদার রাসেল প্রকাশ ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল, আব্দুল মোস্তাফা, মোঃ ফরহাদ প্রকাশ পট হোসেনের ছেলে ফরহাদ, সঈদুল হক প্রকাশ ফটোস্ট্যাট সঈদুলসহ প্রতিষ্ঠানের বাইরের শতাধিক ভাড়াটিয়া লোক নিয়ে খুঁটি দেয়ার চেষ্টা করে। এমন সময় এলাকার লোকজন উপস্থিত হয়ে তাদের নিকট জানতে চাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেন আমরা মাঠে ভবন করবো। তখন এলাকার লোকজন বললো যেহেতু ইউএনও প্রথমে বিষয়টি নিয়ে একবার মিটিং করে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সার্ভে করবে। সেখানে আমাদের ফাইনাল রিপোর্টটা কি হলো তা না জানিয়ে জোর পূর্বক মাঠের চলাচলের পথে ভবনের কাজ শুরু করার চেষ্টা চালায়। তখন পরিবেশ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিলো। কোন রকম মারামারি বা হট্টগোল, সংঘর্ষের মতো কিছুই হয়নি। দুপুর ১২টা তখন আবার এসিল্যান্ড আমিমুল এহসান খান তার গাড়ি নিয়ে সোনারপাড়া স্কুলের অফিসের পাশে দাঁড়ায়। এরপরে আসেন ইউএনও নেজাম উদ্দিন নেজাম। তিনি এসে আমাদেরকে হাতে ইশারা করে তার নিকটে ডেকে নিলেন। তখন তিনি বললেন এইখানে বাঁধা দিলেন কেন? তখন এলাকার লোকজন যথেষ্ট কাগজপত্র ইউএনওকে দেখানোর চেষ্টা করে মাঠের স্বপক্ষে। কিন্ত তিনি শুধু ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ও নাসির উদ্দিনের কথায় একাকার হয়ে এলাকাবাসীর কোন কথা শুনতে চাইনা। উল্টো আমাদের ২—৩ জনকে ধরে নিয়ে আটক করতে চাইলে এলাকার লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তখন পুলিশ জনগণের উপর লাঠিচার্জ ও গুলি চালায়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। অথচ এই গ্রামবাসী ভবনের জন্য জায়গা করে দিয়েছিলো! ১৫০ টাকা দামের স্টাম্পে লিখিত ২০০১ সালের চুক্তিপত্র ইউএনও নিজেই দেখেছিলো! আজ তারা এলাকাবাসী সবাই হয়ে গেলো অপরাধী। এ ঘটনায় এলাকাবাসী বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দিয়ে নারী—শিশুদের হয়রানী করা হচ্ছে।

এলাকার লোকজন কখনো বলেনি ভবন হবে না। তারা বারবার বলেছে মাঠ ঠিক রেখে ভবন নির্মাণ করা হোক। ভবনটা তো এলাকার জন্য করছেন। তবে বাঁধাটা কেন। দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে বিষয়টি সন্তোষজনক সমাধানের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে সোনারপাড়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।