সিবিএন ডেস্ক:
দেশে করোনায় মৃত্যু প্রতিদিনই বাড়ছে। ১৭ এপ্রিল করোনায় একদিনে মৃত্যু শতকের ঘরে প্রবেশ করে। এরপর এখন পর্যন্ত শতকের ঘরেই অবস্থান করছে। সোমবার (১৯ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ মৃত্যু ১১২ জনের খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাছাড়া ন্যাশনাল টেলিহেলথ সেন্টারের প্রতিবেদন বলছে আক্রান্তদের বেশিরভাগই তরুণ এবং মধ্যবয়সী। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটও (আইইডিসিআর) একই তথ্য জানায়। করোনায় মৃতদের বেশিরভাগই ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি, তার সঙ্গে বর্তমান করোনার ঢেউতে যুক্ত হয়েছে ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা। তাই স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ন্যাশনাল টেলিহেলথ সেন্টারের গত ১৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ বলে, আক্রান্তের দিক থেকে প্রথম সারিতে আছেন ২৫- ৩৪ বছর বয়সের তরুণ-তরুণীরা। এরপর আছে ৩৫-৪৪ বছর বয়সী এবং ৪৫-৫৪ বছর বয়সীরা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একদিনে শনাক্তের প্রায় ৬৯ শতাংশ পাওয়া গেছে ১৯ থেকে ৪৮ বছর বয়সীদের মধ্যে। ২৭ শতাংশ পাওয়া গেছে ৪৯ বছরের ওপরে এবং ৪ দশমিক ২ শতাংশ শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে। অর্থাৎ তরুণ এবং মধ্যবয়সীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।

গড়ে ১০১ জন মারা যাচ্ছে
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর ৫৬ দশমিক ৪৩ শতাংশই ষাটোর্ধ্ব। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আছে ২৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১১ দশমিক ১২ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ , ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত ৬দিনে গড়ে মারা গেছেন ১০১ জন।

উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৫ দিনের মধ্যে মারা যাচ্ছে অর্ধেক মানুষ
করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের ৫২ শতাংশই উপসর্গ শুরুর পাঁচ দিনের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানায় আইইডিসিআর। ২৬ শতাংশ পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এবং ১২ শতাংশ উপসর্গ শুরুর ১১ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে মারা গেছেন ৪৮ শতাংশ এবং পাঁচ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মারা গেছেন ১৬ শতাংশ রোগী।

নারী মৃত্যু বেড়েছে
মৃত্যুর পর্যালোচনায় প্রতিষ্ঠানটি জানায়, গত বছরের জুলাই মাসে যখন মৃত্যুহার সর্বোচ্চ ছিল তখন নারী পুরুষের মৃত্যুহারের অনুপাত ছিল ১:৩.৫ ( ২২৬/৯৮২) । এই বছরের এপ্রিলে সেটি দাঁড়িয়েছে ১:২.২৩ (২৬৩/৬১৪)। অর্থাৎ গতবছর থেকে নারী অধিকহারে মারা যাচ্ছেন।

আক্রান্তদের বেশিরভাগই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী
ন্যাশনাল টেলিহেলথ সেন্টারের তথ্য বলছে, আক্রান্তদের ৩৬ শতাংশ ডায়াবেটিস, ৩৬ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগ আছে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট ছিল ১২ শতাংশের, কিডনি রোগ ছিল ৩ শতাংশের এবং অন্যান্য রোগ ছিল ৯ শতাংশ।

৪০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। বয়স অনুযায়ী মৃত্যুর দিকে তাকালে দেখা যায়, এখন যে করোনার ঢেউ চলছে তাতে যারা মারা গেছেন এদের মধ্যে ষাটোর্ধ সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা। এজন্য ৪০ বছরের বেশি যাদের বয়স তাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সরকারের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সাউথ আফ্রিক্যান ভ্যারিয়েন্টের ধর্মই তরুণদের বেশি সংক্রমিত করে। সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট যেখানেই পাওয়া গেছে সেখানে দেখা গেছে, তরুণদের বেশি সংক্রমিত করে এবং তার জটিলতা বেশি। কিন্তু করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তালিকায় ষাটোর্ধ্বদের বেশি থাকার কারণ হচ্ছে তারা আগে থেকেই অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত থাকেন। অন্যান্য অসুখে ভোগার কারণে তাদের টিকে থাকাটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। -বাংলা ট্রিবিউন