সিবিএন ডেস্ক:
সাতকানিয়ায় আধিপত্য বিস্তারে গভীর রাতে ফিল্মি স্টাইলে যুবলীগ নেতার বাড়িতে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়েছে প্রতিপক্ষ। ঘরে ঢুকেই তারা ৪০ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেন হামলার শিকার ওই যুবলীগ নেতার পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় মহিলাসহ ওই পরিবারের ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।

আহতরা হলেন— মাহাবুবুল আলম (৫৯), মমতাজ বেগম (৫১) ও মো. ঈসমাইল হোসেন (৩০)। আহতরা যুবলীগ নেতার মা, বাবা ও ভাই বলে জানা গেছে। আহতদের উদ্ধার করে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার এওচিয়ায় ইউনিয়নের ভুত পাড়া এলাকায় ঘটনা ঘটে। আজ শুক্রবার সকালে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাহসিন আরফাত জিহান (২২) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মো. আবু ছালেহ’র মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ইতোমধ্যে বহুবার দফায় দফায় সংঘর্ষও হয়েছে। গত বুধবার ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের অনুসারী মো. আরিফ, মো. মানিক প্রকাশ কালা মানিক, আবু বক্কর, মো. তৌহিদ ও মো. মানিক প্রকাশ ছোট মানিকসহ আরও ১০-১২ জন ভুত পাড়ায় গিয়ে এওচিয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানকে স্থানীয় বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মারতে যান। সেখানে মিজানুর রহমানকে না পেয়ে তার ভাই রেজাউল করিমকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে এবং দোকানে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এ বিষয়ে রেজাউল করিম হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এতে হামলাকারীরা মিজান ও তার ভাই রেজাউলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমানের বাড়িতে গুলি বর্ষণ করেছে।

সাতকানিয়া থানা সূত্রে জানা যায়, যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমানের বাড়িতে হামলার ঘটনায় জড়িতরা শুক্রবার পশ্চিম গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় ইউপি সদস্য আবু তাহেরের বাড়িতে অবস্থান করছে— এমন সংবাদ পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে আলী চাঁন পাড়ার আবু জাফরের পুত্র তাহসিন আরাফাত ওরফে জিহানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এওচিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপি এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি আবু ছালেহ’র পক্ষে থাকাটা আমার অপরাধ। এজন্য ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে মারার জন্য খুঁজতে থাকে। আমাকে না পেয়ে ছোট ভাইকে মারধর এবং দোকানে ভাংচুর চালায়। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ এবং ঘটনার সাথে জড়িত কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে তাদের অভিভাবকদের জানানোর কারণে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে রাতে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।’

এওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘মিজানের সাথে আমার কোন ধরনের বিরোধ নাই। ঘটনার সময় আমি নিজ বাড়িতেই ছিলাম। কে বা কারা মিজানের বাড়িতে গুলি করছে— এই খবর পেয়ে আমি ওসি সাহেবকে ফোন দিচ্ছিলাম। ঠিক তখনই ওসি সাহেব আমার মোবাইলে ফোন করেন। আমি উনাকে ঘটনার বিষয়ে বলেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আবু ছালেহ’র কিছু লোক ইউপি সদস্য আবু তাহেরকে লোকজনের সামনে চড়-থাপ্পড় মেরেছে। এ ঘটনায় তাহের বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে। আমার মনে হচ্ছে, ওই ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য স্বার্থন্বেষী মহল এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মো. আবু ছালেহ জানান, ‘ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের নেতৃত্বেই যুবলীগ নেতা মিজানের বাড়িতে গুলি বর্ষণ করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে মিজান স্পষ্টভাবে দেখেছে।’

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রস্তুতি চলছে।’ -সিভয়েস