নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
একজন সচিব ও ছাত্র লীগের নাম ব্যবহার করে মোঃ আলমগীর নামের এক ব্যক্তির অবৈধ ব্যবসা ও অপকর্ম বন্ধের দাবি জানিয়েছে কক্সবাজার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের নতুন ফিশারিপাড়াবাসী।
তাদের দাবি, দুই বছর আগেও সেমিপাকা টিনশেড ঘরে যার বসবাস করতেন মোঃ আলমগীর। সহায় সম্পদ বলতে কিছুই ছিল না। মাত্র বছর দেড়েক সময়ে খুলেছে তার কপাল। যেন আলাদিনের চেরাগ পেলেন।
টিনশেড ঘরের বাসিন্দা আলমগীর এখন বেহিসাব সম্পদের মালিক। কক্সবাজার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের নতুন ফিশারিপাড়ায় বানিয়েছেন বহুতল ভবন এজি টাওয়ার। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম প্রকাশ টক্কইন্নার ছেলে।
অদৃশ্য টাকায় নির্মিত ভবনের নাম দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমের বাড়ি। অভিযোগ স্থানীয়দের।
তাদের চ্যালেঞ্জ, আবুল কাশেম মুক্তিযোদ্ধা নন। সরকারের গেজেটে নাম দেখাতে পারবে না। তিনি পেশাগতভাবে খুচরা শুটকি ব্যবসায়ী।
তার বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ রয়েছে। কয়েক বছর আগে কুতুবদিয়ায় নৌবাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন। যা এলাকাবাসী অবগত।
স্থানীয় সমাজ কমিটির সভাপতি আমির হোসেন বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল কাশেম ও ছাত্র লীগের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছেন মোঃ আলমগীর।
তাছাড়া অবৈধ উপায়ে হাঙ্গর তেলের ব্যবসার আড়ালে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। নাহলে বছর দেড়েক সময়ে তার এত টাকার উৎস্য কোথায়? কিভাবে গড়েছেন অট্টালিকা? অনুসন্ধান করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, গত ১৮ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে নতুন ফিশারিপাড়া মসজিদ কমিটির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আলম, শুটকি ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন, মিজানুর রহমান এলাকার চায়ের দোকানে বসে চা-নাস্তা খাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের উপর অতর্কিত হামলা করে স্থানীয় সাইফুল ইসলাম, মোঃ আলমগীর, জাহাঙ্গীরসহ ৫/৬ জন। হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে গিয়ে পথচারী জাফর আলমকে ব্যাপক মারধর করা হয়। প্রকাশ্যে বাজারে সংঘটিত একটি ঘটনাকে ভিন্ন রূপ দিতে অপচেষ্টা করেছে হামলাকারীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় কোন অপরাধ হয় না। আমরা অধিকাংশ লোক শুটকি ব্যবসায় জীবন নির্বাহ করি। সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ। সম্প্রতি মোঃ আলমগীরসহ তার মদদপুষ্ট কয়েকজনের কারণে ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে। অপরাধীদের দমনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান আলী হোসেনের মতো এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।
এদিকে, মোঃ আলমগীরসহ তার নেতৃত্বে এলাকাবাসীর উপর অতর্কিত হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছে তারা।
এ দাবিতে বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুর সংবাদ সম্মেলন ডেকে অানুষ্ঠানিক নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেছে ভুক্তভোগীসহ সর্ব শেণিপেশার লোকজন।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন- নতুন ফিশারিপাড়া সমাজ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজি মুহাম্মদ ইসহাক, মসজিদ কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ইসমাইল, সিনিয়র সহসভাপতি আমির হোসেন সওদাগর, সহসভাপতি আবদুর রহিম সওদাগর, গুরা মিয়া সওদাগর, সিনিয়র সদস্য মনির হোসেন, আলী হোসেন। এ সময় এলাকার ক্ষুব্ধ জনতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
নতুন ফিশারিপাড়াবাসীর প্রতি একাত্মতা পোষণ করেন কক্সবাজার শুটকি প্রক্রিয়াজাতকারী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মুহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, ঘটনার বিষয়ে অবগত হয়ে ১৮ এপ্রিল রাতেই নতুন ফিশারিপাড়ায় পৌঁছেন পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। তিনি এলাকাবাসীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বিস্তারিত অবগত হন। তিনি নিজেই বিষয়টি মীমাংসা করার আশ্বাস দেন। বৈঠক উভয় পক্ষই তাতে সম্মত হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তকে অশ্রদ্ধা ও অবজ্ঞা করে পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিথ্যাচার ছড়িয়েছে আলমগীর। স্ববিরোধী আচরণে চরম ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
ঘটনার বিষয়ে সরেজমিনে এসে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
সেই সঙ্গে মোঃ আলমগীরের পরিবেশ বিরোধী অবৈধ হাঙ্গর তেলের ব্যবসা বন্ধের দাবি দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলন শেষে বাঁকখালী নদীর তীর দখল করে তৈরী হাঙ্গর তেলের কারখানা দেখান এলাকাবাসী।

তবে, অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মোঃ আলমগীর। তিনি বলেন, নতুন ফিশারীপাড়ার (মগচিতাপাড়া) ৯৫ শতাংশ রোহিঙ্গা ও টেকনাফের বাসিন্দা। এখানে তারা দীর্ঘ দিন ব্যবসা বাণিজ্য করছে। কিছু লোকের নিকট জিম্মি এলাকার সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ করায় আমাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া হচ্ছে।