ইমাম খাইর, সিবিএন:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন হিমছড়ি পয়েন্টে ভেসে আসা ৪৪ ফুট দীর্ঘ মৃত তিমিটি প্রায় ৮০০ ফুট দূর সাগর থেকে রশি দিয়ে টেনে কূলে তোলা হয়েছে।

শুক্রবার (৯ এপ্রিল) বিকাল চারটার দিকে তিমিটি উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। অনেক কৌশল অবলম্বন করে প্রায় আড়াই ঘন্টা প্রচেষ্টার পর এটি উদ্ধার সম্ভব হয়েছে।

মরা তিমিটির লেজ, পেট ও মাথায় শক্ত করে রশি বাঁধা হয়। এরপর টেনে কূলে তুলে উদ্ধারকর্মীরা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ যৌথভাবে এই উদ্যোগ নিয়েছে।

উদ্ধার তৎপরতা ও নিরাপত্তায় কাজ করেছে পুলিশের সদস্যরা।

জোয়ারের পানির ঢেউ মোকাবেলা করে তিমিটি উদ্ধারে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বনকর্মীদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসবকসহ শতশত লোক স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।

জোয়ারের পানিতে যাতে মৃত তিমিটি তলিয়ে না যায়, সেই ব্যবস্থা করা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

এ সময় কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মামুন আল ইসলাম, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার দুপুরে হিমছড়ি পয়েন্টের লালব্রীজ এলাকায় মরা-পঁচা তিমিটি দেখতে পায় স্থানীয় বাসিন্দারা।

তখনো পুরোপুরি জোয়ারের পানি নেমে যায় নি। পূর্ণ ভাটায় সাগরের বালুতটে পড়ে থাকা মৃত তিমি স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়। ওই সময় পুরো দৃশ্যটা লাইভ সম্প্রচার করে কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন)।

খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম, জেলা প্রশাসন, স্থানীয় পুলিশ, বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

তিমিটি ৭ দিন মতো আগে মারা যেতে পারে। যার অনুমান ৭ বছর বয়স হবে স্থানীয় জেলেরা ধারণা করছে।

প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মৃত তিমিটি ৪৪ ফুট দীর্ঘ এবং ২৬ ফুট প্রস্থ।

লকডাউনের কারণে সাগরে মাছধরার ট্রলার বন্ধ। তাই তিমিটি সহজেই তীরে ভেসে এসেছে বলে ধারণা করেছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।

অনেকে এও বলছে, বাংলাদেশের জলসীমায় স্বভাবত এত বিশালাকার তিমির দেখা মেলে না। শান্ত সাগরে কিভাবে এটি তীরে ভিড়লো? বিশেষজ্ঞরাই আসল রহস্য বের করতে পারবে।

এদিকে, সাগরে মৃত তিমি ভেসে আসার খবরে ছুটে গেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এক নজর দেখতে ভিড় করে মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে চলাচলকারী গাড়ির যাত্রী ও সাধারণ পথচারীরা।

মৃত প্রাণীটিকে ঘিরে সবার মাঝে দেখা দেয় কৌতুহল। অনেকে তিমির পাশে ঘেঁষে ছবি তুলে। লাইভ করে গণমাধ্যমকর্মীরা।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, প্রাথমিকভাবে এটি তিমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য সম্পদ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে করণীয় ঠিক করা হবে।

তিনি বলেন, সাগরে লক্ষ প্রজাতির প্রাণীর বিচরণ। মাঝেমধ্যে কিছু কিছু প্রাণী মারা যাওয়াটা স্বাভাবিক। তবু কোন কারণে তিমিটি মারা গেছে, তা নির্ণয়ের চেষ্টা করা হবে।
আদম তমিজ নামক এক পর্যটক এটি তিমি মাছ বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে, কোন কোন প্রজাতির তিমি তিনি নিশ্চিত হতে পারেন নি।

গভীর সাগরে বড় জাহাজের ধাক্কা অথবা হত্যার কারণে তিমিটির মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে পরিবেশবাদিদের ধারণা।

কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের মুখপত্র মুফিজুর রহমান মুফিজের ধারণা, তিমিটির ওজন ৫ থেকে ৭ টন মতো হবে। বাংলাদেশের জলসীমার বাইরে তিমিটি মারা যেতে পারে।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মৃত তিমিটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে মৃত তিমিটি মাটিচাপা দেওয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে সপ্তাহ দুয়েক আগে তিমিটি মারা গেছে। তবে কি কারণে মারা গেছে সেটি জানা যাবে ময়নাতদন্তের পর।

তিনি বলেন, এ প্রজাতির তিমি আমাদের বঙ্গোপসাগরে রয়েছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এসব তিমি চোখে পড়ে।

তিমিটি মারা যাওয়ার পর ভাসতে ভাসতে কক্সবাজার সৈকতের উপকূলে ভিড়েছে বলে ধারণা তার।

উল্লেখ্য, গত লকডাউনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে জীবিত ডলপিনের দেখা মেলে। এবার আসলো মৃত তিমি। এটি জেলা প্রশান, বনবিভাগের যৌথ উদ্যোগে উদ্ধার করা হয়।

১৯৯১ উখিয়ার ইনানী সৈকতে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে হিমছড়ি সৈকতে এভাবে ভেসে এসেছিল বিশালাকার তিমি।