ডেইলি স্টার : বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাসহ সাইবার অপরাধ সম্পর্কিত মামলার বিচারের জন্য সরকার সম্প্রতি দেশের আটটি বিভাগে একটি করে সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে।

এর আগে, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলার জন্য ঢাকায় একটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল ছিল।

গুজব ছড়ানো, বিভ্রান্তি সৃষ্টি, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করাসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।

আট বিভাগে সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়টি গত রোববার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা সাইবার অপরাধ সম্পর্কিত মামলার জট কমাতে মন্ত্রণালয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়েছে।’

আটটি ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে- ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনাল, চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল, রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল, খুলনা সাইবার ট্রাইব্যুনাল, বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনাল, সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনাল, রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল ও ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনাল।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের অধীনে ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুর, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ি, মাদারীপুর, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলা থাকবে।

এতে আরও বলা হয়, প্রজ্ঞাপন জারির আগে উপরের জেলাগুলো ছাড়া অন্য জেলায় করা মামলা প্রজ্ঞাপনের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে স্থানীয় অধিক্ষেত্রসম্পন্ন সাইবার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হবে।

চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাইব্যুনালের অন্তর্ভুক্ত থাকবে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা।

রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের আওতায় রাখা হয়েছে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, নাটোর, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলাকে।

খুলনার সাইবার ট্রাইব্যুনালের অধীনে থাকবে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলা।

বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা ও ভোলা জেলা থাকবে বরিশালের সাইবার ট্রাইব্যুনালের অধীনে।

সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালে আছে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলা।

রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলাকে রংপুরের সাইবার ট্রাইব্যুনালের অধীনে রাখা রয়েছে।

ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনালের অধীনে আছে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোণা জেলা।

এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তদন্তের আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় যেন কেউ গ্রেপ্তার না হয়, তা নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে।’

‘আমরা এ বিষয়ে অনেকখানি এগিয়েছি,’ বলেন আইনমন্ত্রী।

সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) সংশোধন করবে কি না বা এর অপব্যবহার বন্ধে কোনো বিধি যোগ করবে কি না? জানতে চাইলে মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘অপেক্ষা করুন, দেখুন আমরা কী করি।’

হাইকোর্টে রিট আবেদন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুটি ধারাকে চ্যালেঞ্জ করা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সাইবার ট্রাইব্যুনাল গুজব ছড়ানো, বিভ্রান্তি সৃষ্টি, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করাসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার বিচার করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই অপরাধগুলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন (আইসিটি) ২০০৬ এর বিতর্কিত ৫৭ ধারায় ছিল। এই ধারাটি আইসিটি আইন থেকে বাতিল করে ডিএসএতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’