মাহফুজ আনাম
পশ্চিমবঙ্গের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে উদযাপন করার মতো তিনটি বিষয় রয়েছে, আর চিন্তিত হবার মতো একটি। উৎসব করার মতো কারণগুলো হলো: ক. মানুষ তাদের মত প্রকাশ করতে পেরেছে, এবং সে পর্যন্ত গণতন্ত্র ঠিকমতো কাজ করেছে। খ. ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি পরাভূত হয়েছে, কিন্তু সেটিও কোনোরকমে। গ. একজন নতুন নারী নেত্রীর আবির্ভাব ঘটেছে, যার একই সঙ্গে রয়েছে কারিশমা, মানসিক দৃঢ়তা, তীব্র প্রাণশক্তি, লড়াকু সত্ত্বা, নিজের প্রতি বিশ্বাস ও ব্যক্তিগত সততা, যা একটি পুরো প্রজন্মের তরুণ নেতাদেরকে উদ্দীপিত করতে পারে, যারা ভারতকে এ যুগের ভ্রষ্ট রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে পারে এবং একই সঙ্গে এ অঞ্চলের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে।

পাশের দেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের চর্চা হতে দেখার ব্যাপারটি বেশ সন্তোষজনক, বিশেষ করে যেখানে আমাদের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষের ব্যক্তিগত মতপ্রকাশে উচ্চ পর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষীয়মাণ স্বাধীনতা দেখতে পাচ্ছি। একাধারে সরকারগুলো আরও বেশি ক্ষমতাধর হচ্ছে, জনগণের টাকা ক্ষমতাসীনরা তাদের ব্যক্তিগত ও দলগত স্বার্থে আত্মসাৎ করে চলেছে, নতুন সব প্রযুক্তি সরকারগুলোকে তাদের দেশের নাগরিকদের নজরদারিতে রাখতে সহায়তা করছে, তারা তাদের চিন্তাভাবনা ও মতামতকে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী প্রভাবিত করছে, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে, এবং যেকোনো সমালোচনাকে শাস্তি দিচ্ছে কিংবা সমালোচককেই বিলীন করে দিচ্ছে- এসব মিলিয়ে বলা যায় যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই পরিবেশের মাঝে যখন আমরা দেখতে পাই নারী নেতৃত্বাধীন একটি প্রাদেশিক দল দানব সদৃশ, অসীম তহবিল ও পেশী শক্তিতে বলিয়ান, বিদ্বেষ ও বিভাজনের রাজনীতির চর্চাকারী একটি দলকে পরাজিত করেছে, এবং তা গণতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার, নির্বাচনের মাধ্যমে, তখন তা নিঃসন্দেহে যেকোনো গণতন্ত্রকামী মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতা এনে দেয়।

পশ্চিমবঙ্গে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পরাস্ত হবার ব্যাপারটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য একটি শুভ লক্ষণ। পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া শিবিরের বিজয় হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুতর প্রতিক্রিয়া হতো। এটি আমাদের দেশের মৌলবাদীদের উজ্জীবিত করে তুলত। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাসীরা সীমানার ওপারের ঘটনাগুলোকে তাদের নিজেদের উপস্থিতি জাহির করার সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে ধরে নিতেন। বিজেপি যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে সমগ্র ভারত জুড়ে প্রচার করছে, এবং তাদের প্রতিবেশীদের দরজায় নিয়ে আসতে চাইছে, তা একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে আমাদেরকে সে দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে।

ধর্মনিরপেক্ষ বনাম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সামগ্রিক ইস্যুর পাশাপাশি, আমাদের বাংলাদেশের নাগরিকদের কিছু সুনির্দিষ্ট উদ্বেগ ছিল যা স্বাভাবিকভাবেই আমাদেরকে বিজেপির বিরুদ্ধে ঝুঁকতে শিখিয়েছে। প্রথমেই যে ঘটনাটির কথা বলতে হয়, তা আমাদের সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। অন্য কেউ নয়, স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি একই সঙ্গে ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপির) প্রধানও, বাংলাদেশকে চরম নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপন করেছিলেন তার এক বক্তব্যে। তার কথাগুলো ছিল অসম্মানজনক, দুর্বিনীত ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, সম্পূর্ণরূপে অসত্য। ভারত যে দেশকে তাদের সবচেয়ে কাছের এবং বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে বিবেচনা করে, তার কথাগুলো সে দেশের মানুষকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, সে ব্যাপারে তিনি বিন্দুমাত্রও ভাবেননি।

