প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে কক্সবাজারে বন্ধুসভার উদ্যোগে মাদক বিরোধী ১০০ কিলোমিটার রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ রোড মার্চ শুরু হয়। এর আগে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রোড মার্চটি উদ্বোধন করেন মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল ইসলাম।

সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে কোথাও মাদকবিরোধী রোডমার্চ হয়েছে কিনা জানা নেই। কিন্তু কক্সবাজারে প্রথম আলো বন্ধুসভা তা করে দেখিয়েছে। এই ব্যতিক্রমী আয়োজনকে সাধুবাদ জানাই।

টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, মাদকের ভয়াবহতা রোধে মাদকবিরোধী এই রোডমার্চ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। বন্ধুসভা সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মাদকসহ অন্যান্য অপরাধ রোধে ভুমিকা পালন করতে পারে।

কক্সবাজার প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী বলেন, প্রথম আলো বন্ধুসভা সবসময় ব্যতিক্রমী আয়োজন করে তরুণদের পাশে থাকে। এবারের আয়োজনও চমৎকার। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে মাদকবিরোধী রোডমার্চ মাইল ফলক হয়ে থাকবে।

বন্ধুসভার পক্ষে প্রথম আলোর কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস রানা ১১ টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ১. মাদক চোরাচালান বন্ধে সীমান্তে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং কারবারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষন বাড়াতে হবে। ২. মাদককাররীদের নতুন তালিকা তৈরি এবং যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা। ৩. রোহিঙ্গা শিবিরে মাদকের আখড়া উচ্ছেদ এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের উৎখাতে যৌথ অভিযান পরিচালনা। ৪. আত্মস্বীকৃত মাদক কারবারীদের  সামাজিকভাবে বয়কট। ৫. বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে বন্ধুবন্ধুর নামে বঙ্গবন্ধু মেরিন ড্রাইভ সড়কে নামকরণ এবং সড়কের তিনটি পয়েন্টে দৃষ্টিনন্দন ভাস্কয নির্মান। ৬. মেরিন ড্রাইভ সড়ককে চার লাইনে উন্নয়ন, লাইটপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে  সড়ককে রাতের বেলায় আলোকিত রাখা। ৭. মাদক চোরাচালান বন্ধ এবং রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উখিয়া হয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পযর্ন্ত ১২০ কিলোমিটারের সীমান্ত সড়ক নির্মাণ ও কাটাতারের বেড়া নির্মান। ৮. প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক নিয়ন্ত্রণ এবং ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটক গমন নিষিদ্ধ করতে হবে। ৯. পাহাড়কাটা ও অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা। ১০. বাঁকখালীসহ বিভিন্ন খাল-ছড়ার অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি এবং  উচ্ছেদের ব্যবস্থা। ১১. মেরিণ ড্রাইভ সড়ককে শাহপরীরদ্বীপ পযর্ন্ত সম্প্রসারণ।

রোডমার্চটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে টেকনাফের জিরোপয়েন্ট সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। রোডমার্চ চলাকালে পথে পথে করোনা মহামারীতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরনে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সচেতন করার পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ করা হয়। সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক এলাকায় বন্ধুসভার বন্ধুরা সড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ মানববন্ধন করে। এ সময় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে মাদকবিরোধী শপথ বাক্য পাঠ করান।

মাদক বিরোধী রোডমার্চটি আয়োজন করেছে প্রথম আলো কক্সবাজার বন্ধুসভা, চকরিয়া উপজেলা বন্ধুসভা, কক্সবাজার সরকারি বন্ধুসভা, কক্সবাজার সিটি কলেজ বন্ধুসভা, মহেশখালী বন্ধুসভা ও টেকনাফ বন্ধুসভা।

রোড মার্চের উদ্বোধনী শেষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে  প্রকাশিত  প্রথম আলো বন্ধুসভার মুখপত্র ‘ সমুদ্রপত্র’  বিশেষ সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস রানা বলেন, প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যদের মাধ্যমে সমাজে যা কিছু ভালো, তার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত উৎসব, ভাষা প্রতিযোগ, বিতর্ক প্রতিযোগীতা, বিজ্ঞান মেলা, ফিজিক্স অলিম্পিয়াডসহ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। এবার ‘মাদকের বিরুদ্ধে  লড়বো একসাথে’- এই শ্লোগানে আমরা  লোকজনকে সচেতন করতে মাদকবিরোধী  ১০০ কিলোমিটারের ব্যতিক্রমধর্মী এই রোড মার্চের  আয়োজন করেছি ।  স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেই  এই রোডমার্চ  পরিচালনা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাদক থেকে দূরে রাখতে  মাদকের বিরুদ্ধে  জিরো  টলারেন্স  ঘোষণা করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৪ মে  সারা দেশে  মাদকবিরোধী  সাঁড়াশি  অভিযান শুরু করে  র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ  অধিদপ্তরসহ  বিভিন্ন  আইনশৃংখলা  বাহিনী।  অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে গত  ৯  মার্চ  পর্যন্ত   শুধুমাত্র  কক্সবাজার  জেলাতে   বন্দুকযুদ্ধে  নিহত  হয়েছেন  ৪ জন নারীসহ  ২৭৯ জন  মাদককারবারি।  এরমধ্যে  ১৬৭ জন মারা  গেছেন  ইয়াবা  পাচারের  অন্যতম  এলাকা টেকনাফে।  ইয়াবা পাচারে  জড়িয়ে  পড়েছে  মানবিক  আশ্রয়ে  থাকা  মিয়ানমারের  রোহিঙ্গারাও।  বন্দুকযুদ্ধে   এ পযর্ন্ত  মারা  গেছেন   ২ নারীসহ ১০৬জন রোহিঙ্গা। টেকনাফসহ কক্সবাজারকে  মাদকমুক্ত করতে  একসাথে জনসচেতনমূলক লড়াইয়ে নামার  বিকল্প নেই।