ডেস্ক নিউজ:
একবছর আগের কথা। দেশে প্রথমবার করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ১৯তম দিন থেকে শুরু হয়েছিল সরকারঘোষিত প্রথম দিনের সাধারণ ছুটি। দিনটি ছিল ২৬ মার্চ। পরবর্তী সময়ে দফায় দফায় সাধারণ ছুটি বাড়লেও প্রথম দফায় এই সাধারণ ছুটির শেষ দিনটি ছিল ৪ এপ্রিল। এর ঠিক একবছর পার করে আজ সোমবার (৫ এপ্রিল) শুরু হলো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার ঠেকাতে সরকার ঘোষিত ‘প্রতিরোধ কর্মসূচি’, আপাতত সাত দিন তথা একসপ্তাহের জন্য। গত বছর ‘সাধারণ ছুটি’ নাম জুটলেও এ বছর কোনো নাম জোটেনি করোনা প্রতিরোধের প্রথম এই সপ্তাহের, অনেকেই যদিও একে বলছেন ‘লকডাউন’।

শনিবার (৩ এপ্রিল) মন্ত্রিসভার দুই সদস্যের বরাতে জানা যায়, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ঠেকাতে ‘লকডাউন’ আসছে। রোববার বিকেল থেকে অনুষ্ঠিত দীর্ঘ আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর রাতে সেই বৈঠকের সারসংক্ষেপ যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। অনুমোদন পেয়ে পরদিন রোববার (৪ এপ্রিল) ১১ দফা নির্দেশনার এক প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার (৫ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে কার্যকর হতে যাওয়া সেই প্রজ্ঞাপনে জনসাধারণের জন্য পালনীয় ছিল সাতটি নির্দেশনা।

অর্ধেক জনবল নিয়ে চলছে সচিবালয়
সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা, কাঁচাবাজারে ভিড়
কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তি, মার্কেট খুলে দিতে বিক্ষোভ
নির্দেশনা মেনে শপিংমল বন্ধ, খোলা আছে কাঁচাবাজার
লকডাউন চান না ব্যবসায়ীরা, নিউমার্কেটে সড়ক অবরোধ
ভৈরবে করোনার হার ৩০%, নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে প্রশাসন
করোনার বিধিনিষেধ সত্ত্বেও চলছে মেলা, খাজনার নামে চাঁদাবাজি
কঠোর বিধিনিষেধে অভ্যন্তরীণ বন্ধ থাকলেও চলছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট

সরকারের জারি করা ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ কার্যকরের প্রথম দিনটি তাহলে কেমন গেল? পুরোপুরি ‘লকডাউন’ ঘোষণা না হলেও সরকারি নির্দেশনায় চলাচল সীমিত করতে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচলে ছিল নিষেধাজ্ঞা। সন্ধ্যার পর অতি জরুরি ছাড়া সীমিত করা হয়েছিল চলাচল। অফিস-আদালত খোলা রাখতে বলা হয়েছিল সীমিত জনবল দিয়ে। কাঁচাবাজার ও নিতপণ্যের দোকান ছাড়া বাকি সব দোকানপাটও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। প্রথম দিনটিতে কি এসব নির্দেশনা পালিত হলো সারাদেশে? বিধিনিষেধ কার্যকর করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই বা কতটা তৎপর ছিল?

বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সরকার আরোপিত বিধিনিষেধের অনেকগুলোই অনুসরণ করা হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। তবে অনেক এলাকাতেই নাগরিকদের মধ্যে বিধিনিষেধ পালনে দেখা গেছে অনীহা, উদাসীনতা। সে তুলনায় প্রশাসনই ছিল যথেষ্ট তৎপর। এলাকায় এলাকায় চলেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাতে বিধিনিষেধ পালন না করায় অনেককেই জরিমানা গুনতে হয়েছে।

রাজধানীর চিত্র ছিল কেমন?
সরকারি নির্দেশনায় কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্য বাদে অন্য সব দোকান ও শপিং মল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সারাবাংলার প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন, শপিং মল সবগুলোই ছিল বন্ধ। তবে কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান বাদে অন্য অনেক দোকানও খোলা থাকতে দেখা গেছে পাড়া-মহল্লায়। শুধু তাই নয়, কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকানগুলোও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল বিকেল ৪টার পর। কিন্তু রাজধানীর নাখালপাড়া, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সূত্রাপুরসহ অনেক এলাকাতেই সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব দোকান খোলা দেখা গেছে। বিশেষ করে মূল সড়ক থেকে যত বেশি ভেতরের এলাকা, সেসব এলাকায় দোকান খোলা রাখার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে হোটেল-রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে। মূল সড়ক থেকে ভেতরের দিকে গেলেই রেস্টুরেন্টগুলোতে বসে খাবার খেতেও দেখা গেছে।

এদিকে, সন্ধ্যা ৬টার পর অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হতে নিষেধ করা হলেও সে নিষেধাজ্ঞাও সবাই মেনেছেন— এমনটি বলা যায় না। সন্ধ্যার পরও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় দেখা গেছে তরুণ-প্রৌঢ়-বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে। একপর্যায়ে অনেক এলাকাতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিলে খোলা থাকা দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, সেইসঙ্গে রাস্তা থেকেও কমে যায় মানুষের উপস্থিতি। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোও রাতারাতি ফাঁকা হতে থাকে।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এদিন সড়কে গণপরিবহনের উপস্থিতি ছিল না। তবে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং সাধারণ ও ব্যাটারিচালিত রিকশার উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। যারাই বেরিয়েছেন, রিকশা-সিএনজি পেতে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি। শুধু তাই নয়, সকালের ‘পিক-আওয়ারে’ রাজধানীর সড়কে রীতিমতো যানজটও দেখা গেছে!

শুধু তাই নয়, লেবানন ফেরত ২৭৮ যাত্রী ও তাদের স্বজনদের নিয়ে বিমাবন্দর এলাকায় হট্টগোল ছিল দিনের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। এছাড়া নিউমার্কেট এলাকায় দোকানপাট বন্ধের সারকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভও করেছেন।

চট্টগ্রামে মার্কেট খুলে দিতে বিক্ষোভ:
সরকারের নেওয়া বিধিনিষেধ আরোপের প্রথম দিনে চট্টগ্রামে অধিকাংশ দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সাধারণ মানুষের ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ ছিল না মোটেও। নগরীর পাড়া-মহল্লা, অলিগলিতে মানুষের অবাধ বিচরণ করতে ও আড্ডা দিতে দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও কমতি ছিল না ব্যক্তিগত যানবাহনের।

এদিকে, নির্দেশনা মেনেই শিল্প কারখানা খোলা ছিল। তবে গণপরিবহনের অভাবে কারখানার কর্মীদের কর্মস্থলে পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এর সঙ্গে মার্কেট-শপিং মল খুলে দেওয়ার দাবিতে এই প্রথম দিনেই চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ী, দোকানি ও কর্মচারীরা। এসব কর্মসূচিতে হাজারও মানুষের সমাগম ঘটে।-সারাবাংলা