তিনি বাংলাদেশকে এমন একটি দেশ হিসেবে চিত্রিত করেন যে দেশ থেকে ক্ষুধার্ত মানুষ দলে দলে ভারতে চলে যায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে বিদ্রূপ করে মুসলমানদের তোষণকারী হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি কথাটি এমনভাবে বলেন, যাতে মনে হয় যেন এটি একটি অপরাধ, এবং তিনি যাদেরকে নিয়ে কথা বলছেন, তারা ভারতের নাগরিক নন। বাংলাদেশ এবং এদেশের মানুষ সম্পর্কে অমিত শাহের মনোভাব হলো, তিনি আমাদের ‘উইপোকা’ অভিহিত করেন? আমরা ভুলিনি যে তিনি তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা।

বিজেপির যেসকল নেতা-কর্মী পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন নির্বাচনের সময়ে, তাদের অন্যতম প্রধান নির্বাচনী কৌশল ছিল মুসলমানদের নিয়ে বিষোদগার করা, এবং সবাইকে এটা বোঝানো যে এ সম্প্রদায়ের সবাই একটি বিশাল আকারের অবৈধ অভিবাসী জনসংখ্যার অংশ। তাদের মতে, এই মানুষগুলো ভারতের জন্য বোঝা এবং তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া উচিত। এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স) এবং সিএএ (সিটিজেনশিপ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট, ২০১৯) নামের আইনগুলো এই নীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারের হাতকে শক্তিশালী করেছে, এবং আমরা আশঙ্কা করছিলাম যে বিজেপি জয়ী হলে তাৎক্ষণিকভাবে তারা এগুলোকে বাস্তবায়ন করবে।

উদযাপনের তৃতীয় কারণটি হচ্ছে একজন নতুন, ভারতীয় নেত্রীর উত্থানের ঘটনাটি, যার ব্যক্তিত্ব ও কারিশমা এখন যেকোনো জাতীয় পর্যায়ের নেতার সঙ্গে তুলনীয়, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে, যার রয়েছে ভোটারদের কাছে প্রবল আকর্ষণ। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী তার সেই আকর্ষণকে অনেকটাই ম্লান করেছে। যদি মোদি তার সাধারণ জীবনের কারণে ভালো ইমেজ পেয়ে থাকেন, তাহলে সেক্ষেত্রে মমতাও পিছিয়ে নেই। পরপর দুই মেয়াদে নির্বাচিত হবার পরও সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করে তিনি বাড়তি পয়েন্ট কামিয়েছেন। একটি সাম্প্রতিক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন যে তিনি সরকারি কোষাগার থেকে একটি পয়সাও নেন না। তিনি কোনো বেতন, যাতায়াত বা আবাসন ভাতা, কোনো সরকারি বাসভবন (তিনি তার পুরনো, ছোটখাটো ফ্ল্যাটে থাকেন) এবং কোনো গাড়ি (তিনি তার নিজস্ব মারুতি গাড়ি ব্যবহার করেন) নেন না। উড়োজাহাজে তিনি ইকোনমি ক্লাসে যাতায়াত করেন, হোটেল ও গেস্ট হাউজের ভাড়া নিজে দেন, এবং তিনি তার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত খরচ নির্বাহ করেন তার লেখা ৮৭টি বই থেকে পাওয়া রয়্যালটির টাকা দিয়ে, যার অনেকগুলোই তার দাবি অনুযায়ী সর্বাধিক বিক্রীত বই এর তালিকায় রয়েছে। এছাড়াও তিনি তার লেখা গানের বিভিন্ন সিডি থেকে টাকা পান। যেখানে শুধু ভারতে নয়, বরং এই পুরো অঞ্চলেই দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি একটি নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে, সেখানে এটি নিঃসন্দেহে একজন সৎ রাজনীতিবিদের জীবনের শক্তিশালী গল্প। তবে, দুঃখজনকভাবে তার দলের অন্য অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা-নেত্রীর ক্ষেত্রে এই কথাটি সমানভাবে বলা যায় না।

