সিবিএন ডেস্ক:
করোনাভাইরাস ফুসফুসে দ্রুত সংক্রমণ ঘটিয়ে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় সেটি পুরনো কথা। নিউমোনিয়া রোগের অন্যতম কারণ ফুসফুসে স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। কিন্তু করোনাভাইরাসের বিস্তার এবং সংক্রমিত হওয়ার গতি ‘স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি’র তুলনায় বহুগুণ বেশি। করোনা ভাইরাস ‘স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি’ নামের ব্যাকটেরিয়ার তুলনায় বহুগুণে আগ্রাসী ও ক্ষতিকর। এতে দিন দিন মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।

গত বছর থেকে দেশে আসা নতুন এ ভাইরাসের লক্ষণ ছিল জ্বর, নিউমোনিয়া, হাঁচি, সর্দিকাশি, শ্বাসকষ্ট। ভাইরাসটি মূলত শ্বাসনালী আক্রমণ করে তা অকেজো করে ফেলে। তবে করোনার নতুন ভেরিয়েন্টে জ্বর, হাঁচি, সর্দিকাশি বা শ্বাসকষ্টের কোনও লক্ষণই থাকছে না বেশিরভাগ রোগীর। কিন্তু সামান্য শরীর ব্যাথা করলেও ভেতরে ভেতরে ফুসফুসের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নষ্ট করে ফেলে। পরে শরীর অসুস্থ হয়ে করোনা টেস্টে নমুনা পজিটিভ আসার কয়েকদিনের মধ্যেই মারা যাচ্ছেন এরকম রোগীরা।

চট্টগ্রামে চলতি মাসেই করোনায় মৃত্যু বেড়েছে। প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে নতুন সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ জনসহ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ঠেকেছে ৪৭২ জনে। এরমধ্যে চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনেই মারা গেছেন ৮২ জন। অথচ গত বছরের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে গত ১২ মাসে করেনায় মারা গেছেন ৩৯০ জন।

মৃত্যুর এই কারণ বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন ধরনটি ভয়াবহ। চলতি মাসে অন্তত ৮ জন করোনা রোগী পেয়েছেন যাদের কোনো লক্ষণই ছিল না। হালকা শরীর ব্যথা ছিল। জ্বরসহ অন্যান্য আর কোনো উপসর্গ ছিল না। হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি থেকে করোনা পরীক্ষা করার পর তাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর দ্রুতই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। হাসপাতালে ভর্তি হলে যখন পরীক্ষা করা হয় তখন দেখা যায় তাদের ফুসফুস ৭০ থেকে ৮০ ভাগঅকেজো। করোনার শনাক্তের তিন চার দিনের মধ্যেই এভাবে ফুসফুস নষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছেন অনেকে। তবে বেশিরভাগ মারা যাওয়া রোগীর বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব। ফলে চলতি মাসে মৃত্যুর হার বেশি। নির্দিষ্ট কোনও উপসর্গ না থাকায় এই ভাইরাস চিহ্নিত করাটা বেশ সমস্যার বলে সতর্ক থাকা জরুরি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ভেরিয়েন্টে বয়স্কদের সাথে সম সংখ্যকের বেশি কম বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের শরীরে ভাইরাসের প্রবেশ ঘটলেও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ার জন্য করোনা তাদের আক্রান্ত করতে পারছে না। কিন্তু ভাইরাস দেহে বাসা বেঁধে থাকছে। লক্ষণহীন ওই ব্যক্তি যখন সমাজের অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করছেন, তখন তাদের শরীরেও করোনার সংক্রমণ ঘটে যাচ্ছে। এর মধ্যে যারা দুর্বল অথবা বয়স্ক, তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ফলে ভেতরে ভেতরে উপসর্গহীনভাবে আক্রান্ত হয়ে অজান্তেই বয়স্কদের ফুসফুস নষ্ট হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে।

সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যু বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবদুর রব।

তিনি বলেন, ‘আমরা করোনার নতুন ধরন পেয়েছি। অনেক রোগী পেয়েছি যাদের কোনো লক্ষণ-ই নেই। কিছু বুঝার আগেই ফুসফুস অকেজো হচ্ছে। যখন হাসপাতালে এসে পরীক্ষা করছেন তখনই তার ফুসফুস তাদের অজান্তেই ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। বিশেষ করে এ কারণে বয়স্করা বেশি মারা যাচ্ছেন।’

পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, করোনার নতুন ভেরিয়েন্টে যেহেতু তেমন কিছু বুঝা যাচ্ছেনা। তাই হালকা লক্ষণ যেমন-শরীর হালকা ব্যথা হলেও যাতে পরীক্ষা করে। এমন রোগী পেয়েছি যাদের কোনো লক্ষণই নেই। অথচ তাদের ফুসফুস ৭০ থেকে ৮০ ভাগ আক্রান্ত।’

চট্টগ্রাম জেলার সাবেক সিভিল সার্জন মুক্তিযোদ্ধা ডা. সরফরাজ খান বাবুল বলেন, ‘টিকা গ্রহণের পর কোনো কিছু না মানায়, অসচেতনতার কারণে নগরের সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এমন অবস্থা থাকলে তো গত বছরের তুলনায় সংক্রমণ অনেক বাড়বে।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘আমরা এমনও খবর পেয়েছি করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি আইসোলেশনে থাকছে না। না থাকায় সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। তাই পরিবারের একাধিক সদস্য আক্রান্ত হচ্ছে। কর্মঠ মানুষজনের ইমিউনিটি লেভেল ভালো। কিন্তু যারা কর্মঠ নয় কিংবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে। শারীরিক অবস্থাও খারাপ হচ্ছে। আমাদের অনুরোধ, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মানুষের নিজ উদ্যোগে সচেতন হতে হবে। নিজে সুরক্ষিত থাকলে সামাজিক অনুষ্ঠানাদি এ সময়ে এড়িয়ে চললে সংক্রমণ কমবে।’ – সিভয়েস