জাতীয় নিরাপত্তায় দেশি-বিদেশী এক্সপার্টদের ঐক্যের আহবান যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মর্তুজা আজমের

নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র সংবাদদাতা:
আবারো বাংলাদেশের উপর আঘাত হানলো এক ভয়ংকর সাইবার এটাক। বাংলাদেশ ব্যাংক, Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission (BTRC), বাণিজ্যিক ও সরকারি ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ২০০’র বেশি প্রতিষ্ঠানকে ভূমিকম্পের মতো নাড়িয়ে দিলো এই সাইবার হামলা।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, HAFNIUM নামের চাইনিজ একটি হ্যাকার গ্ৰুপ Microsoft Exchange Server এর Vulneribility -কে কাজে লাগিয়ে এই এটাক পরিচালনা করে। সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় লক্ষাধিক হামলার চালায় এই গ্রূপটি।

বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর ও অভিবাসীদের সিকিউরিটির জন্য অত্যাধুনিক সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে কথা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র সাইবার সিকিউরিটি অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মর্তুজা আজম এর সাথে। তিনি বলেন, অবিস্বাশ্য হলেও সত্য যে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ একাউন্ট হ্যাক হচ্ছে সারা পৃথিবীজুড়ে আর নতুনভাবে উদ্ভাবিত হচ্ছে প্রায় ৩০০,০০০ নতুন ম্যালওয়ার/ স্পাইওয়্যার (ডেটা হ্যাক / চুরি করার ক্ষতিকারক সফ্টওয়্যার)। যার টার্গেট হচ্ছে আপনার আমার মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ইমেইল একাউন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট, ব্যাংক একাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, PII তথ্য থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান কিংবা সোলার উইন্ডস এর মতো সফ্টওয়ার কোম্পানি, যেখানে Microsoft / Apple-ও এটাকের বাইরে নয়। সাইবার এটাকের বাইরে নেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইলেকশন কিংবা ফেডারেল গভর্নমেন্ট সার্ভারও।

USA তে দীর্ঘ সময় যাবৎ বিভিন্ন ফরচুন ১০০ কোম্পানির নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ারিং টিমের লিডার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে গোলাম মর্তুজা আজম প্র্যাকটিক্যালি প্রত্যক্ষ করেন বহুমুখী সাইবার এটাক এবং গ্রহণ করেন কার্যকরী মিটিগেশন স্টেপস। মর্তুজা আজম অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বলেন, NBCUniversal – এ সাইবার সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সময় একবার ২০১৮ সালের শেষ দিকে আমেরিকার অন্যতম সর্ববৃহৎ সংবাদ মাধ্যম NBC News এর ওয়েবসাইট হঠাৎ করেই সাইবার এটাকের কারণে ডাউন হয়ে যায় এবং টিমের যৌথ প্রচেষ্টায় কিছুক্ষনের মধ্যেই আবার সাইট আপ করতে সক্ষম হন। ২০২০ এর শুরুর দিকে তিনি ন্যাশন ওয়াইড সাইবার এটাক ডিটেকশন ও অটোমেটিক্যালি এনালাইসিস ও মিটিগেশনের কাজ সম্পন্ন করেন ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স (United Airlines) এর সিনিয়র সাইবার সিকুরিটি অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ার লিড হিসেবে। এছাড়ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স এর ১ লক্ষ ৮ হাজার এমপ্লয়ীর জন্য ফিশিং ও ম্যালওয়্যার এটাক অটোমেশনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেন তিনি।

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল গ্রূপ (AIG) এর লীড সাইবার সিকিউরিটি অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কোম্পানির প্রায় ৫০% সাইবার সিকিউরিটি ইনসিডেন্ট অটোমেটেড করেন এবং ৯০% ফলস পজিটিভ ফিশিং ইন্সিডেন্টস অটোমেটিক্যালি হ্যান্ডেল করার কাজও সার্থকভাবে সম্পন্ন করেন মর্তুজা আজম। NDIT এর ২০২০ প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন সিকিউরিটি প্লেবুক অটোমেশন ও জেনারেল সাইবার নিরাপত্তায়ও তিনি অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করেন। গোলাম মর্তুজা আজম বলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনেও এধরণের অটোমেটেড সাইবার সিকিউরিটি এপলাই করে নির্বাচনকে অনেক অনেক সিকিউর করতে পারি।

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স ডিপার্টমেন্টে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারী ছিলেন মর্তুজা আজম। গ্রীন টেকনোলজির উপর এক্সট্রাঅর্ডিনারি রিসার্চের জন্য ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সেও বেস্ট এওয়ার্ডের সম্মাননা পান তিনি। পরবর্তীতে হার্ভার্ড উনিভার্সিটি থেকে সাইবার সিকিউরিটির উপর লিডারশীপ সার্টিফিকেট অর্জন করেন।