শুধুমাত্র নির্বাচনী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায়, মমতা ব্যানার্জী এটাই প্রমাণ করেছেন যে যদি একজন নেতা তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন এবং মানুষ যদি তার ওপর ভরসা রাখে, তাহলে টাকা, পেশী শক্তি, প্রশাসনিক সহায়তা, মিথ্যা এবং অতিরঞ্জিত প্রচারণা এবং ধর্মভিত্তিক ক্যাম্পেইন; সব বাধাকে পেরিয়েও জয়ী হওয়া যায়। এই নির্বাচনটি ছিল দুই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতার একটি চমৎকার উদাহরণ, যা শেষ পর্যন্ত দুজনের ব্যক্তিত্বের সংঘাতে পরিণত হয়েছিল। প্রতিযোগিতাটি যতটাই ব্যক্তিগত পর্যায়ে নেমে আসছিল, ততই উপকৃত হচ্ছিলেন মমতা, যিনি এককভাবে একটি বৃহৎ ও সর্বভারতীয় দলের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন; যে দলটির ছিল প্রয়োজনের চেয়েও বেশি অর্থ, যার নেপথ্যে ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, এবং যার সঙ্গে যোগ হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসা সুযোগসুবিধাগুলো।

তাহলে এ নির্বাচনের কোন ব্যাপারটি নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা করা উচিৎ?

মমতার বিজয়ের মাঝেই লুকিয়ে আছে আরেকটি বিজয়, যেটি গেরুয়া ঢেউকে সাময়িক ভাবে প্রতিহত করার স্বস্তির মাঝে চাপা পড়ে যাচ্ছে। সেটি হচ্ছে বিজেপির বিজয়। তারা ক্ষমতা দখল করতে না পারলেও সে পথে অনেকদূর এগিয়েছে। তারা বিধানসভায় তাদের উপস্থিতি অনেকাংশে বাড়াতে পেরেছে। গত নির্বাচনের তিনটি আসন থেকে বেড়ে এবার তাদের আসন সংখ্যা হয়েছে ৭৭। যেকোনো মাপকাঠিতে এটিকে একটি উল্লেখযোগ্য বিজয় হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু যেহেতু বিজেপি নিজেদের জন্য ২০০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিল, এবং সরকার গঠনের বড়সড় আওয়াজ তুলেছিল, তাই তাদের সাফল্য বড় হলেও সেটিকে একেবারে ভিন্নভাবে দেখানো হচ্ছে, যা বিজয়ীদের মনে একটি ভ্রান্ত স্বস্তি তৈরি করছে। এটি খুবই সম্ভব যে আরএসএস ও বিজেপির প্রকৃত নীতিনির্ধারকরা খুব ভালো করেই জানতেন যে ২০২১ সালে ক্ষমতা দখল করা অসম্ভব হবে, এবং সে কারণে তারা ২০২৬ এর নির্বাচনকে মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত হিসেবে বিবেচনা করছেন, এবং একই সঙ্গে এবারের নির্বাচনকে মহড়া হিসেবে দেখছেন। আপাতদৃষ্টিতে এটিকে পরাজয় মনে হলেও, আগামীতে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছুতে রূপান্তরিত হতে পারে, এবং এ ধরনের ঘটনার ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত আছে, যা আমাদেরকে এ ব্যাপারে ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

২০০৪ সালে যখন বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স (এনডিএ) সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ এলায়েন্স (ইউপিএ) এর কাছে পরাজিত হলো, তখন অনেকেই তা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক শক্তির বিজয় হিসেবে দেখেছিলেন। আবার যখন ২০০৯ সালে ইউপিএ জোট পুনর্নির্বাচিত হলো, তখন সবাই এটাকে ভারতে কখনো ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি সফল হবে না এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সংবিধানে যে সকল আদর্শের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা অবশেষে সাধারণ ভারতবাসী তার হৃদয়ে ও মননে ধারণ করতে পেরেছে, এবং আধুনিক ভারতে আচ্ছন্নতাবাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই —এই মতবাদের স্বপক্ষে বাড়তি প্রমাণ হিসেবে ধরে নেন।

