সিবিএন ডেস্ক:
আসন্ন রমজান ও লকডাউনকে কেন্দ্র করে কেউ নিত্যপণ্য মজুত বা বাজার অস্থির করতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপরদিকে, স্থানীয়ভাবে দেশের জেলা প্রশাসনও বাজার মনিটরিং করবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনও বাজার মনিটরিং করবে। এছাড়াও মাঠে থাকবে র‌্যাবের মোবাইল কোর্ট।

শনিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে সারাদেশে আগামী সোমবার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণার পর ঢাকাসহ দেশের বাজারে কেনাকাটা বেড়ে গেছে। বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। লকডাউন শুরু হলে সব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে- এ আশঙ্কায় নিত্যপণ্য মজুতের আগ্রহ সবার মাঝে। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করার পরও কেউ অনুরোধ শুনছে না। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা সংকট তৈরি করে বাজার মূল্য আরও অস্খির করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এসব অসাধু মজুতদারদের কঠোরভাবে দমন করার ঘোষণা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘প্রতিবছর রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। এজন্য র‌্যাব সবসময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। পাশাপাশি লকডাউনকে কেন্দ্র করে অসাধু ব্যবসায়ীরা মজুত ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে থাকে। এই দুটি বিষয়কে মাথায় রেখেই আমাদের মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে কেউ দুর্ভোগে ফেললে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

শনিবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। একই চিত্র ছিল রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লার দোকানেও। প্রয়োজনের তুলনায় পণ্য সংগ্রহ করতে ব্যস্ত মানুষ।

জানা গেছে, আজ শনিবার সকালে ৩৫ টাকা কেজি দরের দেশি পেঁয়াজ বিকালে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। স্থান ভেদে তা ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও জানা গেছে। চালের দাম আগে থেকেই সরকারের সব মেকানিজমকে ব্যর্থ করে দিয়ে চলে গেছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ৫৫ টাকার নিচে খাওয়ার উপযোগী মোটা চাল নেই। ৭০ টাকার নিচে নেই চিকন চাল। লকডাউনের এক ঘোষণায় প্রতি ডজন ডিমে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারদরের দোহাই দিয়ে ভোজ্যতেল বিশেষ করে সয়াবিন তেল আগে থেকেই বেশি দামে বিক্রি করছে কোম্পানিগুলো। এমন পরিস্থিতিতে সরবরাহ সংকটের কথা বলে বাড়তি সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ১৪০ টাকা লিটার দরের সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫২ টাকা লিটার দরে। আশঙ্কা করা হচ্ছে লকডাউন ঘনিয়ে এলে দাম আরও বাড়তে পারে।

এদিকে বাজারে অস্থিরতার বিষয়ে সরকার সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শনিবার (৩ এপ্রিল) সকালে তিনি তার সরকারি বাসভবনে ব্রিফিংয়ের এই কথা বলার সঙ্গে লকডাউন দেওয়ার তথ্যও জানান। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাজার নতুন করে অস্থির হয়ে উঠেছে।

ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘বাজার অস্থির করার যে কোনও অপপ্রয়াস সরকার মেনে নেবে না। অহেতুক মূল্যবৃদ্ধি ও মজুতদারি নিয়ন্ত্রণে সরকার সতর্ক। ইতোমধ্যে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। কোনও ধরনের সিন্ডিকেটের কাছে সরকার বাজার ব্যবস্থাকে জিম্মি হতে দেবে না।’

লকডাউনের সংবাদ পেয়ে আটকে পড়ার ভয়ে গ্রামের বাড়ি ছুটছেন নগরবাসী, বিশেষ করে দিনমজুর শ্রেণির মানুষজন। এই সুযোগে দূরপাল্লায় বাসভাড়া দ্বিগুণ আদায় করার খবরও পাওয়া গেছে। দুর্যোগের মধ্যে জনগণের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা।

বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনও কাজ করবে। সরকার যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা সেলিম রেজা।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগামী সোমবার থেকে সরকার সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে। আমরা সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছি। আমাদের নিজস্বও কিছু প্রস্তুতি রয়েছে। সরকার যেভাবে নির্দেশনা প্রদান করবে ঠিক সেভাবেই আমরা পালন করবো।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরও যৌথভাবে বাজার মনিটরিং করবে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে এ অভিযান পরিচালিত হয়।

ভোজ্যতেল, চাল, পেঁয়াজ, ছোলা,চিনি ও খেজুরসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যৌক্তিক মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হয়। এছাড়া পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, মূল্য তালিকার সঙ্গে বিক্রয় রশিদের গরমিল, পণ্যের ক্রয় রশিদ সংরক্ষণ না করা, অনিবন্ধিত ঔষধ, মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ ও পণ্য, নকল মাস্ক -স্যানিটাইজার, ওজনে কারচুপিসহ ভোক্তাস্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন অপরাধে সারাদেশে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, নিয়মতান্ত্রিক ও নৈতিকতার সাথে ব্যবসা পরিচালনাকারী সকল ব্যবসায়ীকে এ অধিদফতর সবসময় সাধুবাদ জানায়। ভোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব একটি সুশৃঙ্খল বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ব্যবসায়ীগণের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান তিনি।

এছাড়াও মাস্ক পরার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে সংশ্লিষ্ট সকলকে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের অনুরোধ জানান তিনি। -বাংলা ট্রিবিউন