বাসস:
মেডিকেল শিক্ষা খাতে আরও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২১ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সকালে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনা এবং অপারেশন গাইডলাইনস ২০১১ এবং বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং অপারেশন গাইডলাইনস ২০০৯ এর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, একটি মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজের কমপক্ষে ৫০ জন ছাত্র থাকতে হবে এবং প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী তার শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১০ হতে হবে।

পাশাপাশি সচিব বলেন, একটি মেডিকেল কলেজের যে কোনও মহানগরীতে কমপক্ষে দুই একর জমি থাকতে হবে এবং ডেন্টাল কলেজের জমি প্রয়োজন এক একর।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মহানগর অঞ্চলের বাইরের মেডিকেল কলেজের জন্য জমি প্রয়োজন চার একর এবং ডেন্টাল কলেজের জন্য এটি দুই একর হবে। যে কোনও মেডিকেল কলেজকে যে কোনও বাণিজ্যিক ব্যাংকে সংরক্ষিত তহবিল হিসাবে তিন কোটি টাকা জমা দিতে হবে এবং এটি ডেন্টাল কলেজের জন্য দুই কোটি টাকা হবে।

একাডেমিক উদ্দেশ্যে যে কোনও মেডিকেল কলেজে প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী এক লাখ বর্গফুট জায়গা এবং হাসপাতালের উদ্দেশ্যে আরও এক লাখ বর্গফুট জায়গা থাকতে হবে। এ ছাড়াও ডেন্টাল কলেজ এবং হাসপাতালের জন্য প্রতিটি স্থানের পরিমাণ হবে ৫০ হাজার বর্গফুট।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই কলেজ এবং হাসপাতাল বিভিন্ন সময়ে তদারকি করবে। মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ যে কোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুমোদিত হতে হবে এবং মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের একাডেমিক ফি সরকার নির্ধারণ করবে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বা ডেন্টাল কলেজ কর্তৃপক্ষকে সঠিক বৈজ্ঞানিক উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।

আইন লঙ্ঘনে শাস্তি সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

দেশে বর্তমানে ৭০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং ২৬টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ রয়েছে।

নতুন যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে এবং আইনকে যুগোপযোগীকরণে মন্ত্রিসভা টেরিটরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস (সংশোধন) আইন, ২০২১-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৭৪ সালে প্রণীত পুরাতন আইনটিকে নতুন করে সংশোধিত আকারে উপস্থাপিত করা হয়েছে।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত সংশোধিত আইনে ২২টি নতুন সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নতুন আইনে অঞ্চল, উচ্চ সমুদ্র অঞ্চল, নীল অর্থনীতি, সমুদ্র সহযোগিতা, গবেষণা এবং সমুদ্র দূষণের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ গ্যাস, তেল ও খনিজসম্পদ করপোরেশন আইন-২০২১ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিসভা বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২১ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনও এদিন মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত হয়।

গত বছর একই সময়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ছিল ৬৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এবার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত বছরের চেয়ে ১৬ দশমিক ০১ শতাংশ কমেছে।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার পাঁচটি বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৪১টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয় ২০টি। ২১টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৪৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

অপরদিকে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১০টি মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওই সময়ে সিদ্ধান্ত হয় ৭১টি। এর মধ্যে ৪৬টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন ছিল ২৫টি। বাস্তবায়নের হার ছিল ৬৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

সচিব জানান, গত ৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে একটি নীতি বা কর্মকৌশল এবং একটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছে। এ সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ছয়টি।

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে চারটি নীতি বা কর্মকৌশল এবং চারটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়। এ সময়ে সংসদে সাতটি আইন পাস হয় বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।