সিবিএন ডেস্ক:
ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে তিব্বতের ইয়ারলাং জাংবো নদীতে পৃথিবীর বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করতে যাচ্ছে চীন। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস ও তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম টিআরটিওয়ার্ল্ডের খবরে এমনটি জানানো হয়েছে।

এই বাঁধ নির্মাণ করা হলে ভারত ও বাংলাদেশের পানি নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

চীনের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘২০৩৫ সাল নাগাদ মহাপরিকল্পনা’র ১৪ নম্বর অধ্যায়ের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ‘বিনিয়োগ পরিধি সম্প্রসারণ’ শিরোনামের নিবন্ধে বিশালাকার বাধ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। সেখানে ইয়ারলাং জাংবো নদীমুখে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নতুন নতুন অবকাঠামো, নগরায়ণ, গণপরিবহণ ও জলাধার নির্মাণের প্রকল্প নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এর মানে ইয়ারলাং জাংবো নদীতে দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনাধীন বিশ্বের বৃহত্তম বাধ নির্মাণের কাজে হাত দিতে যাচ্ছে চীন। ইয়ারলাং জাংবো নদীটি উত্তরমুখে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভারতের অংশে গিয়ে ঠেকে। এই বাঁধ নির্মিত হলে ভারতসহ আরও ভাটিতে বাংলাদেশে পানির যোগান ব্যাপকভাবে কমে যেতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দুই দেশের কৃষি।

ভূরাজনীতির কথা বাদ দিলেও এই ইয়ারলাং জাংবো নদীটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য অত্যন্ত যুৎসই। এর পানিপ্রবাহের গতিপথ ঘোরাতে প্রাকৃতিকভাবেই বিরাট একটি বাঁক রয়েছে। স্থানীয়রা সেটিকে ‘দ্য গ্রেট বেন্ড’ আখ্যা দিয়ে থাকে। এই মোহনা হয়ে চীন থেকে প্রায় দুই হাজার ২৫০ মিটার উঁচু থেকে পানি ভারতে ঢোকে।

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের স্বায়ত্বশাসিত তিব্বতের প্রতি ঘণ্টায় ২০ কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো জলাধার রয়েছে। যা চীনের জলাধারের প্রায় ৩০ শতাংশ। আর এই ইয়ারলাং জাংবো নদীতেই রয়েছে ঘণ্টায় আট কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনযোগ্য জলাধার।

পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়নার চেয়ারম্যান ইয়ান জান ঝিয়োং গ্লোবাল টাইমসকে বলেন, ‘চীনের জলবিদ্যুৎ শিল্পের জন্য এটি ঐতিহাসিক সুযোগ। এটি পানিসম্পদ ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা তথা জাতীয় নিরাপত্তামূলক একটি প্রকল্প।’

এদিকে, কয়েক বছর ধরেই চীন-ভারত সম্পর্কে যে শীতলতা দেখা দিয়েছে তা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প। সর্বশেষ গত বছরের জুলাইয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্তে লড়াই হয়। এতে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহতের খবর পাওয়া যায়। মূলত ২০১৭ সালে কৌশলগত ডোকলামের নিয়ন্ত্রণ নিতে সেখানকার সীমান্ত অবরোধের পর থেকেই সীমান্তে অবস্থার অবনতি হতে থাকে।

২০৩৫ সালকে লক্ষ্য রেখে চীন তিব্বত অঞ্চলকে নিয়ে যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা দেখে ভারতকে নতুন বিরোধের জন্য তৈরি হতে হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।