২০১৪ সালের নির্বাচন আগের সব ফলাফল উল্টে দেয় এবং ২০১৯ সালে যখন এনডিএ ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে পুনরায় নির্বাচিত হলো, তা সব অসাম্প্রদায়িক মানুষকে হতবাক করে দিলো এবং বিজেপিকে বর্তমান ভারতীয় রাজনৈতিক মঞ্চের একেবারে কেন্দ্রে নিয়ে এলো। অনেকের মতে, তারা দীর্ঘদিন সেখানেই থাকবে।

তাহলে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয় কি সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতি এক বড় আকারের প্রত্যাখ্যান, নাকি এটি শুধু আগের মত এনডিএর হাতে ইউপিএর পরাজয়ের পূর্বাভাষ? পশ্চিমবঙ্গের এবারের নির্বাচনের ফলাফল হয়তো ২০১৪ সালে কেন্দ্রে যা ঘটেছিল, তারই পুনরাবৃত্তির বীজ বপন করল।

পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতে কোন দল ক্ষমতায় এলো, তা আমাদের, বাংলাদেশিদের জন্য কেন চিন্তিত হবার মতো বিষয়? আপাতদৃষ্টিতে, এতে আমাদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আপাতদৃষ্টিতে যা দেখা যায়, বাস্তবে তার চেয়েও ব্যাপারটির আরও অনেক বেশি গভীরতা রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচন এবং তার পরাজয় কি আমাদেরকে প্রভাবিত করেনি? ট্রাম্প এবং তার শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী রাজনীতি বিদায় নেওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সমগ্র পৃথিবী কি এখন আরও ভালো অবস্থায় নেই? আমরা চিন্তিত, কারণ বিজেপি এবং সঙ্গে আরএসএস এবং তাদের মতো একই ধরনের আরও কিছু গোষ্ঠী শুধু রাজনৈতিক দলই না, তারা এর চেয়েও বেশি কিছু। সাধারণত রাজনৈতিক দলগুলো ভোট চায়। কিন্তু এই ধর্মভিত্তিক দলগুলো (আমাদের দেশেরগুলোসহ) শুধু ভোটই চায় না, তারা আমাদের মন, আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান, আমাদের আবেগের জায়গা ও সংস্কৃতির জায়গা- অর্থাৎ আমাদের সমগ্র সত্ত্বাকেই চেয়ে বসে।

প্রশান্ত কিশোর একজন নির্বাচনী কৌশলবিদ, যিনি মমতার অসাধারণ নির্বাচনী ফলাফলের পেছনে কাজ করে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছেন সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে বলেন, ‘বিজেপির মতো দলগুলো শুধু আপনার ভোটই চায় না। তারা চায় আপনার চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে। তারা চায় আপনি কী পড়বেন, কী খাবেন, কী শুনবেন, কী দেখবেন এবং কীভাবে জীবন যাপন করবেন, তার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে। তারা সবকিছুতে নাক গলাতে চায়। এটা সমস্যাপ্রদ।’

যুক্তরাষ্ট্রের আগের নির্বাচনের মতো, আমরা পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের অন্য চার রাজ্যের নির্বাচনগুলোকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কিছুটা ঈর্ষান্বিত না হয়ে পারিনি। অন্যত্র যখন দেখি শক্তিশালী নির্বাচন, স্বতঃস্ফূর্ত প্রচারণা এবং অবশেষে, ফলাফলে জনমতের সুষ্ঠু প্রতিফলন, তখন না ভেবে পারি না যে, আমাদের দেশে কী হয়েছে। কারণ, আমাদের দেশেও এরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, যা সময়ে সময়ে প্রমাণ করেছে যে আমাদের দেশের মানুষ ‘সার্বভৌম’, এবং তাদের ইচ্ছাতেই নির্ধারিত হয় কারা তাদের দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন। হঠাৎ কী ঘটল?

কবে আমরা আমাদের নির্বাচনগুলো ফিরে পাব?