ইউসুফ আরমান

(বাকী অংশ)

নমরুদ বিভিন্ন রাজ্য হতে এত অধিক সৈন্য পরিমাণে নিয়ে এসে একত্রিত করল যে, তাদের তাঁবু খাটাতে প্রায় তিনশত ক্রোশ পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন হল।

হযরত ইব্রাহীম (আ) নমরুদের এরূপ সৈন্য-সামন্ত সমবেত এবং প্রস্তুত হবার পরও শেষবারের মত আরো একবার তাকে বললেন, নমরুদ! তুমি কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাচ্ছ, চিন্তা ভাবনা করে দেখেছ কি? যার নিকট তুমি ও আমি সকলেই মুখাপেক্ষী, যিনি আমাদের সকলেরই রুজির ব্যবস্থা করেন। যার ক্ষমতা এত অসীম ও প্রবল যে, ইচ্ছা করলে তিনি চোখের পলকে সারা পৃথিবী ধ্বংস করে দিতে পারেন। তার বিরুদ্ধে এরূপ জাঁকজমকের সাথে যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণ করা কি নির্বুদ্ধিতা, তা এখনও অনুধাবণ করে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন কর।

তার কথা শুনে পাপীষ্ঠ নমরুদ বলল, ইব্রাহীম! তুমি আমার এ সামান্য প্রস্তুতিতে ভয় পেয়েই বুঝি এসব কথার পুনরাবৃত্তি করছ? তোমাকে আমি এর আগে ও বলছি, আবার ও বলছি তুমি আমাকে এখনো তোমার খোদার শক্তির মিথ্যা ভীতি প্রদর্শন করো না। ওসব কথায় নমরুদ কখনো ভয় পাওয়ার লোক নয়। তোমার খোদার সৈন্য সংখ্যার নাকি কোন শেষ নেই। শক্তির কোন তুলনা নেই। আমি এবার তাই দেখে নিতে চাই। তুমি আমার সাথে আর ঐ এক কথা বার বার বলো না। ঐ কথা শুনলে আমার বিরক্তি ধরে যায়।

নমরুদের উক্তি শুনে আল্লাহর নবী হযরত ইব্রাহীম (আ:) এর মনে বড়ই ব্যথা লাগল। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তরফ হতে ওহীর মাধ্যমে জিজ্ঞেস করা হল, হে আমার দোস্ত! তুমি বল নমরুদের বিরুদ্ধে আমি কোন ধরণের সৈন্য পাঠিয়ে দেব?

তখন হযরত ইব্রাহীম (আ) আরজ করলেন, হে মাবুদ! নমরুদ যত বেশি বড়াই করুক না কেন তোমার সামান্য একটি বানীতেই তা ধ্বংস হতে পারে। আমি এ কামনা করি যে, তাকে একটি ক্ষুদ্র শক্তি দিয়েই নির্মূল করে শিক্ষা দেয়া দরকার। দুনিয়ার শক্তি যত বিরাট এবং প্রবলই হোক না কেন মহান মালিকের একদম সামান্য ও ক্ষুদ্রাণুক্ষুদ্র একটু শক্তি নিকটও তা একেবারে দূর্বল ও অসহায়। সে দৃষ্টিতে আমার ইচ্ছা, তুমি এক ঝাঁক ক্ষুদ্র মশা পাঠিয়ে নমরুদে সেনা-সামন্ত ধ্বংস করে দাও। আদেশ হল, হাঁ তাই হবে। আমি মশা বাহিনী দ্বারাই নমরুদের গর্ব শেষ করে দেব।

হযরত ইব্রাহীম (আ) এর কাছে জিজ্ঞেস করল নমরুদ, কি হে ইব্রাহীম! আমার সৈন্যবাহিনী তো বহু আগেই প্রস্তুত হযে আছে, তোমার খোদার সৈন্যবাহিনী তারা কোথায়?

হযরত ইব্রাহীম (আ) বললনে, ঐ যে, আমার খোদার সৈন্য বাহিনী ও এসে পড়েছে। আকশের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, ঐ যে আমার খোদার সৈন্য আসছে, তখন নমরুদ ও তার সেনাগণ আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল যে, একটা বিরাট ঘন কৃষ্ণবর্ণ মেঘ সারা আকাশ আচ্ছন্ন করে করে ফেলেছে। তারা মনে করল যে, এখনই মুষলধারে বৃষ্টিপাত আরম্ভ হবে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তাদের সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হল।

