সিবিএন ডেস্ক:
মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার কোলচড়ি সস্তাল গ্রামের মোয়াজ্জেম দম্পতিকে হত্যার পর কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় আশরাফুল মোল্যা (৩৮)।

এ দম্পতি খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গোপালগঞ্জ এ রহস্য উদ্ঘাটন করেছে।

হত্যাকাণ্ডের শিকার দম্পতি হলেন কোলচড়ি সস্তাল গ্রামের মৃত মফেজ সরদারের ছেলে মোয়াজ্জেম সরদার (৫০) ও তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৪৫)।

গত ২২ এপ্রিল গোপালগঞ্জ পিবিআই নড়াইল জেলার সদর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আশরাফুল মোল্যাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আশরাফুল নড়াইল জেলার সদর উপজেলার বোড়ামারা গ্রামের আকবর আলী মোল্যার ছেলে।

পিবিআই গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, শুক্রবার ২৩ এপ্রিল আদালতে হাজির করলে আশরাফুল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। সেখানে তিনি হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণ ঘটনার বর্ণনা দেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কৃষিকাজ করার জন্য গত ২৮ মার্চ গৃহকর্তা মোয়াজ্জেম সরদার ফরিদপুরের শ্রমিকহাট থেকে আশরাফুল মোল্যা ও ভোলা রাও নামে দুই শ্রমিককে কোলচড়ি সস্তাল গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন।

গৃহকর্তা বাড়িতে স্ত্রী, কন্যা আন্তানুর (১৪) ও নুসরাতকে (৬) নিয়ে বসবাস করত। কামলা আশরাফুলের কুদৃষ্টি পড়ে আন্তানুর দিকে। কাজের ফাঁকে সে কিশোরী আন্তানুর (১৪) সঙ্গে গল্প করত। এভাবে তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করত। বিষয়টি গৃহকর্তা মোয়াজ্জেমের নজরে আসে। তিনি আশরাফুলকে আন্তানুর সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেন।

বিকৃতমনা আশরাফুল তার যৌন লালসা চরিতার্থ করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। মনে মনে আন্তানুরের বাবা-মাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। আশরাফুল পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গত ৫ এপ্রিল রাতে প্রথম গৃহকর্তা মোয়াজ্জেম সরদারকে কৌশলে বসতভিটা থেকে ২৫০ গজ দূরে নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পরে ওই কৌশলে মোয়াজ্জেমের স্ত্রী মাকসুদা বেগমকে ওই স্থানে নিয়ে একই গামছা গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে মধ্যরাতে সে গৃহকর্তার ঘরে প্রবেশ করে আন্তানুরকে কৌশলে ফুসলিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় মোয়াজ্জেম ও তার স্ত্রীর ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। তাকে গ্রেফতার করার সময় তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন দুটি উদ্ধার করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই গোপালগঞ্জের এসআই মো. আল আমিন শেখ বলেন, এ ঘটনায় ওই দম্পত্তির জামাতা এমরান সরদার বাদী হয়ে কালকিনি থানায় একটি নিখোঁজ মামলা করেন।

পরে ৯ এপ্রিল মোয়াজ্জেম দম্পতির লাশ পুলিশ উদ্ধার করে সুরাতহাল রিপোর্ট শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর মর্গে পাঠায়। পরে আমরা এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করি। প্রধান অভিযুক্ত আশরাফুলকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে আমরা এ হত্যকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছি।

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত আশরাফুল বিভিন্ন সময়ে নিজেকে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার ভুয়া পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিভাবকদের ফুসলিয়ে একাধিক নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।’

আশরাফুলের বিরুদ্ধে যশোর, নড়াইল ও রাজশাহীতে এ সংক্রান্ত ৫টি মামলা চলমান রয়েছে। বিকৃতমনা আশরাফুল তার যৌন লালসা চরিতার্থ করার জন্য মোয়াজ্জেম দম্পতিকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।