তাওহীদুল ইসলাম নূরী:
ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ যাকাত সামাজিক নিরাপত্তা দানের পাশাপাশি সমাজে ধনী-গরিবের মধ্যকার বৈষম্য দূর করে। যাকাতের রয়েছে সামজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব। আল্লাহ পবিত্র কোরআনের অসংখ্য জায়গায় নামাজ কায়েমের সাথে সাথে যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আর বায়হাকীর বর্ণনায় বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (স.) বলেছেন “যাকাত হল ইসলামের সেতুবন্ধন”।

ইসলামি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি, সফলতা এবং জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমগুলোর অধিকাংশই যাকাতের উপর নির্ভরশীল। এজন্য যাকাতকে ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যাকাতের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা গেলে একদিকে যেমন দারিদ্রতা ও বেকারত্ব হ্রাস হয়, তেমনি দরিদ্র জনগণ স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সমাজের শৃঙ্খলা বজায় থাকে।উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, বেড়ে যায় গোটা দেশের মাথাপিছু আয়।

আমাদের দেশে যাকাতের নামে প্রায়শ ধনী ব্যক্তিদের দরিদ্রদের বিশাল লাইনে দাঁড় করিয়ে তাদের মাঝে লুঙ্গি-শাড়ী, অনেক সময় খাবার বিতরণ করতে দেখা যায়। যেটা মোটেও শরীয়ত সম্মত নয়। কারণ, যাকাতের উদ্দেশ্য বিলাসিতা নয়। সমাজের অসচ্ছল মানুষগুলোর দারিদ্রতা দূর করে তাদেরকে কর্মমুখী করে সমাজ ও দেশের কল্যাণই যাকাতের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। যেটি বর্তমান লুঙ্গি-শাড়ী কিংবা কয়েক বেলার খাবার প্রদানের রীতিতে কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। হাজার হাজার মানুষকে ৫০০/১০০০ টাকা দামের কাপড় কিংবা খাবার ধরিয়ে না দিয়ে গুটি কয়েক গরীব নয়তো অন্তত একজনকে চিহ্নিত করে তাদেরকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা লক্ষ কোটিগুণে উত্তম। আর, ধর্মীয় এবং বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে যাকাতের একটা অংশ প্রদান করলেও সার্বিকভাবে সমাজ ও দশের কল্যাণ হয়।

শরীয়তের দৃষ্টিতে যাকাত এতবেশী গুরুত্বপূর্ণ যে, নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পরও যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করে না, সেই ব্যক্তি ফাসেক,ফুজ্জারে গণ্য হয়। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন “যারা যাকাত দেয় না এবং তারা পরকালেও অস্বীকারকারী”। আরেক জায়গায় চূড়ান্ত পরিণতি ঘোষণা করে বলেন “আর যারা স্বর্ণ ও রূপা (সম্পদ) জমা রাখে এবং তা থেকে আল্লাহর পথে খরচ করে না, তাদেরকে কঠিন শাস্তির সংবাদ দিন”। অন্যদিকে, খোলাফায়ে রাশেদীনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (র.) যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন।

ধনী-গরিব সকলের মনে রাখতে হবে যাকাত ধনীদের সমাজের গরীরের প্রতি অনুদান কিংবা করুণা নয়, বরং যাকাত অসহায়-বঞ্চিত মানুষের হক তথা অধিকার। যাকাত সঠিকভাবে আদায় হলেই ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর করে সাম্যের ভিত্তিতে সমাজ গঠন সম্ভব। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের সবার জানা। ইসলামিক ব্যক্তিত্বগণের মতে, বাংলাদেশে শরীয়তের আলোকে যে সকল যাকাতদাতা আছেন তারা যদি হিসাব করে যাকাত আদায় করেন আগামী ৫-১০ বছরে দেশে যাকাত খাওয়ার মত লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই, সমাজ,দশ ও দেশের কল্যাণ সর্বোপরি আল্লাহর বিধান যথাযথ পালনের উদ্দেশ্যে যাকাত আদায়ে সামর্থ্যবান সকলের শরীয়ত অনুসারে সঠিক পদ্ধতিতে যাকাত প্রদান করা উচিত।

তাওহীদুল ইসলাম নূরী
আইন বিভাগ (অধ্যয়নরত),
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
শাহারবিল বাজার, চকরিয়া, কক্সবাজার।