মশার দল এসেই নমরুদের প্রত্যেকটি সৈন্যের দেহে উড়ে পড়ল। তাদের মাথা, দেহ, নাক-চোখ, পেট-পিট-হাত-পাও কোন জায়গায় বাকী রাখল না। সারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মশা ছেয়ে ফেলল। এরা সর্বস্থানে এমন ভাবে দংশন করতে লাগল যে, তারা তাদের হাতে অস্ত্র ফেলে দিয়ে দু’হাতে মশা তাড়াতে ও দেহ চুলকাতে শুরু করে দিল। কারো কারো কর্ণ এবং নাসিকা পথে মশা ভিতরে প্রবেশ করে মাথার মগজ কাটতে লাগল। মশার সংখ্যা এত বেশি পরিমাণে ছিল যে, কোনক্রমেই কেউ তার শরীর মশা মুক্ত করতে পারেনি। এইভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই নমরুদেন প্রত্যেকটি সৈন্যের দেহের সমস্ত রক্ত ও মাংস এবং মাথার মগজসহ একেবারে শেষ করে ফেলল। সৈন্যগণ যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, সে সেখানেই একইভাবে দাঁড়িয়ে রইল। কারো নড়াচড়া করার মত শক্তি রইল না। দেখতে দেখতে সকলেই জীবন শেষ হয়ে গেল।

যুদ্ধের ময়দানে যখন এ বেশি অবস্থা তখন বাদশাহ নমরুদ একটু দূর হতে তার সৈন্যদের এ দূরাবস্থা দেখে ভয়ে  পলায়ন করে নিজের মহলে প্রবেশ করে তার বিবির কাছে বলতে শুরু করল যে, কোথা হতে অসংখ্য মশার ঝাঁক উড়ে আমার সকল সৈন্যের রক্ত-মাংস ও মগজ খেয়ে ফেলেছে। আমি এভাবে না আসলে সম্ভবত এতক্ষণ আমার প্রাণটিও শেষ হয়ে যেত। ঠিক সে মুহূর্তে একটি বড় মশা উড়ে এসে নমরুদের নাসিকার ছিদ্র দিয়ে মগজে প্রবেশ করে বার বার দংশন করতে লাগল। তাতে অস্থির হয়ে মহাপাপী নমরুদ উচ্চস্বরে চিৎকার আরম্ভ করলে। এ মারাত্মক অবস্থা হতে যে কিভাবে মুক্তি পাবে তার উপায় খুঁজে না পেয়ে বাদশাহ দিশেহারা হয়ে নিজের পায়ের জুতা খুলে নিজেই তা দ্বারা মাথায় আঘাত করতে লাগল। তখন মশা টি দংশন থেকে একটু বিরত থাকে। এতে নমরুদ কিছু টা আরাম বোধ করে।

তখন এভাবে একটু স্বস্তি এবং আরাম লাভের জন্য বাদশাহ নমরুদ তার মাথায় জুতার আঘাত সব সময়ের জন্য চালু রাখার উদ্দেশ্যে একজন কর্মচারী নিযুক্ত করল। তার কাজ হল সব সময় বাদশাহর মাথায় জুতার আঘাত করা।

পাপীষ্ঠ নমরুদ একাধারে চল্লিশ দিন পর্যন্ত এভাবে জুতার আঘাত মাথায় বরণ করে নিয়ে প্রায় মৃত অবস্থায় বেঁচে রইল। একদিন বাদশাহ ও তার আত্মীয়গণ সকলে তাকে যারপর নেই তিরস্কার এবং কটুক্তি করতে লাগল। তার কর্মচারীটি মনে হঠাৎ এমন বিরক্তি ও ক্রোধের সৃষ্টি হল যে, সে হাতে থাকা জুতা দ্বারা মাথায় সজোরে একটি আঘাত করল। তাতে বাদশাহর মগজশূণ্য মাথাটি দু’ভাগ হয়ে গেল। তখন সকলে পরম বিস্ময়ে লক্ষ্য করল যে, তার মাথার ভিতরে মগজের লেশমাত্রও অবশিষ্ট নেই। সবই মশায় খেয়ে ফেলেছে।
মানুষের অপেক্ষা কষ্টকর ও অপমানকর অবস্থা আর কি থাকতে পারে?

পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার সর্বপ্রধান শত্রু এবং অবাধ্য নমরুদের পাপ জীবনের লীলাখেলা এভাবে শেষ হয়ে গেল।

 

তথ্যসূত্রঃ-কুরআন মাজীদ/হাদিস শরীফ/নবী রাসূলের জীবনী।

লেখক :কলামিস্ট, সাহিত্যিক ,০১৬১৫-৮০৪৩৮৮ , yousufarmancox@gmail.com