মানবজমিন: সমস্যার শুরুটা শুক্রবার (২৬ মার্চ) থেকে। সেদিন বিকেল থেকে ফেসবুক এবং মেসেঞ্জার অ্যাপ ব্যবহার করতে পারছেন না বলে মানবজমিনকে অবগত করেন বাংলাদেশে বসবাসরত অনেক ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ব্যবহারকারী। সমস্যাটি দুদিনে গড়ালেও এখনো সমাধান পাননি বলে জানান তারা। এছাড়াও শুক্রবার ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ সংশ্লিষ্ট কিছু এলাকা এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় দ্রুতগতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার খবরও পাওয়া গিয়েছিল।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বের কোথাও ফেসবুক বা মেসেঞ্জার ডাউন নেই। তাই ধারণা করা হচ্ছে, কেবল বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরাই এ ধরনের সমস্যায় পড়ছেন।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর পক্ষ থেকে শুক্রবার বলা হয়েছিল, ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণে ব্যবহারকারীরা অ্যাপ দুটি ব্যবহার করতে পারছে না। ওইদিন এ বিষয়ে ফেসবুকের এক মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার সেবা সীমিত হওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পেরেছেন। বিষয়টি সম্পর্কে আরও ভালো করে জানার চেষ্টা করছেন। আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই এ সমস্যার সমাধান হবে।

কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি শনিবারেও।
শনিবার দিনভর এ নিয়ে মুখ খুলেন নি কেউ-ই।
অবশেষে এ নিয়ে শনিবার রাতে ফেসবুকের একটি বিবৃতি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে শুক্রবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও এর মেসেজিং অ্যাপ ডাউন করে রাখা হয়েছে বলে জানায় তারা। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে ফেসবুক সীমিত করার বিষয়টি আমরা জানি। আমরা এটি বোঝার চেষ্টা করছি। সবাই যাতে দ্রুত পুরো একসেস পায় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
করোনাভাইরাস মহামারির সময় যখন কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন, তখন বাংলাদেশ সরকার যেভাবে ফেসবুকের সেবা সীমিত করেছে তা উদ্বেগজনক।’

বাংলাদেশে ফেসবুক বা মেসেঞ্জার ব্লক করে দেওয়া হয়েছে কি না এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কোনো মন্তব্য করেনি বলে শনিবারই রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। এতে জানানো হয়- ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দুই দিনের বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরোধীতার মধ্যে ফেসবুক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এর আগেও বিক্ষোভ দমাতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়াকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার নজির বাংলাদেশে রয়েছে।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, ফেসবুক বন্ধের জন্য এখন সরকারকে আর ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা মোবাইল অপারেটরদের ওপর নির্ভর করতে হয় না। সরকারের হাতেই সে ধরনের প্রযুক্তি রয়েছে।

জানা গেছে, ফেসবুক বন্ধ থাকার পরও বিকল্প পথে কেউ কেউ ফেসবুক ব্যবহার করছেন৷ নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, এতে নতুন করে অনেক মানুষ সাইবার নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে প্রবেশ করছেন৷ কারণ বিকল্প পথে বিভিন্ন ‘ব্রাউজার’ এবং অ্যাপ-এর মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহার করাটা স্বাভাবিকভাবেই সাইবার নিরাপত্তার জন্য হুমকি৷ যারা এটা করছেন তারা অনিরাপদ এবং সাইবার হুমকির মধ্যে রয়েছেন৷

প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় শুক্রবার ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। শনিবারও এসব স্থানে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। দুদিনের বিক্ষোভে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী নিহত হন।