সিবিএন ডেস্ক:
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী ভারতের অন্যতম এ রাজ্যে সরকার গঠন করলো মমতার দল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বুধবার (৫ মে) শপথ নেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে মমতার দলের বিজয়কে গণতন্ত্রের বিজয় বলে মনে করছেন রাংলাদেশের রাজনীতিকরা। এ নির্বাচনে পশ্চিমবাংলার জনগণ সাম্প্রদায়িকতার অপচেষ্টাকে প্রতিহত করে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষে রায় দিয়েছেন বলেও মনে করেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা।

ভারতের একটি রাজ্যের নির্বাচনে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না বলেও তারা জানান। তবে, একই ভাষাভাষির হওয়ার দুই বাংলার জনগণের মধ্যে এই ফলের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধনটা হবে আরও দৃঢ়।

বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া পৃথক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব অভিমত ব্যক্ত করেন।

বিভাজনের রাজনীতির পতন
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন বিভাজনের রাজনীতির পরাজয় ঘটেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। বাম ঘরানার এই প্রবীন রাজনীতিক বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, পশ্চিমবাংলায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি লক্ষ্য করেছিলাম। সেটার পরাজয় হয়েছে। এটা স্বস্তির কারণ। সেখানে বিভাজনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হলে আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতো। বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়তো।

তিনি বলেন, নির্বাচনে কে জিতল কে হারল সেটা বিবেচ্য নয়। এই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আমরা উল্লসিত নই, হতাশাগ্রস্ত ও নই। জয়-পরাজয়ের বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গবাসী বিবেচনা করবে। তবে আমাদের স্বস্তির বিষয় এই যে, এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভাজনের রাজনীতির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনমত
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের ফলাফল থেকে একটা বিষয় মনে হয়েছে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলো তাদের আঞ্চলিক স্বকীয়তা, সাংস্কৃতি ঐহিত্য ও স্বাতন্ত্র ধরে রাখতে চায়। এই নির্বাচনেও জনগণ সেটার পক্ষে মত দিয়েছে। এই নির্বাচনে কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও জনমতের প্রমাণ মেলে।

ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ইনু বলেন, এ নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ দেখিয়ে দিয়েছে সাম্প্রদায়িক প্রচারণা কিছু উত্তেজনা তৈরি করতে পারে ঠিকই, কিন্তু শেষবিচারে জনগণ অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষেই অবস্থান নেয়।

কোনও প্রদেশের নির্বাচনে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় কোনও প্রভাব বিস্তার করবে না বলে মনে করেন জাসদ সভাপতি। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষে দেওয়া এই রায় দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে।

বাংলাদেশে প্রভাব পড়বে না
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, নির্বাচনটি ওদের জনগণের রায়। প্রত্যেকটি দেশের ট্র্যাডিশন হচ্ছে নির্বাচনে যে জিতবেন তাকে অভিনন্দন জানানো। বাংলাদেশ থেকে সেটাই জানানো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি ছিল একটি রাজ্যের নির্বাচন। আর একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সম্পর্ক হয় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। তবে, পশ্চিমবঙ্গ আমাদের সীমান্তবর্তী এবং আমরা একই ভাষাভাষী। তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক আগেও ছিল। এখনও থাকবে। এই সম্পর্কে নতুন করে কিছু প্রভাব ফেলবে না।

‘মমতাকে সোচ্চার দেখতে চাই’
পশ্চিবঙ্গে টানা তৃতীয়বারের মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজয়ী হওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনও অভিনন্দন জানানো না হলেও দলের নেতারা তার বিজয়কে অভিবাদন জানিয়েছেন। বিএনপির ফরেন রিলেশন্স কমিটির অন্যতম সদস্য, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ মমতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অবহেলা নিয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত মমতার।

গণতন্ত্রের বিজয়
জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও পশ্চিমবাংলার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। অনেক অসহনীয় পরিবেশের মধ্যেও মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আমরা মনে করি এই নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। জনগণের বিজয় হয়েছে।

এ নির্বাচনে বাংলাদেশের ওপর প্রভাব পড়বে কী না তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয় উল্লেখ করে বাবলু বলেন, পশ্চিমবাংলায় আগের সরকারই তো ক্ষমতায় এসেছে। তাই এখন কিছু মন্তব্য করা সম্ভব নয়। নিশ্চয়ই এই সরকার সবার আগে কোভিড নিয়ন্ত্রণেই জোর দেবে।

সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করেছে তারা
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে জনগণ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করেছেন। আমরাও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ফলে আমি মনে করি, পশ্চিমবাংলার নির্বাচন বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক শক্তিতে প্রতিহত করার পেছনে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।