বার্তা পরিবেশক:
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলমের বিরুদ্ধে সরকারী ত্রাণ বিতরণে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ৫ জন ইউপি সদস্য এই অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে তারা দুদকেও লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
অভিযোগকারী ইউপি সদস্যরা হলেন- জয়নাব বেগম লিপি, শাহাজাহান চৌধুরী, মোঃ মোক্তার, রফিক আহম্মদ ও ফজল করিম।
ইউপি চেয়ারম্যানের বাসবভন ও তার বাসার সামনের ডায়বেটিকস হাসপাতালে অভিযান চালালে অনেক সরকারী ও এনজিওর ত্রান উদ্ধার হবে জানিয়েছে ইউপি সদস্যরা।
তাদের অভিযোগ হলো- ২০১৬ সালের ৪ জুনের নির্বাচনে শাহ আলম কিভাবে নির্বাচনকে কলংকিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তা সারাদেশের মানুষ জানেন। ইতিহাস কলংকিত করে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান শাহ আলম হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের দুর্নীতিরও ইতিহাস রচনা করেছেন।
ইউপি সদস্যরা আরো অভিযোগ করেন, হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়ষ্কভাতা, বিধবা ভাতা, পঙ্গু ভাত, সরকারী প্রজেক্ট, ঠিকাদারি ও এনজিওর বিভিন্ন বরাদ্দ নিয়ে চেয়ারম্যান দূনিতী ও অনিয়ম করে আসতেছে ।
তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা আসার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী হোস্ট কমিউনিটির জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয় ও এনজিওরা যেসব সহযোগিতা করে হয়েছে তা চেয়ারম্যান শাহ আলম নিজস্ব ব্যাক্তিগত সহযোগিতার নামে বিতরন করে সরকারের সাথে প্রতারনা করছে। জনগনকে বিভ্রান্ত করছে। দুর্নীতি করার জন্য চেয়ারম্যান এইসব এনজিওর সহযোগিতার সাথে আমরা ইউপি সদস্যগনকে সম্পৃক্ত করেন না। এনজিওর বিভিন্ন ত্রান ও সহযোগিতা পরিষদে না এনে চেয়ারম্যান নিজ বাসায় নিয়ে বিতরন করছে বলে দাবি করেন ইউপি সদস্যরা।
তারা বলেন, এইসব ত্রান কোথায় যায় বা কাকে দেয়া হয় তার কোন হিসাব আমরা পরিষদের কেউ জানিনা। তিনি এসব ত্রান শুধু মাত্র ব্যাক্তিগত লোক ও আত্মীয়স্বজনের মাঝে বিতরন করে আসছেন।
ইউপি সদস্যগন অভিযোগ করেন, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলম অধিকাংশ ওয়ার্ডের ভি.জি.ডি, ভি.জি.এফ, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও পঙ্গু ভাতা বিতরনে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি করে আসছে। চেয়ারম্যান শাহ আলম টাকার বিনিময় ও নিজের স্বজনকে তারা ভিজিএফ কার্ড দিচ্ছে। এত ওয়ার্ড পর্যায়ের সাধারণ মানুষ সরকারের ভিজিডি ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চেয়ারম্যান শাহ আলম বা তার মনোনীত ব্যক্তি দিয়ে হলদিয়া পালং ইউনিয়নে ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও পঙ্গু ভাতা বিতরণে বিভিন্ন মানুষ থেকে টাকা আদায় করছে।
চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মনোনীত ব্যক্তিদের টাকা না দিলে কোন ব্যক্তি সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছেনা। এতে করে প্রকৃত বয়স্ক, বিধবা, পঙ্গু ও গরীব অসহায় মানুষরা বঞ্চিত হচ্ছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে আরো অভিযোগ করা হয়, শাহ আলম হলদিয়া পালং ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এই ইউনিয়নে যতো ধরনের সরকারি প্রজেক্ট বা বরাদ্দ এসেছে তার প্রত্যেকটিতে দূর্নীতি অনিয়ম করে চেয়ারম্যান টাকা আত্মসাৎ করেছে। হলদিয়া পালং ইউনিয়নের এখন অঘোষিত চেয়ারম্যান হলো শাহ আলমের শ্যালক বিএনপি নেতা মনির আহম্মদ। মনির আহম্মদই এখন হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের রাজা । এই পরিষদের সকল কাজ /টেন্ডার / প্রজেক্টে চেয়ারম্যান শাহ আলমের শ্যালক মনির আহমেদ নিজে নামে বেনামে করে সরকরী টাকা আত্মসাৎ করে। মনির আহমেদের নেতৃত্বে হলদিয়া পালং ইউনিয়নের সাধরন জনগন থেকে শুরু করে আমরা ইউপি সদস্যদেরও হুমকি ধমকি দিয়ে জিম্মি করে আসছে।
চেয়ারম্যান শাহ আলম সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব শফিউল আলমের ছোট ভাই হওয়ায় বিভিন্ন সরকারি ও এনজিও কর্মকর্তাদের হুমক-ধমকি ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসছেন। চেয়ারম্যান তার ভাই সাবেক মন্ত্রী পরিষদের সচিব শফিউল আলমের নাম ব্যবহার করে আমরা ইউপি সদস্যদেরও বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করছে। আমাদের বিভিন্ন মামলায় ফাসানোর হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে।
সংরক্ষিত ইউপি সদস্য জয়নাব বেগম লিপি ও ফজল করিম অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান শাহ আলম ইউনিয়ন পরিষদের অধিকাংশ কাজে আমদের সীল-স্বাক্ষর জালিয়াতি করে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে আসছে। বিগত পাঁচ (৫) বছরে হলদিয়াপালং ইউনিয়নের প্রত্যেকটি প্রকল্পে সুষ্ঠু তদন্ত করলে চেয়ারম্যানের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যাবে।
চেয়ারম্যান শাহ আলম, তার শ্যালক মনির আহম্মদ ও তাদের পরিবারের চেয়ারম্যান নির্বাচনের আগের ও বর্তমান সম্পদের তথ্য তদন্ত করলে দুর্নীতি প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে জানান মেম্বারবৃন্দ।
এই জন্য আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ১২টি সরকারী দপ্তরে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছি।
ইউপি সদস্যগন হলদিয়া পালং ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি ত্রাণ পৌঁছাতে ও বর্তমানে চলমান ভিজিডি কার্ড বিতরণে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে করতে আপনার সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। পাশাপাশি চেয়ারম্যান শাহ আলমের দুর্নীতির তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন।