সিবিএন ডেস্ক:
মিয়ানমারের পরিস্থিতি পুরোপুরিভাবে সংঘাতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে জাতিসংঘ। বুধবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচলেট এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন। মিয়ানমারে যেন সিরিয়ার পুনরাবৃত্তি না ঘটে; সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

মিশেল ব্যাচলেট বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সিরিয়া এবং বিশ্বের অন্যত্র ঘটে যাওয়া অতীতের মারাত্মক ভুলের পুনরাবৃত্তি মিয়ানমারে করতে দেওয়া উচিত হবে না।

তিনি বলেন, ২০১১ সালে সিরিয়ার যে পরিস্থিতি ছিল অভ্যুত্থান পরবর্তী মিয়ানমারে তার স্পষ্ট প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

মিশেল ব্যাচলেট বলেন, মিয়ানমারেও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর বলপ্রয়োগ করা হচ্ছে। নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর রাষ্ট্রের অব্যাহত নৃশংস নিপীড়ন কিছু ব্যক্তিকে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে প্ররোচিত করছে। পরবর্তীতে সারা দেশে দ্রুত সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে।

এদিকে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের হত্যার পর রীতিমতো লাশ ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। লাশ নিতে সেনাবাহিনীকে অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে নিহতদের স্বজনদের। গত শুক্রবার নিরাপত্তা বাহিনীর তাণ্ডবে নিহতদের মরদেহের জন্য জনপ্রতি ৮৫ ডলার করে নিচ্ছে তারা।

জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গড়ে তোলা ব্যারিকেড অপসারণ করতে গিয়ে শুক্রবার মধ্যাঞ্চলীয় শহর বাগোতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় বর্মি বাহিনী। পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিস্টেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) জানিয়েছে, এদিন অন্তত ৮২ বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের মরদেহ নিতে এখন অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে স্বজনদের।

বাগো ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন-এর এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, শুক্রবার নিহতদের মরদেহের জন্য নিহতদের স্বজনদের কাছ থেকে এক লাখ ২০ হাজার কিয়াত (৮৫ ডলার) করে নিচ্ছে সেনাবাহিনী। একই রকমের খবর দিয়েছে সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার বার্মিজ সার্ভিস। তবে সিএনএন-এর পক্ষে স্বতন্ত্রভাবে বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এএপিপি জানিয়েছে, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারি বাহিনীর হাতে কয়েক ডজন শিশুসহ ৭১৪ জন নিহত হয়েছে। আটক করে রাখা হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে। তবে জান্তা সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন এ সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, তারা ২৪৮ বেসামরিক এবং ১০ পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনা রেকর্ড করেছে।

শুক্রবারের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন বিক্ষোভকারীদের একজন সংগঠক ইয়ে হিট। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার এবং আহতদের চিকিৎসা না দেওয়ার বিষয়ে নজর রাখছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করতে বাগো শহরের রাস্তায় ব্যারিকেড গড়ে তোলা হয়। প্রায় আড়াই লাখ মানুষের শহরটিতে শুক্রবার সন্ধ্যা নামার আগেই অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগো শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের মানুষেরা বুঝতে পেরেছিলো তারা (নিরাপত্তা বাহিনী) আসতে পারে। আর এজন্য রাতভর অপেক্ষা ছিলো। সেনাসদস্যরা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। আমরা মর্টার শেলও পেয়েছি। মেশিনগান দিয়েও প্রচুর গুলি করা হয়েছে। তাজা গুলি ছাড়াও সেনাসদস্যরা গ্রেনেড লাঞ্চার ব্যবহার করেছে।’ এখন সেদিনের ঘটনায় নিহতদের লাশ হস্তান্তরের জন্যও স্বজনদের কাছে অর্থ দাবির খবর আসছে। এমন পরিস্থিতিতেই বুধবার মিয়ানমারে যেন সিরিয়ার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার। সূত্র: নিক্কেই এশিয়া, সিএনএন, এক্সিওস, ডিডাব্লিউ।