অনলাইন ডেস্ক: সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পরিবারের লিখিত অভিযোগের পর আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সরকার দলীয় হুইপ ও চট্টগ্রামের সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুন চৌধুরীর সঙ্গে মুনিয়ার কিছু কথোপকথনের স্ক্রিনশটের সূত্র ধরে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে একটি সূত্র তার কাছে কিছু তথ্য জানতে চেয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে শারুন গণমাধ্যমকে ওই সূত্রের ব্যাপারে কিছু না বললেও এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, তার কাছে গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে একটি সূত্র মুনিয়ার সঙ্গে কথোপকথনের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে জানতে চেয়েছে, তিনি মোসারাতকে চেনেন কি না? শারুন জানিয়েছেন, মুনিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। গত বছর সে ফেসবুকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে।

তবে ফেসবুকে তার সঙ্গে কথোপকথনের যে স্ক্রিনশট ছড়ানো হচ্ছে সেগুলো মিথ্যা দাবি করে শারুন বলেন, সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে এই কথোপকথনগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার।

গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ চন্দ্র চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে জানান, ওই ফ্ল্যাটে এক শিল্পপতির যাতায়াত ছিল। কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন, তদন্ত করে দেখবে পুলিশ।

এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার (২৮ এপ্রিল) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গুলশানে তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ। কারও অপরাধ থাকলে তার শাস্তি হবে।

ছড়িয়ে পড়া কথোপকথনের স্ক্রিনশটে দেখা যায়, সেখানে মুনিয়া শারুনকে লেখেন, তিনি ‍ভালো নেই। এরপর লেখেন, ‘উনি তো আমাকে বিয়ে করবে না। কী করব আমি?’ জবাবে শারুন লেখেন, ‘‌আগেই বলেছিলাম, ওর কথা শুইনো না।’

অবশ্য এই কথোপকথনের কোথাও মুনিয়া ওই শিল্পপতির নাম উল্লেখ করেননি। ‘উনি’ বলে সম্বোধন করেছেন।

এই কথোপকথনের সত্যতা বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ চন্দ্র চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছাড়া এর সত্যতা সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এদিকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের ঘটনার এখনো কোনো কূল-কিনারা হয়নি। তাকে ধর্ষণ কিংবা বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে সুপারিশ করা হয়েছে সুরতহাল রিপোর্টে।

মুনিয়ার মৃত্যুর পর বুধবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম হোসেনের লেখা একটি সুরহতাল রিপোর্ট এসেছে সময় সংবাদের কাছে।

তাতে তিনি লিখেছেন, হত্যার আগে ভিকটিম ধর্ষিত হয়েছে কি না তা জানার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিংবা তাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল কি না তাও তদন্তের আওতায় আসার সুপারিশ করা হয়েছে।

সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, মুনিয়ার বয়স ২৩ বছর। গায়ের রং ফর্সা। লম্বা অনুমান ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। মাথার চুল লম্বা অনুমান ১২ ইঞ্চি। চুলের রং বাদামি। মুখমণ্ডল গোলাকার, নাক স্বাভাবিক, চোখ দুটি বন্ধ, জিহবা মুখ থেকে আধা ইঞ্চি বাহিরে, দাঁত দিয়ে কামড়ানো, দুইটি দাঁত দেখা যায়। জিহবা দিয়ে সামান্য লালা বের হয়েছে। গলার বামপাশে অর্ধচন্দ্রাকৃতি গভীর কালোদাগ রয়েছে। হাত দুটি শরীরের সঙ্গে লম্বালম্বি অর্ধমুষ্টি।

শামীম হোসেন বলেন, মৃতের বড়বোনের দ্বারা লাশ ওলটপালট করে বুক পেট ও পিঠ স্বাভাবিক দেখা যায়। মলদার স্বাভাবিক, যৌনাঙ্গে দিয়ে লালচে রঙের পদার্থ বের হতে দেখা যায়। দুই পা লম্বালম্বি, পায়ের আঙুল নিম্নমুখী।

এসআই শামীম হোসেন জানিয়েছেন, ভিকটিম ধর্ষিত হয়েছে কিনা, ধর্ষিত হলে ডিএনএস সংগ্রহ, ভিকটিমকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা এবং ভিকটিমের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিভাগীয় প্রধান ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বরাবর পাঠানো হয়েছে।
– সময়নিউজ