সাইবার এটাক সম্পর্কে বলতে গিয়ে মর্তুজা আজম বলেন, অবাক হচ্ছেন কারা করছে এসব ? হয়তো অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। রাশিয়া, চীন, ইন্ডিয়া, ফিলিপিন, কোরিয়া বা ইউক্রেনের হাজারো সাইবার এক্সপার্ট প্রতিনিয়তই কর্মরত বিশ্বের সকল দেশের সাইবার সিকিউরিটি এনালাইসিস ও ভালনারেবিলিটি খুঁজে বের করতে এবং তা থেকে সুবিধা গ্রহণ করার জন্য। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো পৃথিবী জুড়ে সাইবার এট্যাকের ঝুঁকি যত বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক ততটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে এই সেক্টরের নিরাপত্তার গুরুত্ব। আর নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই পৃথিবী জুড়ে বাড়ছে লক্ষ লক্ষ সাইবার নিরাপত্তা প্রদানে দক্ষতা সম্পন্ন এক্সপার্টের কদর অর্থাৎ চাকরির সুবর্ণ সুযোগ। যারা এটাক করছেন ও প্রতিরক্ষায় কাজ করছেন সবাই -ই আপনার আমার মতোই মানুষ। আমরা যারা এই সেক্টরে সারা বিশ্বের নেতৃস্থানীয় অবস্থানে রয়েছি আমাদের সবার উচিত একতাবদ্ধ হয়ে দেশের নাগরিক ও পৃথিবীর সর্বত্রই বাংলাদেশী অভিবাসীদের সাইবার নিরাপত্তায় এগিয়ে আসা। আর যেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো কোনো ঘটনা আমাদেরকে প্রত্যক্ষ করতে না হয়।

সাইবার ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মর্তুজা বলেন, আমরা যেভাবে (Security Orchestration Automation and Response) ডেভেলপ করি, ঠিক তেমনভাবে যদি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোতে এপলাই করা হয় তবে প্রায় ৯০-৯৫% সাইবার এটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং যদি কোনো ভাবে হ্যাক হয়েও যায় কোনো রকম ডাটা breach ঘটার আগেই সতর্ক ও যথাযথ অ্যাকশন নিয়ে তা মিনিমাইজ করা সম্ভব। আমাদের নিরাপত্তায় এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরকেই।

যেসব কর্মকান্ড বা উদ্যোগ নেয়া সম্ভব:
১. সর্বস্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
২. ইয়াং জেনারেশনকে উপযুক্ত ট্রেনিং দিয়ে সাইবার এক্সপার্ট করে গড়ে তুলতে হবে।
৩. সরকারকে সহযোগিতা করা ও সরকারীভাবে পলিসি প্রণয়ন করা।
৪. সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাইবার সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট ও সাবজেক্ট চালু করা।
৫. প্রয়োজনে সাইবার সিকিউরিটি ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট বা ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা।
৬. স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাইবার সিকিউরিটির উপর বিভিন্ন ধরণের প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে।
৭. সকল প্রতিষ্ঠানের সাইবার সিকিউরিটি নিয়মিত অডিট করা ও তাদের রেসপন্স সিস্টেমকে আপডেটেড রাখতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখা।
৮. বিশ্বের প্রথম সারির তথা বেষ্ট সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করার মতো চ্যালেঞ্জিং কাজটির নেতৃত্তও দিতে চাই আমরাই।

গোলাম মর্তুজা আজম তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বলেন, যখনই সময় পাই তখনই আমার সময়কে সাইবার সিকিউরিটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গঠনমূলকভাবে কাজে লাগাতে কাজ করি। বিভিন্ন কোম্পানির সাইবার নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি Washington State Opportunity Scholarship (WSOS) এর সাইবার সিকিউরিটি মেন্টর বা উপদেষ্টা হিসেবে স্কলারদের ব্রাইট ফিউচার গড়তে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা প্রদানের কাজ করেন তিনি। The City University of New York (CUNY) এর শিক্ষার্থীদেরও বিভিন্ন রকমের সাইবার সিকিউরিটির উপর ওয়ার্কশপ ও ট্রেনিং প্রদান করে থাকেন তিনি। লক্ষ্য একটাই অভিজ্ঞতাকে দেশ ও মানুষের সেবায় ফলপ্রসূভাবে কাজে লাগানো। তাই আসুন আমরা যারা যেখানেই সাইবার এক্সপার্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছি আমরা সবাই একত্রিত হই এবং দেশ ও মানুষের নিরাপত্তায় অবদান রেখে অমর হই। তাই এই সেক্টরে অবদান রাখতে আপনি ইমেইল করতে পারেন।
নোট-
প্রয়োজনে- গোলাম মর্তুজা আজম: ইঞ্জিনিয়ারিং লীড ও সিনিয়র সাইবার সিকিউরিটি অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ার, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
সাইবার নিরাপত্তা দিয়েছেন :
NBC, NBCUniversal, CNBC, United Airlines, AIG, PAN, NDIT, RiotGames ও PeaceHealth এর মতো প্রতিষ্ঠানকে।
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার : ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও সাইবার সিকিউরিটি লিডারশীপ ফেলো : হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি।
ইমেইল: WriterGolam@Gmail.com