আতিকুর রহমান মানিক:
মধ্যরাতে মৌসূমের প্রথম বৃষ্টিতেই ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে জেলার লবন চাষ শিল্প। দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী জেলা কক্সবাজারে লবণ উৎপাদন মৌসুমে বিনা নোটিশের এ বৃষ্টিতে কোটি কোটি টাকার লবণ ভেসে গিয়ে ব্যাপক লোকসানের শিকার হয়েছেন লবণ চাষী ও উদ্যোক্তারা। ৪ এপ্রিল (রবিবার) সন্ধ্যারাত থেকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে ও রাত এগারোটার দিকে বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয়। প্রায় একঘন্টার এ বৃষ্টির ফলে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার লবণ মাঠের উৎপাদিত হাজার হাজার মন লবণ বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। বিশেষ করে পলিথিন পদ্ধতিতে উৎপাদিত সাদা লবণ গলে গিয়ে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বেশী।
হঠাৎ বৃষ্টির ফলে মাঠ পর্যায়ে আপাতত উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। লবণ চাষীরা জানান, এই বৃষ্টিতে কক্সবাজার সদর উপজেলা, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হাজার হাজার একর লবণ মাঠে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় ভরা মৌসুমে উৎপাদিত লবণ বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। বিশেষ করে গর্তে জমা করে রাখা পলিথিন লবণ গলে দিয়েছে বৃষ্টির পানিতে।
রাতে বৃষ্টি হওয়ায় অনেকে মাঠে স্তুপীকৃত লবন রক্ষা করতে পারেননি।
ইতোপূর্বে লবণ উৎপাদনের জন্য মাঠে বসানো পলিথিন সিট রাতেই গুটিয়ে রেখেছেন চাষীরা।
ঈদগাঁওর লবন চাষী আবদুল কইয়ুম জুয়েল বলেন, চলতি মৌসুমে লবণ চাষ শুরু হওয়ার পর থেকে অনুকূল আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাজমান থাকায় ইতিমধ্যেই প্রচুর লবণ উৎপাদন হয়েছে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এলাকার লবণ চাষী আলী হেসাইন জানিয়েছেন, রাতের বৃষ্টিতে লবণ মাঠে পানি জমে লবণ উৎপাদন কাজ সপ্তাহখানেক পিছিয়ে গেল। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে চাষীরা তাড়াহুড় করে মাঠে জমাকৃত লবণ পলিথিন মুড়িয়ে বৃষ্টি হতে রক্ষার চেষ্টা করে লবণ চাষিরা। কিন্তু এতেও কোন কোন চাষী শেষ রক্ষা করতে পারেনি।
বাংলাদেশ লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক) সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলায় ৭০ হাজার একর জমিতে ১৮ লক্ষ টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
এর মাঝেই লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে বলে জানা গেছে। গতরাতের বৃষ্টিতে লবণ মাঠে আপাতত উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
লবন চাষী হামিদ উল্লাহ সিকদার বলেন, একটানা ৩/৪ মাস বৃষ্টি না হওয়ায় গত রাতের বৃষ্টিতে লবণ মাঠের তেমন বড় ক্ষতি হবে না, বরং বৃষ্টির মিঠা পানি পাওয়ার পরে গ্রীষ্মের কড়া রোদ মাঠে পড়লে লবন মাঠ গরম হয়ে আগের চেয়ে উৎপাদন বেশি হবে।
দেশের একমাত্র লবন শিল্পজোন সদরের ইসলামপুর শিল্প এলাকার মিল মাকিকরা জানিয়েছেন, লবনের উৎপাদন ও সরবরাহে বৃষ্টির কোন প্রভাব পড়বেনা।
ইতোপূর্বে প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে লবণ বোঝাই করে আসা শতাধিক কার্গোবোট বিভিন্ন মিলের জেটিঘাটে নোঙ্গর করে আছে।
এদিকে হঠাৎ বৃষ্টিতে লবণচাষিরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার প্রহর গুনলেও জেলার পান, মরিচ, তরমুজ ও শাক সবজি চাষিরা মহাখুশি। যেহেতু এ বৃষ্টিতে আসছে তিন-চার দিন ক্ষেতে পানি দিতে হবে না।
কক্সবাজার বিসিক সুত্র জানায়, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী (আংশিক) উপজেলার ১৩টি কেন্দ্রের অধীনে ৬৮হাজার একর জমিতে লবণ চাষ করা হয়। তারমধ্যে চকরিয়া উপজেলার দরবেশকাটা কেন্দ্রে (পেকুয়াসহ) ১২হাজার ৩৭৫হাজার একর, ডুলাহাজারা কেন্দ্রে ৪৭৫ একর, খুটাখালী ফুলছড়ি কেন্দ্রে ৪হাজার ৩৭৬ একর, কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশীখালী কেন্দ্রে ৬ হাজার ৪৪৪ একর, মহেশখালী উপজেলার উত্তর নলবিলা কেন্দ্রে ৭হাজার ৪শত একর, গোরকঘাটা কেন্দ্রে ৮হাজার ৫৭৭একর, মাতারবাড়ি কেন্দ্রে ৫হাজার ৮০৬ একর, কক্সবাজার সদর উপজেলার গোমাতলী কেন্দ্রে ৪হাজার এক একর, চৌফলদন্ডি কেন্দ্রে ৩হাজার ২শত একর, বাঁশখালী উপজেলার সরল কেন্দ্রে ১হাজার ৪২১ একর, পুর্ব বড়ঘোনা কেন্দ্রে ৬হাজার ৯০একর, টেকনাফে ৩ হাজার ৯শত একর ও বিসিকের প্রদর্শনী কেন্দ্রে ৮৬একর জমিতে পলিথিন ও সনাতন পদ্ধতিতে লবণ চাষ করা হয়।
মেঘমেদুর আবহাওয়া ও বৃষ্টি থেমে গিয়ে লবন উৎপাদনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে এলে ফের মাঠে নামবেন জেলার লবন চাষীরা।
বাংলাদেশ লবন চাষী সমিতির সভাপতি হান্নান মিয়া বলেন, আজ (সোমবার) সারাদিন আকাশ আংশিক মেঘলা থাকায় চাষীরা মাঠে নামেননি। এখন থেকে আর ঝড় বৃষ্টি না হলেও আবারো মাঠে লবণ উৎপাদন হতে কমপক্ষে সপ্তাহ খানেক লাগবে।