বার্তা পরিবেশকঃ
অভিযুক্ত একটি ফেসবুক আইডিতে নিজে কোন লাইক, কমেন্ট না দিয়েও কক্সবাজার সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় আসামি করার অভিযোগ উঠেছে।
নিজেদের নির্দোষ দাবি করে মামলা থেকে অব্যাহতি ও থানার ওসির প্রত্যাহার চেয়েছেন মামলার এজাহারভুক্ত তিনজন আসামি।
মামলাটিতে ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে বলেও দাবি তাদের। মামলা রেকর্ড করাতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমানের যোগসাজশ আছে দাবি করেছেন আসামিরা।
এসব বিষয়ে ২ মে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনজন ভুক্তভোগি এম.এ মোনাফ সিকদার, ওবাইদুল হোসেন ও গুরা মিয়া।
নিজেদের নির্দোষ দাবি করে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন তারা।
যুব লীগ নেতা এম.এ মোনাফ সিকদার জেলা ছাত্র লীগের সাবেক সহসভাপতি। ওবাইদুল হোসেন মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের জেলা সিনিয়র সহসভাপতি। গুরা মিয়া শহরের গাড়ির মাঠ এলাকার ব্যবসায়ী।
কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির সম্মেলন কক্ষে লিখিত বক্তব্য এম.এ মোনাফ সিকদার বলেন, আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মী। রাজনীতির পাশাপাশি সুনামের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সামাজিক সেবামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছি।
গত ২৮ এপ্রিল কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মুনির উল গীয়াস জি.আর-২৭৭/২০২১ নং মামলা রেকর্ড করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই মোঃ দস্তগীর হোসেন। মামলার প্রধান আসামী ‘শফিক খাঁন’ নামে একটি ফেইসবুক আইডি।
ওই আইডি থেকে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমানের নামে বিভিন্ন মানহানিকর ও অনৈতিক পোষ্ট প্রচার করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ আছে।
ওই আইডির পোষ্টের সাথে আমাদের কোন ধরণের সম্পৃক্ততা নাই। এমন কি পোষ্টে লাইক, কমেন্ট কিংবা শেয়ারও করি নাই। ওই বিতর্কিত ফেইসবুক আইডি কে চালায় তাও জানি না।
মোনাফ সিকদারের অভিযোগ, ওসি শেখ মুনির উল গিয়াস ও তদন্তকারীজ কর্মকর্তা এসআই মোঃ দস্তগীর হোসেন মেয়র মুজিবুর রহমানের যোগসাজসে প্রতিপক্ষের নিকট হতে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের আসামি করেছেন।
প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, গত ১৩ এপ্রিল দুপুর ১ টায় কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোনস্থ আমাদের আত্মীয় ও দুয়ান ছিদ্দিকের মালিকানাধীন “হোটেল স্বপ্ন রিসোর্ট” পুলিশের সাথে আঁতাত করে জবর দখলের চেষ্টা চালায় ইয়াবা মামলার আসামী মোঃ নাসির, যিনি মেয়র মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত।
ঘটনার বিষয়ে মোনাফ সিকদার বলেন, রিদুয়ান ছিদ্দিকের প্রতি জুলুমের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করি। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে হোটেল মালিক রিদুয়ান ছিদ্দিক জাতীয় সেবা ৯৯৯ এ ফোন করলে থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যেতে গড়িমসি করে। প্রায় ১ ঘন্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নাসির, সবুজসহ ৩জনকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়। এতে থানার ওসি শেখ মুনির উল গীয়াস ও মেয়র মুজিবুর রহমানকে দায়ী করেছেন মোনাফ সিকদার।
তার দাবি, ওসি শেখ মুনির উল গীয়াসের নির্দেশে ঘটনাস্থল থেকে হাতে নাতে ধৃত ৩ জন দুষ্কৃতিকারীকে ছেড়ে দেয় পুলিশ এবং তাদের কথামত বিরোধীয় রিসোর্টে তালা মেরে চাবি ওসির নিকট জমা দেয়। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে হোটেল মালিক রিদুয়ান ছিদিকের পক্ষে ১৮ জনকে আসামি করে এজাহার জমা দিলে ওসি তা গ্রহণ করেন নি। বরং নাসির গং থেকে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলমকে বাদি বানিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, শেখ মুনির উল গীয়াস কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ওসি যোগদানের পর থেকেই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। কক্সবাজার সদর মডেল থানা দালালের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। মোটা অংকের উৎকোচের মাধ্যমে অসহায় মানুষের জায়গা-জমি জবর দখল করে দিয়েছেন। থানায় অনেক মিথ্যা মামলা হয়েছে। যে কারণে ভুক্তভোগি মানুষের ত্রাহিত্রাহি অবস্থা বলে দাবি যুব লীগ নেতা মোনাফ সিকদারের।
এ মামলার সঠিক তদন্ত নিয়ে সন্দিহান আসামিরা।
তাই মামলাটি সদর থানা থেকে সিআইডি, পিবিআই, ডিবি কিংবা যে কোন নিরপেক্ষ এজেন্সিকে তদন্তভার দেয়ার দাবি আসামিদের।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজি, ডিআইজি, পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সেই সঙ্গে ওসি শেখ মুনির উল গীয়াসের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত এবং অনতিবিলম্বে তাকে প্রত্যাহারের দাবি তাদের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনির উল গীয়াস বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই মামলাটি এন্ট্রি করা হয়েছে। তবু যে কেউ অভিযোগ করতে পারে। তদন্তে সত্য মিথ্যা প্রমাণিত হবে।
টাকার বিনিময়ে মামলা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, দায়িত্ব নিয়েছি বিগত সাত মাস হলো। এমন দৃষ্টান্ত কেউ দেখাতে পারবে না। আমরা যথেষ্ট স্বচ্ছতার সাথে কাজ করছি। তিনি বলেন, আপনারাও খোঁজ নিয়ে দেখেন, এমন কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পান কিনা।
অভিযোগ অস্বীকার করে সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, মামলাটি পৌরসভার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাদি হয়ে করেছেন। এতে আমার কোন হাত নেই। মেয়রসহ সংশ্লিষ্টটা সঠিক বলতে পারবেন কেন কাকে আসামি করা হলো। এরপরও তদন্তে কারো সম্পৃক্ততা না পেলে অভিযোগপত্র থেকে বাদ যাবে।
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমানের মুঠোফোনে কল করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ না করায় এসএমএসে দেয়া হয়। তাও রিপ্লে না আসায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।