ইমাম খাইর, সিবিএন:
উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে নতুন করে ৭০০ তাঁবু স্থাপন করেছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়িএবং বিডিআরসিএসের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত এই তাঁবুতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার লোক অবস্থান করছে।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কক্সবাজারের হেড অব অপারেশন এম এ হালিম বলেন, “আমরা উদ্ধারকাজের পরপরই পুনর্বাসন ও জরুরি খাদ্য সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করে কাজ অব্যবহত রেখেছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মীরা এখনো নিখোঁজ শিশুদের অনুসন্ধানের কাজ করছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের মানসিক অবস্থার দিকেও আমরা নজর দিচ্ছি। আমাদের দুটি ক্যাম্পের মনোসামাজিক সহায়তা কেন্দ্র সার্বক্ষণিকভাবে কার্যকর রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্প এর স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও মনোসামাজিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়েছে”।

তিনি আরো বলেন, “আমরা খাবার ও পানি এবং অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহের পাশাপাশি আশ্রয় হারিয়েছে এমন লোকদের জন্য জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছি। আসন্ন বর্ষা ও মৌসুমী ঝড়কে বিবেচনায় রেখে কক্সবাজারে নিয়োজিত মানবিক সংস্থাগুলোর নিরবিচ্ছিন্ন তৎপরতা প্রয়োজন।”

অগ্নিকাণ্ডে আহত প্রায় ৪০ জন বিডিআরসিএস এর স্বাস্থকেন্দ্রে সেবা গ্রহণ করেন; একটি অ্যাম্বুলেন্স ও ফিল্ড হাসপাতালও সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া বিডিআরসিএস ১১,০০০ তারপুলিন এবং ১১,০০০ মশারি বিতরণ করেছে; এই বিতরণে সহায়তার জন্য সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মী নিরলসভাবে কাজ করছেন। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে শেল্টার ও খাদ্য-সামগ্রী বিতরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানীয় প্রায় ২৫০ পরিবারের মধ্যে রেড ক্রিসেন্ট খাদ্য, শেল্টার, হাইজিন, গৃহস্থালি সামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ করবে।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিস (আইএফআরসি) বাংলাদেশ প্রধান সঞ্জীব কুমার কাফলে বলেন, “পৃথিবীর অন্যতম সহনশীল জনগোষ্ঠীর জন্য এই অগ্নিকান্ড আবারো একটি ভয়াাবহ আঘাত। অনেক লোক তাদের দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এখানে নতুন করে শুরু করা হাজার হাজার মানুষ আবারো একটি ভয়াবহ অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হল।”

“স্বেচ্ছাসেবক এবং দমকল কর্মী, যারা এই আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে এবং লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে তারা অগণিত জীবন বাঁচিয়ে প্রকৃত বীরের ভূমিকা পালন করেছে। কোভিড-১৯ এর কারণে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই অগ্নিকান্ড ক্যাম্পের জনজীবন আরো কঠিন করে তুলছে।”

অগ্নি নির্বাপন ও উদ্ধারকাজে প্রাথমিক পর্যায়ের সাড়াদানকারীদের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (বাংলাদেশ সরকার এবং বিডিআরসিএসের যৌথ প্রয়াস) ১,০৬৪ ক্যাম্প স্বেচ্ছাসেবীরা অন্যতম ভূমিকা পালন করে। এই স্বেচ্ছাসেবীরা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি এবং অন্যান্য জরুরী পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সাড়া প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

আরআরআরসি শাহ্ রেজওয়ান হায়াত সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেড ক্রিসেন্ট সোসইটির কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের এই তড়িৎ সেবার প্রশংসা করেছেন। অগ্নিকাণ্ডের পর আশ্রয়হীন পরিবারসমূহ এসব তাবু পেয়ে আনন্দিত ও রেড ক্রিসেন্ট এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

বর্তমানে রেড ক্রিসেন্ট অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তাৎক্ষণিক ত্রাণ ও অন্যান্য সেবা নিয়ে এগিয়ে এসেছে।

১৯৯১ থেকে পরিচালিত বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মিয়ানমার রিফিউজি রিলিফ অপারেশন (এম আর আর ও) কার্যক্রম ও ২০১৭ সালে শুরু হওযা চলমান পপুলেশন মুভমেন্ট অপারেশনের অংশ হিসাবে, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, আইএফআরসি এবং অন্যান্য দেশের রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহায়তায় ক্যাম্পে বসবাসকারী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উভয়কেই স্বাস্থ্যসেবা, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি; আশ্রয়ন, জীবিকা ও মৌলিক চাহিদা এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রমের পাশাপাশি নারী ও সর্বাধিক ঝুঁকিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের সুরক্ষা সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০১৭ সালে অপারেশন শুরু থেকে এ যাবৎ, বিডিআরসিএস প্রায় দশ লক্ষ মানুষকে মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে।